বর্ষায় বা ঋতুপরিবর্তনের সময় নানা ধরনের রোগ ছড়ায়। জ্বরজালা, হাঁচি-কাশি লেগেই থাকে। রোগ থেকে বাঁচতে আবহাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে বলেন অনেকে। কিন্তু বলিউডের তারকা পুষ্টিবিদ পূজা মখিজা বলছেন, ‘‘জ্বর-সর্দি-কাশি-ঠান্ডা লাগার জন্য শুধু আবহাওয়া নয়, পেটও দায়ী। বরং বলা ভাল, ৭০ ভাগ দায়ী পেটই। কারণ হজমের বিভিন্ন ধাপের সঙ্গে জুড়ে থাকা অন্ত্রই ওই সমস্ত রোগের জীবাণুকে শরীরে প্রবেশের অনুমতি দেয়!’’
অন্ত্র কোনটি?
খাবার খাওয়ার পরে তা পাকস্থলী থেকে প্রথমে ক্ষুদ্রান্ত্রে যায়। তার পরে যায় বৃহদন্ত্রে। এই ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্র মিলিয়েই অন্ত্র। যা খাবার থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে রক্তে পাঠায় আবার খাবার হজম করতেও সাহায্য করে। এই অন্ত্রকেই ইংরেজিতে বলা ‘গাট’। বিশ্ব জুড়ে যে গাট হেল্থ নিয়ে হইহই পড়ে গিয়েছে, তা এই অন্ত্রই। শরীরের ভাল থাকা মন্দ থাকায় যার অসীম প্রভাব বলে মনে করেন চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা। আর পূজা বলছেন, ওই অন্ত্র বা গাটই অধিকাংশ রোগ এমনকি, আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ের রোগব্যাধির জন্যও দায়ী।
অন্ত্রেই লুকিয়ে শক্তি!
এক সাক্ষাৎকারে পূজা জানাচ্ছেন, অন্ত্রের অন্দরেই লুকিয়ে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ শক্তি। তার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের যে ইমুউন সেল অর্থাৎ যে সমস্ত কোষ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, তার ৭০ শতাংশই রয়েছে অন্ত্রে।’’ অর্থাৎ অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে সব বৃথা! আর পূজা জানাচ্ছেন, অন্ত্র ভাল না থাকলে যতই ভিটামিন বা খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খান, তার উপকার পাবে না শরীর। এমনকি, শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি, জ়িঙ্ক সমৃদ্ধ যে বিকল্প ওষুধ খান অনেকে, কাজে দেবে না তা-ও।
আরও পড়ুন:
তবে কী করা উচিত?
বর্ষায়, শীতে বা ঋতুপরিবর্তনের সময় রোগের প্রকোপ কাটাতে অনেক পরিবারেই কাঁচা হলুদ বা হলুদ দেওয়া দুধ, কাড়া খাওয়ার প্রচলন ছিল এবং এখনও বহু পরিবারে তা মানা হয়। ওষুধ খাওয়ার বদলে সুস্বাস্থ্য বজায় রেখেই রোগ থেকে দূরে থাকা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। পূজা বলছেন, ‘‘বিষয়টি একেবারেই ভুল নয়। বরং বেশি কার্যকরী। তবে রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে আরও ভাল রাখার জন্য সবার আগে অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলিকে ভাল রাখতে হবে। তাদেরকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।’’
ভাল ব্যাক্টেরিয়ার শক্তি বৃদ্ধি করবেন কী ভাবে?
পেটের ভাল ব্যাক্টেরিয়ার শক্তি বাড়িয়ে নিতে চাইলে খাওয়াদাওয়ার সময় কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ মখিজা।
১। কাঁচা এবং ঠান্ডা খাবার না খেয়ে উষ্ণ খাবার খেতে হবে।
২। জোয়ান, জিরে এবং মৌরী ভেজানো জল অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
৩। এক চা চামচ ভাতের কাঞ্জি নিয়মিত খেতে পারেন।
৪। বাড়িতে তৈরি আচারও অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে ভাল রাখে।
৫। টানা এক সপ্তাহ যষ্টিমধু এবং ত্রিফলার চা খেতে পারেন।