Advertisement
E-Paper

স্কুলে বোর্ড দেখতে সমস্যা হয়? শিশুর ছানির সমস্যাও হতে পারে! কলকাতায় এর চিকিৎসা হয়

ছানি নিয়েই জন্মাতে পারে শিশু। আবার ২ মাস, ৩ মাস বা ৬ মাসের শিশুরও ছানি কাটাতে হয়। বড়দের মতো তা সাধারণ সমস্যা কিন্তু নয়। বরং জটিল ও বিরল। সঠিক সময়ে রোগ ধরা না পড়লে বা উপসর্গ এড়িয়ে গেলে পরিণতিতে অন্ধত্বের শিকারও হতে পারে শিশু।

চৈতালী চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ০৮:৫৯
Importance of early diagnosis and treatment of Congenital and Paediatric Cataract

শিশুদেরও ছানি পড়ে! তার অস্ত্রোপচারও হয় কলকাতায়, কেমন সে পদ্ধতি? ছবি: এআই।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলে পাক ধরে, চামড়া কুঁচকে যায়, চোখে ছানি পড়ে। তাই ছানি মানেই বয়সজনিত সমস্যা, তা এক প্রকার ধরেই নেওয়া হয়েছে। এখন যদি বলা হয়, সবে জন্মেছে এমন শিশুরও চোখে ছানি পড়তে পারে, তা হলে আশ্চর্যই হবেন অনেকে। চমকেও যাবেন। ভাববেন, এমনও হয় নাকি? বার্ধক্যে পৌঁছলেই ছানি পড়বে, এটা তো জানা। কিন্তু কয়েক মাসের শিশুরও তা হতে পারে। সদ্যোজাত হোক বা পাঁচ বছরের শিশু, অনেকেরই এমন সমস্যা দেখা দেয়। এখন তার চিকিৎসাও আছে কলকাতায়। অস্ত্রোপচার করে ছানি কাটিয়ে দেন চিকিৎসকেরা।

বড়দের ছানির সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে হবে না। ছোটদের ছানি পড়ার ধরন আলাদা। একদম সদ্যোজাত শিশুর এক চোখে বা দু’চোখে ছানি পড়তে পারে। ছানি নিয়েই মায়ের গর্ভ থেকে সে জন্মায়। এটি হল ‘কনজেনিটাল ক্যাটারাক্ট’। আবার বয়স যখন ২ মাস বা ৩ মাস, তখন যদি বাড়ির লোকজন খেয়াল করেন যে, চোখের মণির ঠিক মাঝখানে সাদা তুলোর মতো একটা চাদর রয়েছে, তা হলে বুঝতে হবে সেটি ছানিরই লক্ষণ। স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে যে শিশু, তারও কিন্তু ছানি পড়তে পারে যখন-তখন। সেটি হল ‘পেডিয়াট্রিক ক্যাটারাক্ট’। শিশু যদি কখনও বলে বোর্ডে লেখা পড়তে সমস্যা হচ্ছে, বা খেয়াল করে দেখেন টিভি দেখার সময়ে একদম সামনে চলে যাচ্ছে, বই চোখের সামনে নিয়ে এসে পড়ছে, তা হলে সমস্যা গুরুতর। তখন শিশুর চোখ ভাল করে লক্ষ্য করে দেখতে হবে। যদি মণির উপর বা চারপাশে সাদা আস্তরণ দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে চোখের কোনও সমস্যা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে তা ছানির কারণেও হতে পারে।

