E-Paper

পলিপের সমস্যার সমাধান কী?

নাকের পলিপ হলে অস্ত্রোপচারই কি একমাত্র পথ?

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:০২

নাকের ভিতরের পাতলা পর্দার অংশে ফোলা মাংসপিণ্ড অর্থাৎ পলিপের সমস্যা খুবই পরিচিত। অনেক সময়ে এটি বেড়ে গিয়ে আঙুরের মতো থোকা আকার ধারণ করে ও নাকের ভিতরের প্যাসেজটি অবরুদ্ধ করে দেয়। প্রকৃতিতে সাধারণত বিনাইন হয় বেশির ভাগ পলিপ। তবে ভাইরাল কিংবা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ফলে পলিপ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। অ্যালার্জি বা ক্রনিক সাইনুসাইটিসের মতো সমস্যা থাকলে পলিপের সমস্যা অত্যধিক বেড়ে যায়। চোখ, কান ও মাথায় সরাসরি এর প্রভাব পড়ে। পলিপের সমস্যা বেড়ে গেলে অনেক সময়েই অস্ত্রোপচার করানো ছাড়া উপায় থাকে না। তবে সমস্যা আয়ত্তের মধ্যে থাকতে থাকতে অস্ত্রোপচার ছাড়াও এর চিকিৎসা সম্ভব।

লক্ষণ ও সমস্যা

পলিপের প্রধান সমস্যা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। পলিপের বাড়বৃদ্ধি হলেই রোগী মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া শুরু করে। ঘুমোনোর সময়ে বিশেষ করে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট কিংবা ভাইরাল বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের সময়ে পলিপের সমস্যা জটিল আকার নেয়। এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব হিসেবে নাক ডাকার অভ্যাস তৈরি হয় অনেকের মধ্যে। স্বাদ-গন্ধ নিতেও অসুবিধা তৈরি হতে পারে। অনেকের ছোট থেকেই পলিপের গ্রোথ দেখা দেয়। কেউ কেউ আবার দীর্ঘ দিন ধরে এটি ফেলে রেখে সমস্যা বাড়িয়ে ফেলেন।

সাবধানতা প্রথম থেকেই

প্রাথমিক ভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা গেলে রোগীরা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন, নাকের ভিতরে পলিপের গ্রোথ ধরা পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে গ্রেড ওয়ান বা টু পলিপ হলে এর চিকিৎসা সহজেই সম্ভব, অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যদি এই গ্রোথ অনেকটাই বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে অপারেট করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ইএনটি ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত বললেন, “পলিপ ঠিক কেন হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি না। গ্রেড ওয়ান আর গ্রেড ফাইভ বা সিক্সের চিকিৎসা নিশ্চয়ই এক নয়। তবে সার্জারি ছাড়া এর মূল চিকিৎসা হল স্টেরয়েড।”

যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা মধুমেহ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ওরাল স্টেরয়েড নেওয়া ঝুঁকির। ডা. দাশগুপ্ত জানালেন, অনেক সময়েই নেজ়াল স্টেরয়েড স্প্রে দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। তবে যদি পলিপ বেড়ে গিয়ে নাকের অনেকটা অংশই অবরুদ্ধ করে দেয়, সে ক্ষেত্রে এই স্টেরয়েড স্প্রে-ও সব জায়গায় পৌঁছয় না। ফলে কার্যকরও হয় না। তখন অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় থাকে না। ৩০-৪৫ মিনিটের এই অস্ত্রোপচারের এক দিন পরেই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।

পলিপ কি ফিরে আসতে পারে?

চিকিৎসকদের মতে, অস্ত্রোপচারের পরেও পলিপ অনেক সময়েই ফিরে আসতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে ডা. দাশগুপ্ত বললেন, “পলিপ বাদ দেওয়ার তিন থেকে ছ’মাস পর্যন্ত আমরা রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখি। এন্ডোস্কোপি করে দেখা হয়, পলিপের গ্রোথ ফিরে আসছে কি না।”

যদি দেখা যায় পলিপের বৃদ্ধি ফের দেখা দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে স্টেরয়েড স্প্রে-র ডোজ় বাড়ানো হয় কিংবা আরও শক্তিশালী স্টেরয়েড দেওয়া হয়। পলিপে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেওয়া, অল্প সময়ের জন্য ওরাল স্টেরয়েড দেওয়া হয় অনেক সময়ে। একটা স্পঞ্জে স্টেরয়েড দিয়ে তা বেশ কিছু দিনের জন্য নাকে দেওয়া হয়, যাতে অল্প অল্প করে তা পৌঁছয়। অর্থাৎ নানা ভাবে পলিপের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়।

আধুনিক চিকিৎসা খরচসাপেক্ষ

ডা. দাশগুপ্ত জানালেন, পলিপের চিকিৎসায় বায়োলজিক ড্রাগসও এখন বেশ কার্যকর। “পলিপের ট্রিটমেন্টের ভবিষ্যৎ হয়তো এটাই। কিন্তু তা সাধারণ মধ্যবিত্তের পক্ষে বেশ খরচসাপেক্ষ। প্রায় ৬০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে প্রতি মাসে। অন্তত ছ’মাস এটি নিতেই হয়,” বললেন তিনি। এই ধরনের ওষুধের কাজ হল পলিপের বৃদ্ধি রোধ করা, নাকের অবরুদ্ধ ভাব কাটানো, নিয়মিত স্টেরয়েডের উপরে নির্ভরতা কমানো, অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা এড়ানো... ইত্যাদি। তবে আগামী দিনে এই ধরনের ওষুধের ব্যবহারযোগ্যতা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

নেজ়াল পলিপ আপাত দৃষ্টিতে তেমন বড় সমস্যা না হলেও তা চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখলে সাঙ্ঘাতিক আকার নিতে পারে ভবিষ্যতে। তাই এ ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই সাবধান হওয়া ভাল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Health

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy