হার্ট বা লিভার, অনেক ক্ষেত্রেই বিপত্তি ঘটায় মাত্রাছাড়া লিপিড বা চর্বি। আর রক্তে সেই লিপিডের পরিমাণ কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয় জিন। এমনই দাবি হার্ভার্ড স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকদের। ডিএনএ-র বিন্যাস দেখেই নাকি ধরা যাবে হৃদ্রোগের ঝুঁকি আছে কি না। ‘দ্য সায়েন্স’ জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে শর্করা মাত্রা বেশি বা যাঁদের স্থুলতার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এমনিতেই হৃদ্রোগের আশঙ্কা বেশি। হার্ট অ্যাটাক যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময় হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন’ –এ আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিই এর কারণ। আর কোলেস্টেরল বাড়ছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ওজন ও কম কায়িক পরিশ্রমের জন্য।
গবেষণার শুরু বছর কয়েক আগে। হার্ভার্ডের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, শরীরের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি জিনের প্রভাবে লিপিড-মাত্রা সব সময়েই স্থিতিশীল থাকে। তাতে তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। দেখা গিয়েছে, ‘এলডিএলআর’ জিনটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্য রাখতে পারে। জিনে সামান্য বদল এলেই রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে উল্টোটাও হয়। এই জিনের বিন্যাস যদি পরীক্ষা করা যায়, তা হলে রক্তে কোলেস্টেরল কতটা বাড়ছে বা কমছে, তা বোঝা যাবে। এতে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কতটা, তা-ও ধরা যাবে।
আরও পড়ুন:
শুধু হৃৎপিণ্ড নয়, লিভারের উপরেও ওই জিনের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। ওই জিন লিভারের লিপিডের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অতিরিক্ত লিপিড জমে যাওয়ার ফলে লিভারের যে-সব রোগ হয়, ওই জিন সেগুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা। তাঁরা মনে করছেন, পরবর্তী কালে জিনটিকে বিশ্লেষণ করে লিপিড-মাত্রা কমানোর প্রতিষেধক তৈরি করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
তবে যে কোনও জিনগত পরীক্ষাই সময়সাপেক্ষ। তার ফলাফল নিশ্চিত করতে অনেকটাই সময় লেগে যায়। জিনের পরীক্ষা করে হার্টের অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখার পদ্ধতি কতটা জটিল ও সময়সাপেক্ষ হবে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করছেন গবেষকেরা। তবে পরীক্ষাটি যদি সফল হয়, তা হলে সহজে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে বড় পদক্ষেপ করা যাবে বলেও আশা রাখছেন গবেষকেরা।