Advertisement
E-Paper

পার্কিনসন্সের উৎস পেট? স্নায়ু বেয়ে তরতরিয়ে ওঠে মস্তিষ্কে, গবেষণায় আর কী বুঝলেন বিজ্ঞানীরা?

পার্কিনসন্সের মতো রোগ গোড়াতেই মস্তিষ্কে চেপে বসে না। ধীরে ধীরে তার খেলা দেখায়। এই রোগের উৎস স্নায়ু নয়, বরং অন্ত্র?

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:০২
New study finds Parkinson’s may actually originate in the gut

পেটের গোলমালই পার্কিনসন্সের পূর্বলক্ষণ? ছবি: ফ্রিপিক।

পার্কিনসন্স জটিল স্নায়ুর রোগ, সে তো ঠিক আছে। কিন্তু কে বলেছে যে মস্তিষ্কেই প্রথম নাড়া দেয় এই অসুখ? এত দিনের অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা, গবেষণাকে নস্যাৎ করেছেন ইজরায়েলের একদল স্নায়ু চিকিৎসক। গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, পার্কিনসন্সের মতো রোগ গোড়াতেই মস্তিষ্কে চেপে বসে না। ধীরে ধীরে তার খেলা দেখায়। এই রোগের উৎস স্নায়ু নয়, বরং অন্ত্র। অবাক লাগলেও সত্যি। পেটেই প্রথম হানা দেয় পার্কিনসন্স। সেখানেই দীর্ঘ সময় ঘাপটি মেরে থাকে। তার পর ধীরে ধীরে বিশেষ একরকম প্রোটিনে ভর করে স্নায়ু বেয়ে বেয়ে লাফিয়ে ওঠে মস্তিষ্কে।

‘দ্য হার্ভার্ড গ্যাজেট’ বিজ্ঞান পত্রিকায় পার্কিনসন্স রোগ নিয়ে ইজরায়েলের চিকিৎসকদের এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রটিতে চিকিৎসকেরা আরও অনেক এমন তথ্য লিখেছেন যা চমকে দেওয়ারই মতো। মুখ্য গবেষক ও চিকিৎসক তৃষা এস পাসরিচার দাবি, পার্কিনসন্স কিন্তু তার অস্তিত্বের জানান দেয় আগেই। পেটের গোলমাল দিয়ে শুরুটা হয়। তার পর ক্রমশ হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস-অম্বল হয়ে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, অর্থাৎ কিছু খেলেই গলা-বুক জ্বালা। এই হল রোগের উপসর্গ। তৃষার কথায়, পেটের সঙ্গে যে পার্কিনসন্সের সম্পর্ক থাকতে পারে, তার বিন্দুমাত্র আন্দাজ না থাকায়, সে নিয়ে মাথাও ঘামান না বেশির ভাগই। চিকিৎসায় পেটের রোগ না সারলেও ওষুধ খেয়ে যেতে থাকেন। ফলে একটা সময় গিয়ে এই রোগই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। স্নায়ু বেয়ে সোজা চলে যায় মস্তিষ্কে। তার পরই মনের রোগের শুরু।

পার্কিনসন্সের সঙ্গে পেট যে কতটা জড়িত তা বোঝাতে গিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও এক স্নায়ু চিকিৎসক প্রণব হোন্নাভারা শ্রীনিবাসন জানিয়েছেন, ‘আলফা-সিনুক্লিন’ নামে এক ধরনের প্রোটিন আছে যা পার্কিনসন্সের কারণ। এই প্রোটিন অন্ত্রেই তৈরি হয় এবং শরীরের ভেগাস স্নায়ু দিয়ে বাহিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছয়। এই প্রোটিনের হাত ধরেই অন্ত্রে প্রথম পার্কিনসন্সের জন্ম হয়। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন গ্যাস-অম্বলের সমস্যা মারাত্মক বেড়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা সারতে চায় না, আলসারের মতো ক্ষত দেখা দেয়, লিভারের জটিল রোগ হতে শুরু করে এবং খাদ্যনালিতে সংক্রমণও দেখা দেয়। গবেষক জানাচ্ছেন, বেশ কিছু রোগীদের পার্কিনসন্স চিহ্নিত হওয়ার বছরখানেক আগে থেকে এই ধরনের সমস্যা দেখা গিয়েছে। মস্তিষ্ক প্রভাবিত হওয়ার আগে তাঁদের খাদ্যনালি ও পাকস্থলী পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গিয়েছে।

গবেষকদের দাবি, অন্ত্রের ক্ষতি যদি বেশি মাত্রায় হয়, তা হলে সেখানকার স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্নায়ু মারফত সঙ্কেত মস্তিষ্কে পৌঁছতে পারে না। মানসিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। সেখান থেকেই মস্তিষ্কে প্রভাব খাটাতে শুরু করে পার্কিনসন্স। তখন স্মৃতি লোপ পেতে শুরু করে, হাঁটাচলার গতি কমে যায়, হাত-পা কাঁপতে শুরু করে, ঘন ঘন মেজাজ বদলে যেতে থাকে। হাতের লেখা ও কথা জড়িয়ে যায়। চোখের সামনে হঠাৎ ভেসে ওঠে নানা রকম ছবি। ভাবনাচিন্তাও গুলিয়ে যেতে থাকে। এই রোগে আক্রান্তদের অনেকেই ক্রমে স্বাভাবিক কাজ করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেন। পোশাক পরিবর্তন থেকে বাথরুম যাওয়া— সব কিছুর জন্যই অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাঁরা।

তাই অন্ত্রের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হতে শুরু করলেই সঠিক পরীক্ষা করা উচিত বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এই গবেষণার ভাল দিক হল, রোগের উৎস আগেই চিহ্নিত করা। অন্ত্রে রোগের বীজ থাকাকালীনই যদি চিকিৎসা শুরু হয়, তা হলে আর স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। কারণ এক বার মস্তিষ্কে হানা দিলে তখন এই রোগ সারানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

Nerve trouble Parkinson's Gut Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy