সিটি স্ক্যান থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে? গবেষকদের এমন দাবি শুনে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ারই জোগাড়। প্রতি দিন বহু মানুষ সিটি স্ক্যান করান। শরীরে কী রোগ হল, হাড় ভাঙল বা মা মচকাল— সন্দেহ হলেই সিটি স্ক্যান করতে বলে দেন চিকিৎসকেরা। তাতে শরীরের ভিতরে কী গোলমাল হচ্ছে, তার একটা স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়, যা চিকিৎসায় খুবই কাজে লাগে। সিটি স্ক্যান শরীরের ভিতরের ত্রিমাত্রিক ছবি তুলতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে স্ক্যানার মেশিনের ভিতরে ঢোকানো হয়। সেখানে একাধিক এক্স রে রশ্মি শরীরের চারদিক থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ছবি তোলে। অর্থাৎ, শরীরের ভিতরের অংশের ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি হয়। সাধারণ এক্স রে-র থেকে অনেক গভীরে গিয়ে পরীক্ষা করতে পারে সিটি স্ক্যান। সাধারণ এক্স রে-র ক্ষেত্রে একটিমাত্র রশ্মিরই বিকিরণ হয় ও শরীরের ভিতরের দ্বিমাত্রিক ছবি ওঠে। তাই সেটি অতটা ক্ষতিকারক নয়। শরীরের ভিতরের খবরাখবর জানতে সবচেয়ে সহজে করা যায় যে সিটি স্ক্যান, তা নিয়ে এমন আশঙ্কা চিন্তা বাড়িয়ে দেবে বইকি। ‘জামা ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন’ জার্নালে সিটি স্ক্যানের সঙ্গে ক্যানসারের যোগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গবেষকেরা।
কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপের নানা দেশে গবেষণা চলছে। ২০২৩ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানীরা একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছিলেন, সিটি স্ক্যানের রেডিয়েশন ক্যানসারের ঝুঁকি ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে, কোনও ব্যক্তির শরীরে যদি বার বার সিটি স্ক্যান করা হয়, তা হলে এক্স রে-র অধিক বিকিরণে শরীরের কোষের অনিয়মিত বৃদ্ধি ও বিভাজন হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই যে হবে তা নয়, তবে আশঙ্কা থেকে যাবে বলে দাবি গবেষকদের।
আরও পড়ুন:
বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও ব্রিটেনে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি শিশুর সিটি স্ক্যান ডেটা পরীক্ষা করা হয়। কয়েক বছর ধরে চলে সেই সমীক্ষা। যে শিশুদের বারংবার সিটি স্ক্যান হয়েছে, তাদের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে পরীক্ষা চলে। তাতে দেখা যায়, খুব উচ্চ এক্স রে বিকিরণ বার বার শরীরে প্রবেশ করলে তার থেকে রক্তের ক্যানসার বা লিউকেমিয়া ও ব্রেন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে এই নিয়ে গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে।
সিটি স্ক্যান ঠিক কী ভাবে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি গবেষকেরা। তবে তাঁদের অনুমান, এক্স রে বিকিরণ বেশি মাত্রায় শরীরে গেলে কোষের ডিএনএ-র মিউটেশন (রাসায়নিক বদল) ঘটাতে পারে। ফলে কোষের বৃদ্ধি অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। ছোটদের ক্ষেত্রে কোষের বৃদ্ধি দ্রুত হয়, তাই সে ক্ষেত্রে ওই বিকিরণের মাত্রা বেশি হলে তা ডিএনএ-র গঠনবিন্যাসেও বদল আনতে পারে। ফলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। এর বদলে এমআরআই বা আলট্রাসাউন্ডকে তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ বলছেন গবেষকেরা।
তবে সিটি স্ক্যান থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে সে মানতে রাজি নন অনেক বিজ্ঞানীই। ‘আমেরিকান কলেজ অফ রেডিয়োলজি’র গবেষকেরা দাবি করেছেন, সিটি স্ক্যানের সঙ্গে ক্যানসারের সরাসরি যোগ নেই। শরীরে আরও অন্যান্য অসুখ থাকলে এবং নির্দিষ্ট কিছু জিন থাকলে তবে বিকিরণের প্রভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সকলেরই যে হবে, তা নয়। তাই এখনই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।