চলচ্চিত্র পরিচালক কর্ণ জোহরকে দেখলে এখন চেনার উপায় নেই। গত কয়েক মাস ধরে একেবারে অন্য রকম দেখাচ্ছে তাঁকে। বিমানবন্দরে হোক বা কোনও অনুষ্ঠানে, কর্ণকে দেখে এখন একটাই প্রশ্ন অনুরাগীদের, কোথায় গেল সেই গোলগাল চেহারা? কী ভাবে ওজন ঝরিয়েছেন তিনি? ওজন ঝরানোর কোনও ওষুধ না কি অস্ত্রোপচার— এই ভোলবদলের পিছনে আসল রহস্যটা কী? কর্ণের জবাব কিন্তু স্পষ্ট, ওজন ঝরিয়েছেন তিনি ‘ওম্যাড’ ডায়েট করে, কোনও রকম ওষুধ খেয়ে নয়।
কী এই ‘ওম্যাড’ ডায়েট?
‘ওম্যাড’ অর্থাৎ ‘ওয়ান মিল আ ডে’। এই ডায়েটে দিনে বার বার নয়, মাত্র এক বারই খাবার খাওয়া যায়। কর্ণ বলেন, ‘‘আমি দিনে এক বার খেয়েই ওজন ঝরিয়েছি। প্রথম সাত দিন ভীষণ কষ্ট হয়েছিল তবে এই ডায়েটটি আমি সাত মাস ধরে করেছি। আমি ঠিক রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে খাবার খেয়ে নিতাম রোজ, আর ওটাই ছিল সারা দিনের খাবার।’’ কর্ণের রাতের সেই খাবারে কোনও রকম ল্যাকটোজ় (দুদ্ধজাত খাবার), গ্লুটেন আর চিনি থাকত না। এই ‘ওম্যাড’ ডায়েট করেই কর্ণ প্রায় ২০ কেজি ওজন ঝরিয়েছেন।
সমাজমাধ্যমে কর্ণের এই ডায়েট প্ল্যান ভাইরাল হয়েছে। কর্ণের দেখাদেখি অনেকেই ওজন ঝরাতে ‘ওম্যাড’ ডায়েটের উপর ভরসা রাখছেন। তবে আদৌ কি এই ডায়েট করে ওজন ঝরানো স্বাস্থ্যসম্মত? পুষ্টিবিদ পম্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ আমি কখনওই কোনও রকম ক্র্যাশ ডায়েট করার পক্ষপাতী নই। এই প্রকার ডায়েট মোটেই শরীরের পক্ষে ভাল নয়। এতে অজান্তেই শরীরের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ডায়েট এমন হওয়া জরু্রি, যাতে শরীরে ক্যালোরির চাহিদা পূরণ হয় আর শরীর সব রকম পুষ্টি পায়। তবে নেটমাধ্যম দেখে কোনও পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়াই এই রকম ক্র্যাশ ডায়েট শুরু করা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। এই ডায়েট করার চেয়ে না করাই ভাল।’’
ক্র্যাশ ডায়েট করে দ্রুত ওজন ঝরলেও কেন পুষ্টিবিদেরা এই ডায়েট করতে মানা করেন?
১) এই প্রকার ডায়েটের ফলে শরীরে জলের ঘাটতি হতে পারে। এই সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম ফ্যাট খাওয়া হয়, তখন দেহকোষ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট পায় না। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই কোষ শরীরের অতিরিক্ত জল শুষে নেয়। যার ফলে গ্লাইকোজ়েন ভেঙে যায়। আর গ্লাইকোজ়েন ভাঙলেই জলশূন্যতা তৈরি হয়। ডিহাইড্রেশন হলে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব পড়ে ত্বক ও শরীরের উপর।
২) শরীরে শক্তি আসে ক্যালোরি থেকে। হঠাৎ করে কম ক্যালোরির খাবার খেলে শরীরের পেশির উপর প্রভাব পড়ে। পেশির শক্তি কমে আসে। ক্লান্তি আসে। সারা ক্ষণ ঝিমুনি ভাব এবং কাজকর্মে অনীহা দেখা দেয়।
৩) ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ অনেকখানি বেড়ে যায়। ফলে বিষণ্ণতা, ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন ইত্যাদি হতেই পারে।
৪) ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে বিপাকক্রিয়ার হার কমে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
৫) ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে দেহে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন আর মিনারেলের ঘাটতি হয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায়। চুল পড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত ঋতুচক্রের সমস্যাও দেখা যায়।