পেঁপে কাঁচা হোক বা পাকা— তার গুণের শেষ নেই। হজমে সহায়ক, লিভার ভাল রাখে, পুষ্টিকর। তবে পেঁপে বা তার বীজের পুষ্টিগুণ নিয়ে চর্চা হলেও, আলোচনার আড়ালেই রয়ে গিয়েছে এই গাছের পাতা। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পেঁপে পাতাও কম উপকারী নয়। রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি থেকে শর্করা নিয়ন্ত্রণে, লিভার ভাল রাখতে সাহায্য করে পেঁপে গাছের পাতা। পেঁপের যা যা গুণ তার অনেকটাই মেলে পেঁপের পাতাতেও।
কী এর উপকারিতা
• ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো অসুখে রক্তের প্লেটলেট নেমে যায়। অতীতে গবেষণায় উঠে এসেছে রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক পেঁপে পাতা। পেঁপে পাতার রস অস্থিমজ্জাকে উজ্জীবিত করে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তা ছাড়া, ভিটামিন এ, সি এবং ই থাকায় পেঁপের পাতা রোগ প্রতিরোধেও সক্ষম।
• পেঁপে পাতায় প্যাপাইন এবং ক্যামোপ্যাপাইন নামে দু’রকম উৎসেচক মেলে। যা প্রোটিন খাবার ভাঙতে বা বিপাকে সাহায্য করে। নিয়ম করে পেঁপে পাতা খাওয়া হলে পেটের স্বাস্থ্যে যেমন ভাল থাকবে তেমনই তা লিভার থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দিতেও সক্ষম। লিভারের অসুখে পেঁপে পাতার রস টোটকা হিসাবে খাওয়ার চল রয়েছে।
• ইনসুলিন সেনসিটিভিটি নিয়ন্ত্রণে করে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতেও পেঁপে পাতা সাহায্য করে। ফাইবার, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হার্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে। ত্বকের যত্নেও পেঁপের রস মাখার চল আছে। প্রদাহ কমাতেও তা সহায়ক।
পেঁপে পাতা কী ভাবে ডায়েটে জুড়তে পারেন?
রস: পেঁপে পাতা কেটে ধুয়ে নিন। মিক্সারে ঘুরিয়ে বা হামানদিস্তায় থেঁতো করে রস বার করে খেতে পারেন। তবে উপকারী বলেই তা অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। ২-৩ চামচের মতো রস জলে গুলে খেতে পারেন।
চা: নামে চা হলেও, এতে চা পাতার ব্যবহার হয় না। পেঁপে পাতা কুচিয়ে ধুয়ে নিন। জলে তা ফেলে দিয়ে ফুটতে দিন। আঁচ কমিয়ে ফোটান ১০-১৫ মিনিট। তার পর তা ছেঁকে চায়ের মতো পান করুন। দিনে একবারই যথেষ্ট।
স্টুয়ে মেশান: পেঁপে দিয়ে মাংসের স্টু যেমন রান্না হয়, পেঁপে পাতাও সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। তেলে গোলমরিচ, আদা-রসুন থেঁতো করে দিন। পেঁয়াজ কুচিয়ে হালকা ভেজে তার সঙ্গে দিয়ে দিন আলু, পেঁপে, গাজর। যোগ করুন পেঁপে পাতা। মাংস দিয়ে অল্প নাড়িয়ে চাড়িয়ে নিয়ে বেশি করে জল দিন। স্বাদমতো নুন দিয়ে প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে নিন।
শাক: পেঁপে পাতা শাক হিসাবেও খাওয়া যায়। পাতা ধুয়ে কুচিয়ে নিন। কড়াইয়ে শুকনো লঙ্কা, রসুন ফোড়ন দিনে শাক নাড়াচাড়া করে ঢাকা দিয়ে সেদ্ধ হতে দিন। জল বেরিয়ে যাবে। কিছুক্ষণে পাতা সেদ্ধও হয়ে যাবে। নুন, হলুদ দিয়ে ভেজে নিন। আঁচ কমিয়ে রান্না করলে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যাবে।
সব্জি সেদ্ধ: পছন্দের সব্জির সঙ্গে পেঁপে পাতাও সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। কিংবা সব্জি এবং পেঁপে পাতা নুন-হলুদ দিয়ে ভাপিয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল দিয়ে রসুন কুচি ফোড়ন দিন। সব্জি এবং ভাপানো পেঁপে পাতা সাঁতলে নিন।
রোজের ডায়েটে পেঁপেপাতা জুড়তে হলে পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বা বিশেষ কোনও অসুখ থাকলেও এটি খাওয়া চলে না। এই ব্যাপারে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া ভাল। উপকারী হলেও পরিমিত খাওয়াই শ্রেয়।