গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা তথা সারা দেশেই প্রবল মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে ডেঙ্গি। মশাবাহিত এই রোগ প্রাণঘাতীও হয়ে ওঠে মাঝেমধ্যে, তাই ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। এর আড়ালেই যে আরও একটি রোগ দানা বেঁধে উঠেছে, সে দিকে নজর কমই। এ রোগ প্রাণঘাতী নয়। কিন্তু জ্বর-পরবর্তী গাঁটের ব্যথায় ভুগতে হয় মাসের পর মাস। সেই ২০০৫ সালে এ দেশ তো বটেই, বিশ্বের নানা দেশে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল ডেঙ্গির তুলনায় উপেক্ষিত আরও এক মশাবাহিত রোগ, যার নাম চিকুনগুনিয়া। সেই উপেক্ষার ছাপ পড়ছে রোগ নিরাময়েও। তার চিকিৎসায় খামতি থেকে গিয়েছে বিস্তর। আর সে কারণেই আবার মাথাচাড়া দিয়েছে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস। সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
বাংলায় ‘আরবোভাইরাস’ অর্থাৎ মশাবাহিত ভাইরাসদের মধ্যে তিনটের প্রকোপ বেশি— ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া আর জাপানি এনসেফালাইটিস (জে ই)। জে ই মূলত শিশুদের বেশি হয়। আর ডেঙ্গি ভাইরাস তার রূপ বদল করে আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে বহু দিনই। চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ মাঝে কমেছিল। কিন্তু এখন সে ভাইরাস ফিরে এসেছে বলে সতর্ক করেছে হু। এগুলি সবই আরএনএ ভাইরাস। যখন-তখন রূপ বদলে (জেনেটিক মিউটেশন) ফেলতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই ‘আরবোভাইরাল’ জ্বরের লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসকেরা ডেঙ্গির এনএস১ বা আইজিএম এলাইজা টেস্ট করাতে দেন। রিপোর্ট ভাল হলে রোগীকে ছেড়ে দেন। পরে যখন রোগী গাঁটের প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ভোগেন, তখন পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে ব্যথা কমানোর ওষুধ কিনে খেয়ে শরীরের সর্বনাশ ডেকে আনেন। আসলে ডেঙ্গি নয়, তলে তলে শরীরে বাসা বেঁধে থাকে চিকুনগুনিয়া।
আরও পড়ুন:
আফ্রিকায় এই ভাইরাসের খোঁজ প্রথম মিলেছিল। 'ঠাকুরমার ঝুলি'তে যেন এ ব্যামোর উল্লেখ আগেই করেছিলেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। ‘হাড় মুড়মুড়ি’ ব্যামো। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসের বাহক হল স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবোপিক্টাস মশা। মশার লালাবাহিত হয়ে মানুষের শরীরে ঢোকে। আর এদের যত রোষ হাড়ের উপরেই। অস্থিসন্ধিতে ভয়ানক ব্যথা হয় রোগটি হলে। গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা কাবু করে ফেলে। অনেকে আবার বলেন, 'অস্থিসন্ধির জ্বর'। চিকুনগুনিয়াতেও রোগী সারা শরীরে অস্বস্তি অনুভব করেন। গায়ে ও মুখে লাল র্যাশ বেরিয়ে যায়।
ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস দমনে কিন্তু কোনও ওষুধই নেই। টিকাও নেই। ভাইরাসের হামলায় যে ক্ষতি হয়, তার মেরামত আর উপসর্গের মোকাবিলা করাটাই চিকিৎসা। কিন্তু এ রোগে জ্বরের দেড়-দু’বছর বাদেও চলতে পারে ব্যথার প্রকোপ। হু জানিয়েছে, ১১৯টি দেশের প্রায় ৫৬০ কোটি মানুষ বিপদে। তাই মশাবাহিত যে কোনও রোগ থেকেই সতর্ক থাকা খুব জরুরি। দরকার শুধু রোগের সঠিক শনাক্তকরণ এবং ঠিক রোগের ঠিক চিকিৎসা। সঙ্গে অবশ্যই মশারির নিত্য ব্যবহার।