অকালে চলে গেলেন অভিনেত্রী শেফালি জ়ারিওয়ালা। প্রথম দিকে শোনা গিয়েছে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৪২-এর ‘বিগ বস’ তারকার। যদিও তার পর এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু শেফালি এর আগেও নানাবিধ জটিল রোগে ভুগতেন। এক সাক্ষাৎকারে ‘কাঁটা লাগা’ খ্যাত তারকা জানিয়েছিলেন, কৈশোর থেকে মৃগী রোগে ভুগছিলেন তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকে তাঁর এই সমস্যা শুরু হয়।
শেফালির কথায়, ‘‘মনে আছে, সে সময়ে পড়াশোনার এত চাপ ছিল যে, আমি ভীষণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগতাম। অসহনীয় চাপ ছিল, পরীক্ষায় ভাল নম্বর আনতেই হবে। মানসিক চাপ থেকেই মৃগীর কারণে খিঁচুনি হত। আসলে এই দু’টি বিষয় একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানসিক অবসাদ ও উৎকণ্ঠার রোগ থেকে খিঁচুনির রোগে আক্রান্ত হতে পারেন অনেকেই। এবং উল্টোটাও সত্যি।’’ অভিনেত্রীর কথায় জানা যায়, ক্লাসরুমে, অনুষ্ঠানের মঞ্চের পিছনে, রাস্তাঘাটে, সর্বত্র, যেখানে সেখানে খিঁচুনি হত। ফলে তাঁর আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।
‘কাঁটা লাগা’ খ্যাত তারকা শেফালি জানিয়েছিলেন, কৈশোর থেকে মৃগী রোগে ভুগছিলেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত।
মানসিক অবসাদের কারণে কি মৃগী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
স্নায়ু এবং মনোরোগ চিকিৎসক সৌভিক চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, মানসিক রোগের সঙ্গে মৃগীর সম্পর্ক রয়েছে। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অবসাদ এবং উৎকণ্ঠা অর্থাৎ অ্যাংজ়াইটির সমস্যা থাকলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। অন্য দিকে মৃগী বা খিঁচুনির সমস্যায় অনুঘটকের কাজ করে অপর্যাপ্ত ঘুম। ফলে এই দু’টির সম্পর্ক থাকতেই পারে। আবার যাঁর এক বার খিঁচুনি হয়েছে, তাঁর বার বার এটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে নানা বিষয়। তার মধ্যে একটি হল অবসাদ এবং অপর্যাপ্ত ঘুম। তবে এমন নয় যে, অবসাদ থাকলেই মৃগী থাকবে, অথবা মৃগী থাকলেই অবসাদ থাকবে। কিন্তু শেফালির ক্ষেত্রে সম্ভবত অবসাদই অনুঘটকের কাজ করেছে।’’
মানসিক রোগের সঙ্গে মৃগীর সম্পর্ক রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে শেফালির খিঁচুনির সমস্যা ধরে পড়ে। শেফালি নিজেই বলেছিলেন, ‘‘মানসিক অবসাদ ও উৎকণ্ঠার রোগ থেকে খিঁচুনির রোগে আক্রান্ত হতে পারেন অনেকেই।’’ কিন্তু শিশুদের মনোরোগ চিকিৎসক আলতাফ হোসেন বলছেন, ‘‘অবসাদের কারণে মৃগী হতে পারে না। অবশ্যই তা অনুঘটকের কাজ করতে পারে, কিন্তু কারণ এটা হতে পারে না। শেফালির কী হয়েছিল, সেটা আমরা জানি না, তবে এখানে নানাবিধ কারণ থাকতে পারে।’’ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, খিঁচুনি বা সিজ়ারের সঙ্গে সিউডো সিজ়ার বা ছদ্ম খিঁচুনির (ডিসোসিয়েটিভ ডিজ়অর্ডার/ নন এপিলেপ্টিক সিজ়ার) সম্পর্ক রয়েছে। এই রোগটির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে অবসাদ, উৎকণ্ঠা, ঝগড়াঝাটির। যদি মৃগী থাকত, তা অবসাদের জন্য হয়নি। কিন্তু মৃগী থাকলে অবসাদ হতে পারে। কিন্তু যদি শুধু খিঁচুনির সমস্যা থাকত, তা হলে সেটা অবসাদজনিত কারণেও হতে পারে।