সমাজমাধ্যমের যুগে জাপানিদের জীবনযাপন কৌশল যত প্রকাশ্যে আসছে, ততই তা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। জাপানি মানুষজনের বয়সকালেও সুস্থ থাকার প্রবণতা, নিয়মানুবর্তী জীবনযাপন, সুন্দর ত্বক— ভাল থাকার নানা রকম পন্থা ক্রমশই চর্চিত হয়ে উঠছে। তেমন একটি বিষয় হল ‘শুকান’।
জীবনে ভাল থাকার জন্য জরুরি হল ভাল অভ্যাস। সেই অভ্যাস গঠনের কথাই বলছে ‘শুকান’, যা ব্যক্তি বিশেষের কর্মজগত, সামাজিক জীবনেও গভীর প্রভাব রাখতে পারে। বদলে দিতে পারে জীবন। জাপানি শব্দ ‘শু’-এর অর্থ শিক্ষা অথবা অভ্যাস। ‘কান’ হল হল অভ্যস্ত হয়ে ওঠা। ‘শুকান’ বলতে বোঝায়, ক্রমাগত একই কাজ করার মাধ্যমে অভ্যাস গঠন। জাপানিরা মনে করেন, ব্যক্তিবিশেষের সঠিক অভ্যাস কর্মজগতে যেমন তাঁদের সাফল্য এনে দেবে, তেমনই সামাজিক জীবনকেও প্রভাবিত করবে।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে তা দৈনন্দিন জীবনে অর্থবহ হয়ে ওঠে?
জাপানের সমাজে ব্যক্তিবিশেষকে সুস্বাস্থ্য রক্ষা, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিয়মানুবর্তী জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে ‘শুকান’। কর্মক্ষেত্রে স্বল্প সময়ে নির্ভুল ভাবে কর্ম সম্পাদনের জন্য কঠোর অভ্যাসের দরকার হয়। কোনও কর্মী কতটা সফল ভাবে তা করতে পারছেন, তার উপর নির্ভর করে কর্মজগতের সাফল্য। খুঁটিনাটি বিষয়ে জোর দিয়ে, একই কাজ বার বার সম্পাদনের মাধ্যমে একজন কর্মীর ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে এর মাধ্যমে। এই অভ্যাসে একজন কর্মীর প্রতিনিয়ত কাজের উন্নতি হয়। যেমন, জাপানের স্কুলপড়ুয়াদের বাধ্যতামূলক ভাবে পরিচ্ছন্নতার পাঠ দেওয়া হয় এবং তা তাদের পালন করতেও হয়। নিয়মিত একই কাজ করার ফলে ছোট থেকে পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস তৈরি হয় শিশুদের মধ্যে।
জাপানি পন্থা ভারতীয়রা কী ভাবে দৈনন্দিন যাপনে জুড়বেন?
শুরুটা হোক সহজ ভাবে: সকালে উঠে খালি পেটে জল খাওয়া শরীরের পক্ষে ভাল। এতে শরীরে জমা দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায়। এমন সহজ বিষয় দিয়ে অভ্যাস শুরু করা যায়। ঘড়ি ধরে প্রতি দিন ঘুম থেকে উঠে জল খেতে হবে।
বার বার একই কাজ: এক দিনও বাদ না দিয়ে, টানা ৩০ দিন করতে পারলেই দেখা যাবে, তার পর এ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। ঘুম থেকে উঠলেই জলের গ্লাসের দরকার হচ্ছে।
নতুন অভ্যাস: দৈনন্দিন জীবনে কিছু দিন অন্তর প্রয়োজনীয় অভ্যাস গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। জল খাওয়া অভ্যাসে পরিণত হলে যোগাভ্যাস শুরু করতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে জল খেয়ে প্রাণায়াম শুরু করুন। প্রতি দিন একই নিয়ম। মাঝখানে হাল ছাড়লে কিন্তু চলবে না।এ ভাবেই দিনযাপনের অংশ হবে আরও একটু নতুন অভ্যাস, যা ব্যক্তির শরীর ভাল রাখবে, মনকে সংযত রাখবে। শরীর-মন ভাল থাকলে তার প্রভাব কর্মজগতেও পড়বে।
নিয়মিত লেখা: কাজটি করতে গিয়ে কতটা উন্নতি হল, তা লিপিবদ্ধ করুন। কোনও অভ্যাসে ইতিবাচক বদলগুলি লিখে রাখলে বা এ নিয়ে মনে সন্তুষ্টি থাকলে অভ্যাস গঠন সহজ হয়ে যাবে।
সময়সীমা: প্রাণায়ামের অভ্যাস শুরু করলেন। প্রথম দিনেই আধ ঘণ্টা করতে গেলে ভাল লাগবে না। ধীরে ধীরে সেই সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে। কর্মজগৎ হোক বা পারিবারিক ক্ষেত্র, কাজের গতি ধীরে বৃদ্ধি করা দরকার।
‘শুকান’-এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জাপানিদের প্রথা, বিশ্বাস, ভাবনা-দর্শন। সঠিক অভ্যাসের গুরুত্ব ভারতীয় দর্শনেও রয়েছে। এ ভাবেই ছোট ছোট অথচ ভাল অভ্যাস দিয়ে জীবনে বদল আনা যায়। উন্নতি করা যায় পড়াশোনা থেকে পেশাগত ক্ষেত্রে।