ছানি নিয়েই জন্মাতে পারে শিশু।

ছানি নিয়েই জন্মাতে পারে শিশু। ছবি: ফ্রিপিক।

শিশুর ছানি খুবই বিরল

বয়সকালের ছানি সাধারণ সমস্যা। শিশুদের ক্ষেত্রে তা নয়। যে শিশু সবে পৃথিবীর আলো দেখা শুরু করেছে, তার চোখেই যদি ছানি পড়ে, তা হলে সেটিকে আর স্বাভাবিক বলা যায় না। বরং বিরল অসুখই বলা ভাল। আগে হাতে গোনা কয়েক জনের এমন দেখা যেত। কিন্তু এখন ছোট বয়সে ছানি পড়ার সমস্যা আগের থেকে বেড়েছে। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল অপথ্যালমোলজি’ তাদের সমীক্ষায় জানিয়েছে, দেশে প্রতি বছর ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ১.৮ থেকে ৩.৬ শতাংশের ছানি পড়ে। যেহেতু ছোটদের ছানি পড়ার ব্যাপারটা অনেকেই তেমন জানেন না, তাই এর চিকিৎসাও হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। ফলে যত দিন যায়, ততই দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে হতে তা নষ্ট হতে শুরু করে। গবেষণা বলছে, এ দেশে শিশু অন্ধত্বের হার বেশি। তার একটা বড় কারণই হল ছানি।

সদ্যোজাতেরও ছানির অস্ত্রোপচার হয়।

সদ্যোজাতেরও ছানির অস্ত্রোপচার হয়। ছবি: এআই।

বড়দের থেকে কতটা আলাদা শিশুর ছানি?

ছানি হচ্ছে অনেকটা সেই ক্যামেরার লেন্সের মতো, যাতে ধুলো ময়লা লেগে বা দাগ লেগে নিখুঁত ছবি তোলায় বিঘ্ন ঘটায়। তখন লেন্স পরিষ্কার করে বা বদলে ফেলে ক্যামেরাকে কার্যকরী করা হয়। ঠিক তেমনই ছানি হচ্ছে চোখের লেন্সের অস্বচ্ছতা। লেন্স প্রোটিন ও জলীয় উপাদানে তৈরি। তাতে কিছু বিশেষ প্রোটিন থাকে, যা লেন্সের স্বচ্ছতা বজায় রাখে। বয়স বাড়ার সঙ্গে এবং নানা কারণে সেই সব প্রোটিনের ঘাটতি হলে লেন্স অস্বচ্ছ হতে শুরু করে। তার ভিতর দিয়ে আলো চলাচল করতে পারে না, ফলে রেটিনার উপর একটি আস্তরণ পড়ে যায়। তখন চোখের সামনে সব কিছুই ঝাপসা লাগে।

একচোখে বা দু'চোখে মণির উপর সাদা তুলোর মতো আস্তরণ পড়ে।

একচোখে বা দু'চোখে মণির উপর সাদা তুলোর মতো আস্তরণ পড়ে। ছবি: সংগৃহীত।

ছোটদের ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা আলাদা। তারা সবে দেখা শুরু করেছে। তাই লেন্সের গঠন, তাতে প্রোটিন ইত্যাদি ততটা ভাল করে তৈরিই হয়নি। তার আগেই লেন্স ঝাপসা হতে শুরু করে। তাতে আলো চলাচলের পথটা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে লেন্সের উপরে সাদা তুলোর মতো একটা পর্দা পড়তে শুরু করে। এই পর্দাটা যত তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়া যায়, ততই ভাল। না হলে তা চোখকে একেবারেই নষ্ট করে দিতে শুরু করবে।

শিশুর ছানির নানা ধরন হয়, কোন বয়সে ছানি পড়ছে তার উপর নির্ভর করে।

শিশুর ছানির নানা ধরন হয়, কোন বয়সে ছানি পড়ছে তার উপর নির্ভর করে। ছবি: ফ্রিপিক।

শিশুর ছানি তিন রকম। কোন বয়সে ছানি পড়ছে, সে অনুযায়ী এর নামকরণ করা হয়েছে। এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন চক্ষু চিকিৎসক ও অকুলোপ্লাস্টিক সার্জন ঈপ্সিতা বসু। জন্মেই যদি ছানি পড়ে তা হলে সেটি কনজেনিটাল ক্যাটারাক্ট’। জন্মের এক বছরের মধ্যে হলে সেটি ‘ইনফ্যান্টাইল ক্যাটারাক্ট’। খুব তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা প্রয়োজন, না হলে ছোট থেকেই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হবে শিশুর। আর তিন নম্বর হল ‘ডেভেলপমেন্টাল ক্যাটারাক্ট’, যা ওই পাঁচ বছর বা ছ’বছরে গিয়ে হতে পারে।

কেন পড়ে ছানি?

ছোটদের ছানি পড়ার কারণ অনেক। মায়ের গর্ভে থাকার সময়েই এর সূত্রপাত হতে পারে। তার কিছু কারণও আছে—

১) মায়ের গর্ভে থাকার সময়ে রুবেলা, সাইটোমেগালো ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। আবার প্রসবের সময়ে সংক্রমণজনিত কারণেও সদ্যোজাতের ছানি পড়তে পারে।

২) ক্রোমোজ়োমের ত্রুটি বা জিনগত কারণে ছানি পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বংশগত ভাবে বাবা-মা বা পরিবারের কারও চোখের অসুখ থাকলে, তার প্রভাব পড়তে পারে।

লেন্সের ভিতর দিয়ে আলো চলাচলের পথটা বন্ধ হয়ে যায়।

লেন্সের ভিতর দিয়ে আলো চলাচলের পথটা বন্ধ হয়ে যায়।

৩) মায়ের থাইরয়েড, এইচআইভি, ডায়াবিটিস বা কোনও রকম ক্রনিক রোগ থাকলে তার থেকে শিশুর চোখের অসুখ হতে পারে।

৪) মায়ের অপুষ্টি, মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার থাকলে অথবা শিশুর শরীরে বিপাকক্রিয়া জনিত সমস্যা থাকলে, তার থেকে চোখে ছানি পড়তে পারে।

৫) অস্ত্রোপচারের সময়ে মায়ের রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে থাকলে, তার প্রভাব পড়ে গর্ভস্থ শিশুর চোখে।

৬) স্বাভাবিক প্রসবে শিশুকে বার করার সময়ে আঘাত লেগে চোখের সমস্যা হতে পারে।

মা-বাবারা বুঝবেন কী ভাবে?

আসল গোলমালটা হয় এখানেই। সদ্যোজাত সন্তান ছানি নিয়ে জন্মেছে, এটা বুঝতেই অনেক সময় লেগে যায়। অথবা পাঁচ বা ছয় বছরের শিশুরও যে চোখে ছানি পড়েছে,তা বুঝতেই পারেন না বাবা-মায়েরা। সন্তান যদি বলে চোখে ঝাপসা দেখছে, তা হলে অভিভাবকেরা ভাবেন, পড়াশোনা না করার বাহানায় মিথ্যা বলছে। আবার চোখের পাওয়ার বৃদ্ধি পেলেও দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়। তাই বাবা-মায়ের পক্ষে বোঝা সম্ভবই হয় না, কোনটা পাওয়ার বৃদ্ধির লক্ষণ আর কোনটা ছানি। আদতেই ছানি কি না, তা বোঝার কিছু উপায় জানিয়েছেন চক্ষু চিকিৎসক মৃন্ময় দাস।

সদ্যোজাত শিশু হলে বা বয়স ১ থেকে ৬ মাসের মধ্যে হলে খেয়াল করতে হবে শিশুর চোখের মণির উপরে সাদা ‘স্পট’ পড়েছে কিনা। তারা তো আর বলতে পারবে না যে চোখে কম দেখছে কি না, তাই দেখতে হবে শিশু ঠায় একই দিকে তাকিয়ে আছে কি না। ঘন ঘন চোখের পাতাও ফেলবে তারা। সামনে খেলনা বা কোনও বস্তু ধরলে, তা দেখতেই পাবে না ঠিক করে।

বাবা-মায়েরা কী ভাবে বুঝবেন, সে নিয়ে পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা।

বাবা-মায়েরা কী ভাবে বুঝবেন, সে নিয়ে পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা। ছবি: এআই।

