অস্বস্তিকর গরম পড়তে শুরু করেছে সবে। তবে আর কিছু দিন এমন চললে আরও নানা ধরনের অস্বস্তি বাড়বে। ডিহাইড্রেশন, মাথা ধরা, পেটের সমস্যার পাশাপাশি ভোগান্তির ভাগীদার হবে ত্বকও। বিজবিজিয়ে বেরোবে ফুস্কুড়ি, ব্রণ, র্যাশ, ঘামাচি ইত্যাদি। দিনভর বাইরে থাকার পরে হয়তো বাড়ি ফিরে দেখলেন পোশাকের নীচে, ঘাড়ে-পিঠে কিংবা হাত-পায়ের খাঁজে চাপ চাপ লালচে র্যাশ। যা চুলকোবে আর ভুলবশত চুলকে ফেললে শুরু হবে জ্বলুনি। ঠান্ডা জলে অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে স্নান, প্রিকলি হিট পাউডার দিয়েও দিন তিনেকের আগে নিষ্কৃতি মিলবে না অস্বস্তি থেকে। তেমন তেমন পরিস্থিতিতে ত্বকে অমসৃণ ভাব থেকে যেতে পারে তার পরেও। আর এই সবই হতে পারে গরমের উপযুক্ত পোশাক না পরার জন্য!
ত্বকের চিকিৎসকেরা বলছেন, গরমের এই যে অস্বস্তিকর র্যাশ, তার একটা নাম আছে— ‘হিট র্যাশ’। যাকে মিলিরিয়া বা প্রিকলি হিটও বলা হয়ে থাকে। সাধারণত অত্যন্ত গরম আর আর্দ্র পরিবেশেই ওই ধরনের অস্বস্তিকর র্যাশ বেশি হয়। তবে কিছু কিছু বিষয়ে সচেতন হলে তা এড়ানো যায়।

গায়ের সঙ্গে চেপে বসে থাকা, আঁটসাঁট বা হাওয়া চলাচল করতে না পারা কৃত্রিম তন্তু থেকে তৈরি পোশাকে হিট র্যাশ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ছবি: সংগৃহীত।
হিট র্যাশ কেন হয়?
ক্লিনিকাল কসমেটোলজিস্ট এবং ত্বকচর্চা শিল্পী ডলি শাহ জানাচ্ছেন শরীরের ঘাম বসে যখন ত্বকের রন্ধ্রপথের মুখ বন্ধ হয়ে যায়, তখন কোষের রন্ধ্রের ভিতরে ঘাম আটকে যায়। সেই ঘাম জমেই তৈরি হয় হিট র্যাশ। সাধারণত এ ধরনের র্যাশ দেখতে হয় লালচে ছোট ছোট ফুস্কুড়ির মতো। তবে যখন হয়, তখন একসঙ্গে কিছুটা জায়গা জুড়ে বেরোয়। মুখ, গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ এমনকি হাত-পায়ের খাঁজে যেখানে ঘাম বসে, সেখানেও হিট র্যাশ হতে পারে। যাতে চুলকানি ভাব এবং জ্বালা ভাবও থাকতে পারে।
পোশাক থেকে কী ভাবে হিট র্যাশ?
ত্বকচর্চা বিষয়ক পরামর্শদাতা নন্দিতা গোপীনাথন বলছেন, ‘‘আসলে ঘাম জমে থাকা ত্বকের রন্ধ্রপথ ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ! এ থেকে সহজেই সোয়েট ডার্মাটাইটিস, ছত্রাক সংক্রমণ এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যা হতে পারে। এই পরিস্থিতি ত্বকের জন্য আরও দুঃসহ হয়ে ওঠে যদি কেউ গায়ের সঙ্গে চেপে বসে থাকা, আঁটসাঁট, সিন্থেটিক, পলিয়েস্টার, নাইলন বা হাওয়া চলাচল করতে না পারা কৃত্রিম তন্তু থেকে তৈরি পোশাক পরেন।’’ কারণ, নন্দিতার মতে, সে ক্ষেত্রে ত্বকে বাইরের হাওয়া লেগে ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রায় থাকে না। বদলে ঘাম ত্বকের রন্ধ্রে বসে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। তাই গরমে ত্বকের সমস্যার বা হিট র্যাশের সমস্যা অনেকটাই নির্ভর করে কী ধরনের পোশাক পরা হচ্ছে তার উপর।

ঘামে ভিজে যাওয়া জামা হাওয়ায় শুকিয়ে না পরাই ভাল। ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে অস্বস্তিকর র্যাশ থেকে রক্ষা পাবেন?
১। আলগা, হাওয়া চলাচল করে এমন কাপড়, যেমন সুতি বা লিনেনের পোশাক পরুন।
২। ঘামে জামা ভিজে গেলে তা পরে না থেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করুন। ঘামে ভেজা জামা অনেক ক্ষণ পরে থাকলেও ওই ধরনের র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩। ঘামে ভিজে যাওয়া জামা হাওয়ায় শুকিয়ে না পরাই ভাল। কারণ, তাতে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক থাকার সুযোগ বেশি থাকে। ঘামে ভেজা জামা কেচে নেওয়াই ভাল। একান্তই সেই সুযোগ না থাকলে ঘণ্টা কয়েক রোদে রেখে তার পরে পরা যেতে পারে।
৪। গরমে বাইরে থাকতে হলে ছায়ায় থাকার চেষ্টা করুন। তা-ও সম্ভব না হলে সঙ্গে রাখুন ছাতা।
৫। নিয়মিত ভাল ভাবে স্নান করলে, বিশেষ করে বাইরে থেকে ফিরে যদি ভাল ভাবে পরিষ্কার হওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে ত্বকে জমা ঘাম এবং ধুলো পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তাতেও সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।
ত্বক ভাল রাখার উপযোগী অভ্যাস
১। যে প্রসাধনী ব্যবহার করছেন, তাতে প্যান্থেনল, সেরামাইডস, হ্যালুরনিক অ্যাসিড, জিঙ্ক অক্সাইড জাতীয় ত্বককে আরাম দেয় এমন উপাদান আছে কি না দেখে নিন।
২। ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করুন।
৩। অ্যালার্জির সমস্যায় অ্যান্টিহিস্টামাইনস কার্যকরী। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যবহার করুন।
৪। মুখ বা শরীরের ত্বক ভাল ভাবে পরিষ্কার করুন। আর্দ্র রাখার চেষ্টা করুন এবং অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৫। ত্বককে আর্দ্র রাখুন যাতে শুষ্ক ভাব এবং অস্বস্তি দূরে থাকে।
৬। জল বেশি আছে এমন ফল বা শাকসব্জি খান। দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রদাহনাশক খাবার রাখার চেষ্টা করুন।