Advertisement
১৩ অক্টোবর ২০২৪
Women's Day Special

Women’s Day Special: কানে কানেও করা যায় না যে সব ‘মেয়েলি’ প্রশ্ন, তারই উত্তর দিচ্ছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসকরা

স্তন-যোনি-ঋতুস্রাব— প্রত্যেকটি শব্দই যেন নিষিদ্ধ। লোকসমাজে তো এ নিয়ে আলোচনা করা যাবেই না, নিজের মনেও যেন এ নিয়ে ভাবা ‘পাপ’।

নারী-শরীর মানেই যেন রহস্য! সমাজ সে ভাবেই দেখে এবং সে ভাবেই দেখতে শেখায়। এমনকি নারী নিজেও তা ভাবতে শেখে, বিশ্বাস করে।

নারী-শরীর মানেই যেন রহস্য! সমাজ সে ভাবেই দেখে এবং সে ভাবেই দেখতে শেখায়। এমনকি নারী নিজেও তা ভাবতে শেখে, বিশ্বাস করে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ১০:৩৫
Share: Save:

নারী-শরীর মানেই যেন রহস্য! সমাজ সে ভাবেই দেখে এবং সে ভাবেই দেখতে শেখায়। এমনকি নারী নিজেও তা ভাবতে শেখে, বিশ্বাস করে। স্তন-যোনি-ঋতুস্রাব— এ সবই নিষিদ্ধ। কোনও সভ্য সমাজে জনসমক্ষে এ নিয়ে কথা বলা যাবে না। নারী-শরীর মানেই লজ্জা। শৈশব পেরিয়ে যেই একটি মেয়ে কৈশোরে পা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে সমাজ তার ঘাড় ধরে শেখাতে বসে, কোন কথা বলা যাবে, কোন কথা বলা যাবে না। সেই পাঠ্যক্রমে এক বার চোখ বোলালেই যে কেউ শিখে যায় যে, নিজের শরীর নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নই নিষিদ্ধ। অথচ বেড়ে ওঠার সময়ে সকলের মনেই হাজার প্রশ্ন ওঠে। সেই প্রশ্ন মনেই থেকে যায়। বয়স বাড়লেও চিন্তা-ভাবনার পরিসর অজান্তেই বাড়া বন্ধ করে দেয়। তাই অনেক সময়ে অনেক জরুরি প্রশ্ন মনে এলেও তা অবচেতনে ঠেলে দেয় মেয়েরা।

নারীমন কি কোনও দিন নিজের শরীরে নিজে খোলামেলা চিন্তা-ভাবনা করতে শিখবে না? লাজলজ্জা ভুল নিজের শরীরকে চিনতে শিখবে না? সেই ভাবনা নিয়েই ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসে আনন্দবাজার অনলাইনের এক ছোট্ট প্রয়াস— কিছু জরুরি অথচ ‘নিষিদ্ধ’ প্রশ্ন করে ফেলা গেল স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের কাছে। উত্তর দিলেন চিকিৎসক ভিমি বিন্দ্রা এবং কৃষ্ণাবেণী নয়নী।

স্তনবৃন্তের লোম থাকা কি স্বাভাবিক? না কি আমিই অদ্ভুত?

স্তনবৃন্তের লোম থাকা কি স্বাভাবিক? না কি আমিই অদ্ভুত?

ঋতুস্রাব কমে যাওয়া মানেই কি প্রজনন ক্ষমতাও কমে যাওয়া?

সাধারণত প্রত্যেক নারীর ঋতুস্রাব চলে ৩ থেকে ৭ সাত দিন পর্যন্ত। তার শরীর থেকে ৮০ মিলি রক্তক্ষয় হয়। এর চেয়ে কম বা বেশি রক্তক্ষয়, দুই-ই কোনও রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। মানসিক চাপ, হরমোনের তারতম্য কিংবা থাইরয়েড, পিসিওডি-র মতো রোগ থাকলে রক্তক্ষয় কমে যেতে পারে। বয়সের সঙ্গেও তা কমতে পারে। তাতে প্রজনন ক্ষমতা কমতেও পারে, না-ও পারে। হঠাৎ যদি কখনও দেখেন, ঋতুস্রাব অনেকটাই হালকা হয়ে এসেছে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।

ঋতুস্রাবের সময়ে এত ব্রণ হয় কেন?

সব মেয়ের ঋতুচক্রের বিভিন্ন সময়ে শরীরে হরমোনের নানা রকম তারতম্য চলে। ঋতুস্রাবের ঠিক আগে হঠাৎই ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন কমে যায়। এতে ত্বক বেশি পরিমাণে সেবাম তৈরি করে এবং কোষগুলি অনেক সময়ে তাতে বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাক্টেরিয়া সহজেই জন্মাতে পারে। তার থেকেই ব্রণ হয়। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্রণ কমবেশি হতে পারে এক এক জনের ক্ষেত্রে। ত্বকের সঠিক যত্ন নিলে এই সমস্যা একটু কমতে পারে।

ঘরোয়া টোটকায় কি ঋতুস্রাবের সময় পিছিয়ে দেওয়া সত্যিই সম্ভব?

ঘরোয়া টোটকা বা অতিরিক্ত শরীরচর্চায় ঋতুস্রাবের সময় পিছিয়ে দেওয়া যায়, এমন ভ্রান্ত ধারণা অনেকেরই রয়েছে। অনেকে দাবি করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু টোটকা কাজও দেয়। কিন্তু এর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা গবেষণাপত্র নেই। ঋতুস্রাবের সময়ে পিছিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে হরমোনের ওষুধ খেতে হবে।

যোনিদ্বারের মাংসপেশি কি আগের মতো টানটান থাকে না অতিরিক্ত সঙ্গমের ফলে?

সঙ্গম নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা চারদিকে রয়েছে। অনেকেই ভয় পান, বেশি যৌন মিলনে হয়তো মাংসপেশি আলগা হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়েদের যৌনাঙ্গ যথেষ্ট ইলাস্টিক। মানে সঙ্গমের সময়ে বা যৌন উত্তেজনায় তা যেমন বিস্তৃত হয়, সঙ্গমের পর ফের আগের আকারেই ফিরে যায়।

শৈশব পেরিয়ে যেই একটি মেয়ে কৈশোরে পা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে সমাজ তার ঘাড় ধরে শেখাতে বসে, কোন কথা বলা যাবে, কোন কথা বলা যাবে না।

শৈশব পেরিয়ে যেই একটি মেয়ে কৈশোরে পা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে সমাজ তার ঘাড় ধরে শেখাতে বসে, কোন কথা বলা যাবে, কোন কথা বলা যাবে না।

স্তনবৃন্তে লোম কিংবা ফাটা? এগুলি কি স্বাভাবিক?
স্বাভাবিক—

১। একটি স্তন সামান্য বড়

২। স্তন বা স্তনবৃন্তে লোম

৩। একটি স্তন সামান্য ঝুলে থাকে

৪। ঋতুস্রাবের সময়ে বা আগে স্তনে যন্ত্রণা

চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যখন—

১। স্তনের কোনও অংশ উঁচু হয়ে বা ফুলে রয়েছে, যা আগে ছিল না।

২। স্তনবৃন্তে ঘোলাটে তরল রস বা রক্তক্ষয়।

৩। বগল বা স্তন ফুলে থাকা

৪। স্তনবৃন্তের চারপাশে অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক বা ফাটল

৫। অতিরিক্ত চুলকানি

৬। স্তন গরম হয়ে যাওয়া বা জ্বালাভাব

যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে কি বিশেষ সাবান প্রয়োজন?

যোনি এবং যোনিদ্বারের পার্থক্য প্রথমেই জানতে হবে। শরীরের ভিতরের অংশ যোনি। যা নিজে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়। আলাদা করে কোনও রকম সাবান দিলে জ্বালাভাব বা অন্য সমস্যা হতে পারে। যোনিদ্বার প্রত্যেক দিন পরিষ্কার করা উচিত ঈষদুষ্ণ জল এবং হালকা সাবন দিয়ে। কিন্তু বাজারচলতি বিভিন্ন সুগন্ধি দেওয়া সাবান বা তরল একদমই ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ যে কোনও রকমের রাসায়নিক এখানকার মাংসপেশিতে জ্বালাভাব বা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।

মা না হয়েও কি স্তনদুগ্ধ তৈরি হতে পারে?

যিনি সন্তানের জন্ম দেননি, তাঁরও স্তনে স্তনদুগ্ধের মতো তরল তৈরি হতে পারে। একে বলা হয় গ্যালাক্টোরিয়া। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, হরমোনের তারতম্য বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা প্রতিক্রিয়া হিসাবে এমন হতেই পারে। সব সময়ে কোনও শারীরিক জটিলতার ইঙ্গিত না হলেও, কখনও কখনও স্তনের টিস্যু নষ্ট হয়ে গেলে বা লিভার বা কিডনির কোনও সমস্যা হলে এমন হতে পারে। তাই পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

স্তন টিপলে কি আকারে বড় হয়ে যায়?

কমবয়সিদের মধ্যে এমন গুজব রটেই থাকে। স্তন টিপলে কখনওই তার আকার বদলায় না। যৌন উত্তেজনা হতে পারে মাত্র। ওজন বাড়লে, অন্তঃসত্ত্বা হলে বা সন্তানকে স্তনপান করালে তবেই স্তনের আকার বড় হয়। তা ছাড়া, শুধু স্তন প্রতিস্থাপনেই স্তনের আকার বড় হতে পারে।

কোন ধরনের যোনিস্রাব স্বাভাবিক, কোনটি উদ্বেগজনক?

অনেক ধরনের যোনিস্রাব স্বাভাবিক এবং তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। যেমন—

১। স্বচ্ছ এবং জলের মতো (মাঝেমাঝে বাড়তেই পারে)

২। সাদা (ঋতুস্রাবের আগে এবং পরে স্বাভাবিক)। কিন্তু তা ছানার মতো হলে ইস্টের সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। সঙ্গে চুলকানি থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করান।

৩। স্বচ্ছ ইলাস্টিকের মতো (প্রজননের সময়ে স্বাভাবিক)

৪। বাদামি (ঋতুস্রাবের পর এক-দু’দিন স্বাভাবিক। অন্য সময়ে হলে চিকিৎসককে জানানো প্রয়োজন)

যেগুলি অস্বাভাবিক—

১। হলুদ বা সবুজ (যৌনরোগের ইঙ্গিত)

২। রক্তের মতো বা বাদামি (ঋতুস্রাবের এক দু’দিন পর ছাড়া এমন যোনিস্রাব ক্যানসার, ফাইব্রয়েড বা কোন সিস্টের ইঙ্গিত হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Women's Day Special international women's day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE