এখনকার দিনে চুল বা ত্বক ভাল রাখতে বাজারে নানা ধরনের সাপ্লিমেন্টস কিনতে পাওয়া যায়। এখন মানুষ চেহারার বিষয়ে অনেক সচেতন, ফলে সাপ্লিমেন্টস বিক্রি আরও বাড়ছে। অনেকেই ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কেরাটিন ট্যাবলেটস, বায়োটিন গামিজ় খেয়ে থাকেন। অনেকে আবার বায়োটিন ও কেরাটিন সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার করেন। রূপচর্চায় কেরাটিন বা বায়োটিন সাপ্লিমেন্টস কি আদৌ কার্যকর? নাকি বিজ্ঞাপনে যে ভাবে বিষয়গুলি পেশ করা হয়, বাস্তব তার চেয়ে আলাদা?
সাপ্লিমেন্টস কি আদৌ কার্যকর?
ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর বললেন, “মানবদেহের ত্বক, চুল এবং নখে এমনিতেই কেরাটিন প্রোটিন থাকে, যা ত্বক ভাল রাখা থেকে শুরু করে চুল ও নখের বৃদ্ধিতে সহায়ক। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন রোগেও কেরাটিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বাজারে যে প্রসাধনীগুলি ত্বক বা চুলের ভাল স্বাস্থ্যের নামে বিক্রি করা হয়, সেগুলির আদৌ কোনও উপকারিতা আছে কি না, তার কোনও গবেষণালব্ধ ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি।”
অপকারের সম্ভাবনা রয়েছে কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রসাধনীগুলি ব্যবহার করলে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে না। ডা. ধর জানালেন, বাইরে থেকে যে কেরাটিন প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করে তা মিশে গিয়ে কোনও না কোনও ভাবে শরীর থেকে বেরিয়েই যায়।
চুল বা ত্বক ভাল রাখতেযা জরুরি
চুল বা ত্বক ভাল রাখার জন্য যে এলিমেন্টস বা মিনারেলস গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি জেনে রাখা দরকার। বায়োটিন হল ভিটামিন বি-৭। মাল্টিভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন বি-৩, ভিটামিন বি-৯, ভিটামিন বি-১২, অ্যান্টিঅক্সিড্য়ান্টস, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, জ়িঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, আয়রন আর সিলিকা।
অনেক সংস্থা বিজ্ঞাপনে দাবি করে, তাদের শ্যাম্পু বা লোশনে ভিটামিন, মিনারেলস থাকার ফলে তা দারুণ কার্যকর। কিন্তু আখেরে সেগুলি আমাদের কোনও কাজেই আসে না বলে জানালেন ডা. ধর। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বললেন, “এই ধরনের মিনারেলসকে বলে ‘ম্যাক্রোমলিকিউল’। আমাদের ত্বকের এপিডারমিসের মধ্য দিয়ে ৫০০ ডালটন বা তার কম ওজনের অণু শরীরে ঢুকতে পারে। অথচ, অধিকাংশ ভিটামিনের অণুর ওজন ৫০০ ডালটনের থেকে বেশি। ফলে এই সব বাজারজাত ভিটামিন বা মিনারেলযুক্ত শ্যাম্পু বা লোশন ব্যবহার করলেও, সেগুলি আখেরে আমাদের চুল বা ত্বকের মধ্যে ঢোকে না। সে ক্ষেত্রে, এই ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারে অর্থব্যয় ছাড়া আর কিছুই হয় না।”
ত্বক বা চুল ভাল রাখতেকী করণীয়?
এই বিষয়ে ডা. ধরের মত, আজকের দিনে মানুষের ত্বকে ভাঁজ পড়া, চোখের তলায় কালো দাগ হওয়া, চুল পড়া, এমনকি চুল সাদা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবেশ দূষণ। তবে এগুলির পাশাপাশি এখনকার খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টিও এড়িয়ে গেলে চলবে না। ডা. ধরের মতে, এখনকার দিনের জাঙ্ক ফুডের প্রতি আসক্তিও প্রভাব ফেলছে আমাদের শরীরে। বস্তুত অধিকাংশ খাবারেই এখন প্রিজ়ারভেটিভ দেওয়া থাকে, যেগুলি আমাদের ত্বক বা চুলের পক্ষে ভাল নয়।
ত্বক বা চুল ভাল রাখতে হলে ক্রিম, শ্যাম্পুর বদলে জীবনধারা বদলের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন ডা. ধর। তাঁর পরামর্শ, ফাস্ট ফুডের তুলনায় বাড়িতে তৈরি খাবার, ফলমূলে উপকারিতা বেশি। জাঙ্ক ফুডে রসনাতৃপ্তি হলেও আখেরে তা যে শরীরের ক্ষতিই করছে— এই বিষয়গুলি মানুষের বোঝা দরকার। সেই সঙ্গে যথাসম্ভব জীবনটাকে মানসিক চাপ ও উদ্বেগমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত শারীরিক কসরতও করতে হবে। তা হলে শরীর যেমন ভাল থাকবে, তেমনই ত্বক ও চুলও ভাল থাকবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)