০৬ মে ২০২৪
Slipped Disc Symptoms

অফিসে বসে কাজ করার সময়ে কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা? স্লিপ ডিস্ক নয় তো?

চিকিৎসকদের মতে, ৫০–৮০ বছর বয়সের মানুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয় ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্স। এই অসুখে প্রথম দিকে হালকা ব্যথা হয়। মাত্রা কম থাকে বলে অনেকেই এই হালকা যন্ত্রণাকে অগ্রাহ্য করেন। এর উপসর্গ কী?

back pain

ব্যায়াম না করার অভ্যাস ও স্থূলতা থাকলেও স্লিপ ডিস্কের সমস্যা হতে পারে৷ ছবি: শাটারস্টক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৪০
Share: Save:

জীবনযাপনের দোষে ইদানীং অনেক বেশি স্লিপ ডিস্কের মতো রোগ বাসা বাঁধছে মানুষের শরীরে। দিনের পর দিন কোমরের কাছে মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের মাঝে বেশি চাপ পড়তে পড়তে এক সময়ে সেই হাড়ের মাঝে নরম কুশন হড়কে গিয়ে পিছনের স্নায়ুতে চাপ দিতে শুরু করে৷ শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণা হয় সুচ ফোটার মতো। দেখা যায় অ্যাকিউট ডিস্ক প্রোল্যাপ্স৷

এ ক্ষেত্রে অনেক সময়ে নিচু হয়ে হ্যাঁচকা টানে কিছু সরাতে গিয়ে বা না জেনেবুঝে ব্যায়াম করতে গিয়েও সমস্যা হতে পারে৷ আবার ব্যায়াম না করার অভ্যাস ও স্থূলতা থাকলেও সমস্যা হতে পারে৷ চিকিৎসকদের মতে, ৫০–৮০ বছর বয়সের মানুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয় ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্স। এই অসুখে প্রথম দিকে হালকা ব্যথা হয়। মাত্রা কম থাকে বলে অনেকেই এই হালকা যন্ত্রণাকে অগ্রাহ্য করে। অবহেলার ফলে ভিতরে ভিতরে এই রোগ আরও জটিল হয়ে উঠতে থাকে। এমন একটা সময় আসে, যখন দেখা যায়, হাঁটতে গেলে পায়ে যন্ত্রণা হয়৷ দাঁড়িয়ে পড়লে আবার ঠিক হয়ে যায়। মাঝেমাঝে পা অবশ হয়ে যায়। এই সব উপসর্গের পাশাপাশি মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়ে এবড়োখেবড়ো হয়ে গেলে বিপদ বাড়ে৷ অনেক সময়ে নড়বড়ে হয়ে যায় মেরুদণ্ড। হাঁটতে গেলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

রোগ ঠেকাতে কী কী করণীয়?

১) সুন্দর দেখার জন্য নয়, শারীরিক সমস্যা এড়াতেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ওজন ও ভুঁড়ি বশে রাখুন। শুধু কার্ডিয়োই নয়, কোমরের পেশি সবল করার ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত।

২) হাঁটা বা বসার সময়ে কোমর ও শিরদাঁড়া সোজা রাখার অভ্যাস করুন। আধশোয়া হয়ে বা শুয়ে বই পড়া, টিভি দেখা যত কমানো যায়, ততই ভাল। কোমরে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যাক রিল্যাক্সিং আসন করতে পারেন।

back pain

অতিরিক্ত ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও হাড় ক্ষয়ে যায়৷ ছবি: শাটারস্টক

৩) দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করতে হলে কোমরের কাছে সাপোর্ট দেওয়া চেয়ারে সোজা বসুন। অফিসে একটানা বসে না থেকে মাঝেমাঝে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটাচলা করে বা ব্যাক স্ট্রেচিং করতে হবে। নিয়মিত সাঁতার কাটলে খুব ভাল কাজ হয়।

৪) মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪৫ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর বয়সের পরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করতে পারেন। রোজ এক-আধ ঘণ্টা ভোরের রোদ লাগান গায়ে৷

৫) অতিরিক্ত ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও হাড় ক্ষয়ে যায়৷ কাজেই অভ্যাস বদলান৷ মদ্যপান ছেড়ে দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল। একান্তই তা না পারলে এক থেকে দেড় পেগের বেশি একেবারেই চলবে না।

৬) হাড় সবল করতে আমিষ খাবারের জুড়ি নেই। বিশেষ করে ডিম, স্যামন, সারডিন ও চুনো মাছ রাখুন ডায়েটে৷ এর সঙ্গে দুধ ও দুধের খাবার, মাশরুম, কড লিভার অয়েল, মাখন, ঘি, সবুজ শাকসব্জি, বাদাম, কুমড়ো পাতা, টোফু, পোস্ত ইত্যাদিও রাখতে হবে খাবারে পাতে৷

এর পরেও শরীরে এই রোগ হানা দিলে কী করণীয়?

অ্যাকিউট ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে বিশ্রাম, সামান্য ওষুধ, ফিজিয়োথেরাপি, বেল্ট, ব্যায়াম ইত্যাদির সাহায্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা কমে যায়। তবে যদি তীব্র ব্যথার সঙ্গে পা নাড়াতে সমস্যা হয়, আঙুল নাড়ানো বা পায়ের পাতা উপরে তুলতে কষ্ট হয়, এমআরআই স্ক্যান করে অবস্থার পর্যালোচনা করা দরকার। ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে কয়েকটি নিয়ম ও সামান্য ওষুধেই প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ বশে থাকে৷ সমস্যা খুব গুরুতর হলে অস্ত্রোপচার করাতে হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Slip Disc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE