‘রেনি ডে’ হত ছোটবেলায়। কিন্তু বড় হলে বর্ষণমুখর দিনেও ঘরে বসে থাকা যায় না। অফিস, ব্যক্তিগত কাজে বেরোতেই হয়, সে যতই জল জমুক না কেন। গত দু’দিনের ভারী বৃষ্টিতে কলকাতা-সহ শহরতলি জলমগ্ন। নোংরা জল দেখে পা দেওয়ার ইচ্ছে না হলেও উপায় নেই। সেই জলে পা ডুবিয়েই হয় অফিস যেতে হচ্ছে, না হলে দিনভর কাজের জন্য ঘুরতে হচ্ছে। নোংরা জল পায়ে লাগছে, বসছে, শুকিয়েও যাচ্ছে। পা ধোবেন ঠিক কথা, কিন্তু সে তো বাড়ি গিয়ে। তবে ত্বকের জন্য জমা জল বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এই সময়টুকুর মধ্যেই, বলছেন ত্বকের রোগের চিকিৎসক।
বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া এমনিতেই রোগজীবাণুর আঁতুড়ঘর। বৃষ্টির নোংরা জমা জলে সেই সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দূষিত খাবার বা নোংরা হাত থেকে যেমন অসুখ ছড়াতে পারে, তেমনই নোংরা জল থেকে হতে পারে ত্বকের সংক্রমণ। কলকাতার এক হাসপাতালের ত্বকের রোগের চিকিৎসক আশারানি ভোল বলছেন, ‘‘বর্ষার জমা জল যত ক্ষণ পায়ে থাকবে, তত ক্ষণই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে। শুধু জমা জল নয়, ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে ট্রেন-বাসের সহযাত্রীর থেকেও। সেই কারণেই যত দ্রুত সম্ভব নোংরা জল হাতে-পায়ে লাগলে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন। বাইরের পোশাকও বাড়ি গিয়ে ছেড়ে ফেলতে হবে। ভাল হবে ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করে নিতে পারলে।’’
আরও পড়ুন:
বর্ষার জমা জল থেকে ত্বকে কোন ধরনের সমস্যা হতে পারে?
বৃষ্টির জমা জল, দীর্ঘ ক্ষণ নোংরা জলে ত্বক ভিজে থাকলে ছত্রাক, ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাসঘটিত সংক্রমণের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আশারানি জানাচ্ছেন, ছত্রাকের আক্রমণে হয় ‘টিনিয়া’। যাতে পায়ের পাতা বা নখে শুধু নয়, সমগ্র শরীরেই সংক্রমণ ঘটতে পারে। যে অংশ সংক্রমণ ঘটে, সেই স্থানটি চুলকায়। ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে খোস-পাঁচড়া হতে পারে। শুধু পা নয়, আঙুলের ফাঁকে, নাভির কাছে— শরীরের বিভিন্ন অংশে এটি হতে পারে। লাল র্যাশের মতো হয় এতে। ভীষণ চুলকায়। আশারানি বলছেন, "এ ছাড়া স্ক্যাবিশও হতে পারে। এটিও ভীষণ ছোঁয়াচে। ছোট ছোট পোকা থেকে এই অসুখ ছড়ায়।"
কী কী করা দরকার?
নোংরা জল যত পায়ে বসবে ততই বিপদ, সতর্ক করছেন আশারানি।
· বর্ষার জমা জল যাতে পায়ে না লাগে, সে জন্য গামবুট পরা যেতে পারে। সম্ভব না হলে, রবারের অন্য কোনও ঢাকা জুতো।
· জমা জলে পা ভিজলে যতটা দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার জলে হাত-পা ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন। যত বেশি সময় ধরে নোংরা জল পায়ে বসবে, ততই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।
· অফিসে পৌঁছে যদি সম্ভব হয় সাবান দিয়ে পা ধুলে ভাল হবে। জল লাগুক বা না লাগুক, হাতও সাবান দিয়ে ধোয়া জরুরি।
বাড়ি পৌঁছেই গরম জলে সাবান দিয়ে গা-হাত এবং পা পরিষ্কার করে নিন। সাবান জলেই একমাত্র জীবাণু নাশ হতে পারে।
ঘরোয়া টোটকা
পা পরিষ্কারের সময় টোটকাও ব্যবহার করা যায়। কর্পূরের অনেক গুণ। জীবাণুনাশক হিসাবে এবং ত্বকে ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ ঠেকাতে এটি কার্যকর বলে অনেকে মনে করেন। ঈষদুষ্ণ জলে কর্পূর মিশিয়ে সেই জলে পা ডুবিয়ে কিছু ক্ষণ বসে থাকতে পারেন।
জলে নিমপাতা ফুটিয়ে সেই জলেও পা ধুতে পারেন। নিমের অনেক গুণ। একে প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক ধরা হয়।
আর কোন সতর্কতা জরুরি?
পায়ে বা হাতে র্যাশ, ফুস্কুড়ি থেকে জ্বালা শুরু হলে, চুলকানি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। আশারানি বলছেন, "সংক্রমণ ঘটার আগে এলে মলমে কাজ হতে পারে। কিন্তু বাড়াবাড়ি হলে ওষুধের দরকার হয়। তা ছাড়া ত্বকের বেশির ভাগ রোগ ছোঁয়াচে। কারও ত্বকে সংক্রমণ হলে, তাঁর পোশাক আলাদা কাচা দরকার। একই সাবান বা জালি বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ব্যবহার করাও বিপজ্জনক হতে পারে।"