স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে বোঝাটা আর একটু সহজ। বাবা-মাকেই উদ্যোগী হতে হবে। শিশুর যদি দূরের লেখা পড়তে সমস্যা হয়, ক্লাসে বোর্ডে র লেখা দেখতে পা পায়, মাঝেমধ্যেই অক্ষর ঝাপসা হয়ে আসে, তা হলে একবার চোখের স্ক্রিনিং করিয়ে নিতে হবে। ছানি পড়লে আরও কিছু সমস্যা হয়। শিশু একদিকে ঘাড় কাত করে দেখবে, দূরের দৃশ্য দেখার সময়ে চোখ ট্যারা হয়ে যেতে পারে, রং ভাল করে বুঝতে পারবে না শিশু, সব কিছুই বিবর্ণ লাগতে শুরু করবে। মাঝেমধ্যে একই জিনিস দুটো করে দেখতে পারে বা ‘ডব্‌ল ভিশন’ হতে পারে।

চিকিৎসা কী?

ছানি এক চোখে পড়তে পারে, আবার দু’চোখেও। শিশুর এক চোখে ছানি হলে তা ‘ইউনিল্যাটারাল’ আর দু’চোখে হলে ‘বাইল্যাটারাল’। চিকিৎসক ঈপ্সিতার পর্যবেক্ষণ, “অনেক বাবা-মা শিশুকে নিয়ে এসে বলেন, আগে এক চোখের মণিতে সাদা ছোপ বোঝা গিয়েছিল, এখন দু’চোখেই দেখা যাচ্ছে। শিশুর ছানি বোঝা গেলে একটা দিনও সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। কারণ, প্রতিটি দিন একটু একটু করে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে থাকে, যা অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।“

শিশুর ছানি অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি বড়দের থেকে আলাদা।

শিশুর ছানি অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি বড়দের থেকে আলাদা। ছবি: ফ্রিপিক।

বড়দের মতো ছোটদেরও ছানির একটাই চিকিৎসা, যা হল অস্ত্রোপচার। তবে তার ধরন আলাদা। শিশুর যদি দুই চোখেই ছানি পড়ে, সে ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৬ মাস বয়স না হওয়া অবধি ছানির অস্ত্রোপচার করা ঠিক নয়। আর যদি ছানি এক চোখে বোঝা যায়, তা হলে বয়স ৬ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেই অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে এখানেও সমস্যা আছে। সেটি কী?

শিশুর ওজন কতটা, শরীর কেমন, সবই দেখতে হবে চিকিৎসককে। শিশু যদি অপুষ্টির শিকার হয় বা সময়ের আগেই জন্মায়, জন্মগত ভাবে হার্টের রোগ থাকে, তা হলে অস্ত্রোপচারের সময়টা আর একটু পিছিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অত ছোট শিশুর ‘জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়া’ (অজ্ঞান করার প্রক্রিয়া) করা সম্ভব নয়। করতে গেলে বিপদ হতে পারে। তাই বুঝেশুনেই এগোতে হবে চিকিৎসককে। সে ক্ষেত্রে শিশুর ৮ থেকে ৯ মাস বয়স হওয়া অবধি অপেক্ষা করতেই হবে। এক চোখে অস্ত্রোপচার আগে করতে হবে। তার পর পরিস্থিতি অনুযায়ী অন্য চোখে।

ইনফ্যান্টাইল বা ডেভেলপমেন্টাল ক্যাটারাক্ট যেহেতু শিশুর ১ বছর বয়সের পরে হয়, তাই সে ক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে, যে দিন ছানি ধরা পড়বে, সে দিনই অস্ত্রোপচার করার ব্যবস্থা করতে হবে।

ছোটদের ছানির অস্ত্রোপচার কেমন হয়?

