আধুনিক জীবনে ব্যস্ততার ছায়া কেবল বড়দের উপরেই পড়েনি, ছেলেবেলা থেকে জীবনের ইঁদুর দৌড়ে নেমে পড়েছে বাড়ির খুদে সদস্যরাও। কেবল পড়াশোনা করলেই তো হবে না, তাই নানা গুণে পারদর্শী হয়ে উঠতে গিয়ে তাদের হাতে সময়ের অভাব হচ্ছে। কখনও সিলেবাসের চাপে রাতের ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে না, কখনও আবার মা-বাবার প্রত্যাশার বোঝা চেপে বসছে শিশুর কাঁধে। আর তা থেকেই ঘটছে খাওয়ার অনিয়ম, কম ঘুমের মতো অভ্যাস। যার জেরে স্থূলত্ব তাড়া করে বেড়াচ্ছে অকালেই। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৫ জন শিশুর ১ জন স্থূলত্বের শিকার।
খুদের বাড়তি ওজন টাইপ টু ডায়াবিটিস, পিসিওডি (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম), হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো নানা শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত স্থূলতা শিশুর শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যারও কারণ হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে শিশুর ওজনের দিকে বাবা-মায়েদের বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সুস্থ জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শিশুর স্থূলতার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে কি আপনার সন্তান? কী ভাবে বুঝবেন?
ওবেসিটি বা স্থূলতার সমস্যা আছে কি না, তা বোঝার এক মাত্র পদ্ধতি হল ‘বডি মাস ইনডেক্স’(বিএমআই)। কোনও শিশুর বিএমআই যদি ৩০-এর উপর থাকে, সেক্ষেত্রে ধরা যেতে পারে যে, সেই শিশু স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। ছোটবেলা থেকে ওবেসিটি গ্রাস করলে শরীরে বিপাকের হার কমতে থাকে। ফলে ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। টাইপ টু ডায়াবিটিস, পিসিওডি(পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম), হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত স্থূলতা শিশুর শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যারও কারণ হয়ে ওঠে। শিশুর প্রতি বাবা-মায়েদের বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সুস্থ জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শিশুর স্থূলতার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
শিশুর মাত্রাতিরিক্ত ওজন প্রতিরোধ করতে বাবা-মায়েরা কী করবেন?
১) আজকাল শিশুরা শাক-সব্জি খেতে বিশেষ ভালবাসে না। পরিবর্তে ভাজাভুজি, মিষ্টি জাতীয় খাবার, বাইরের খাবারই তাদের বিশেষ পছন্দ। এই ধরনের খাবারগুলি সব বয়সের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। বাচ্চাদের বেশি করে শাকসব্জি, ফলমূল খাওয়ান। অনেক শিশু ফল বা শাকসব্জি খেতে চায় না। সেক্ষেত্রে ফল দিয়ে সুস্বাদু স্মুদি বানিয়ে দিতে পারেন। শাক-সব্জি দিয়েও বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবার বানিয়ে দিতে পারেন সন্তানকে।
২) চিনিযুক্ত পানীয়, পিৎজা, বার্গার, চিপ্সের মতো বাইরের খাবার সন্তানের রোজের খাদ্যতালিকায় যাতে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখুন। এই খাবারগুলি অতিরিক্ত ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
৩) শিশু ক্লাসে ভাল রেজ়াল্ট করলে কিংবা ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার নিয়ে এলে ওর হাতে চকোলেট, কেক, কুকিজ়ের মতো জিনিস তুলে দেবেন না। বরং ওকে স্নেহ করুন, আদর করুন, ওর পুরষ্কার হিসেবে একটা গোটা দিন ওর সঙ্গে সময় কাটান।
৪) শিশুরা বড়দের যা করতে দেখে,তাই শেখে। বড়রা যদি বাড়িতে থাকলে সারা ক্ষণ ফোন স্ক্রোল করেন, টিভির দিকে তাকিয়ে থাকেন, তা হলে খুদেরাও তাই করবে। ওদের নিয়ম করে বাইরে খেলতে পাঠান, প্রয়োজনে অভিভাবককেও সঙ্গে যেতে হবে। অভিভাবক যদি স্বাস্থ্যের কথা ভেবে শরীরচর্চা শুরু করেন, তা হলে দেখাদেখি খুদেও শরীরচর্চা, খেলাধূলার প্রতি আগ্রহী হবে।
৫) ঘুম ঠিকঠাক না হলেও স্থূলতা হতে পারে। তাই খুদের ঘুমের সময় নির্দিষ্ট করে দিন। ঘুমের ঘণ্টখানেক আগে থেকেই তাদের টিভি, ফোন, ট্যাব থেকে দূরে থাকতে বলুন। ৫ বছরের শিশুদের জন্য সারা দিনে ১০-১৩ ঘণ্টার ঘুম জরুরি, ৬-১২ বছরের শিশুদের ৯-১২ ঘণ্টার ঘুম জরুরি।