বড়দের যেমন অস্ত্রোপচার করে লেন্স বসিয়ে দেওয়া হয়, ছোটদের তেমনটা নয়। এক বছরের আগেই যদি অস্ত্রোপচার করা হয়, তা হলে তার দু’টি পদ্ধতির কথা জানালেন চিকিৎসক মৃন্ময়। একটি হল ‘পোস্টেরিয়র ক্যাপসুলোরেক্সিস’ এবং অন্যটি হল ‘অ্যান্টেরিয়োর ভিরেক্টমি’। লেন্সের মাঝে যে জেলির মতো স্তর জমা হয়, সেটি অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দিতে হয়।

অস্ত্রোপচার করে মণির উপর জমে থাকা তুলোর মতো স্তরটা বার করে দেওয়া হয়।

অস্ত্রোপচার করে মণির উপর জমে থাকা তুলোর মতো স্তরটা বার করে দেওয়া হয়। ছবি: নেচার জার্নাল।

বড়দের ক্ষেত্রে লেন্সের মাঝখানে তুলোর মতো যে স্তর তৈরি হয় তাকে বলে নিউক্লিয়াস। ওর মাঝখানে আরও একটা শক্ত পাথরের মতো জিনিস তৈরি হয়। সেটিকে ভাঙার জন্য যে যন্ত্রের দরকার পড়ে, তাকে বলে ফেকো মেশিন। ছোটদের তা নয়। ছোটদের লেন্সের মাঝখানের শক্ত জিনিসটা থাকে না, শুধুই তুলোর মতো আস্তরণটা থাকে। সেটিকে তুলে ফেলে দিতে হয়। চিকিৎসার ভাষায় একে বলে ‘ওয়াশ’। তাই ছোটদের ছানি অস্ত্রোপচারের পদ্ধতির আরও একটা নাম আছে, তা হল ‘ক্যাটারাক্ট অ্যাসপিরেশন’।

বড়দের মতো শিশুদের কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে শুরুতেই লেন্স দেওয়া হয় না। কারণ, যদি লেন্স বসানো হয়, তা হলে দু’রকম সমস্যা হতে পারে। প্রথমত, শিশুটির চোখের দৃষ্টি নষ্ট হতে পারে, গ্লকোমার শিকার হতে পারে শিশু আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে লেন্সের পিছনেও আর একটি স্তর তৈরি হতে থাকে যা থেকে আবারও দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে। তা হলে উপায়? চিকিৎসক ইপ্সিতা জানালেন, প্রথম সিটিংয়ে ছানি বাদ দিয়ে লেন্সের মধ্যে দিয়ে আলো চলাচলের রাস্তাটা তৈরি করে দেওয়া হয়। দেখার জন্য পরানো হয় মোটা ফ্রেমের চশমা, যাকে বলে ‘আফেকিক গ্লাস’।

এর পরেও কিন্তু আরও কিছু প্রক্রিয়া থাকে। বাবা-মায়ের দায়িত্বও থাকে। শিশু ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছে কি না, স্কুলে যাওয়া শুরু করার পরে তার ‘ভিশন’ ঠিক থাকবে কি না, দু’চোখের দৃষ্টি সমান হবে কি না, এই সব প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই অস্ত্রোপচারের পরে শিশুর এক থেকে পাঁচ বছর বয়স অবধি, চশমা পরে থাকার পরামর্শই দেওয়া হয়। প্রতি ছ’মাস অন্তর চোখের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াও জরুরি। আরও একটা জিনিস করা হয়, তা হল ‘প্যাচিং’। একটি চোখে পট্টি লাগিয়ে দেখা হয়, এক চোখের দৃষ্টি ঠিক আছে কি না। আবার অন্য চোখে একই রকম পট্টি লাগিয়ে দেখা হয়, সে চোখ দিয়েও ঠিক দেখছে কি না। এই ভাবে পাঁচ বছর অবধি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তার পর সব ঠিক থাকলে, তখন আরও এক বার অস্ত্রোপচার করে লেন্স বসিয়ে দেওয়া হয়। তবে এর পরেও কিন্তু চশমা পরার প্রয়োজন হতে পারে।

বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে ছানি অস্ত্রোপচারের পরেও নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করানো। কম আলোয় পড়াশোনা করা বা দীর্ঘ সময়ে মোবাইল বা টিভি দেখা, এগুলো না করাই ভাল। শিশুর যদি এর পরেও দেখতে সমস্যা হয় বা চোখের যন্ত্রণা বা চোখ থেকে জল পড়ার মতো সমস্যা হয়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

cataract Cataract Prevention Eye Care
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy