Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
new born baby

সন্তান যেন থাকে নিরাপদে

সদ্যোজাতদের সাধারণত ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন হতে বেশি দেখা যায়। স্ট্রেপটোকক্কাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ই কোলাই এই ধরনের ব্যাকটিরিয়া আক্রমণ করে থাকে।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৪৭
Share: Save:

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় থেকেই সতর্ক থাকতে হবে মা-বাবাকে। কারণ সদ্যোজাত শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে খুব সহজেই তাদের ব্যাকটিরিয়াল ও ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের দিকে চোখ রাখলেই এ রকম অনেক উদাহরণ মিলবে। তবে তেমনটা যাতে না হয়, গোড়া থেকেই সচেতন থাকতে হবে সে বিষয়ে।

সদ্যোজাতদের ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেশি

ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, “ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত ধরা হয় সদ্যোজাত। এ সময়ে ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সে ভাবে তৈরি হয় না। মায়ের কাছ থেকে যে সব রোগের অ্যান্টিবডি পায়, সেই রোগগুলো থেকে সুরক্ষা পায়। তাই হাইজিন বজায় রাখতে সদ্যোজাত বাচ্চাকে ধরার আগে দু’মিনিট ধরে কনুই পর্যন্ত ভাল করে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত।”

আমরা যে বাইরের বিভিন্ন জিনিস ধরছি, তা থেকে অনেক মাইক্রোবস আসতে পারে। কিন্তু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায়, তা আমাদের তেমন ক্ষতি করতে পারে না। “সেই মাইক্রোবসই যখন আমাদের কাছ থেকে সদ্যোজাতের কাছে যাচ্ছে, তার কিন্তু ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকছে,” বলে জানালেন ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী।

কী ধরনের ইনফেকশন হতে পারে?

সদ্যোজাতদের সাধারণত ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন হতে বেশি দেখা যায়। স্ট্রেপটোকক্কাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ই কোলাই ... এই ধরনের ব্যাকটিরিয়া আক্রমণ করে থাকে। “তখন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। তবে সদ্যোজাতদের মুশকিল হল ওদের ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। তখন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। এতে কাজ হয় দ্রুত। কারণ বড়দের শরীরে কোনও ইনফেকশন হলে, তা লোকালাইজ়ড থাকে। কিন্তু সদ্যোজাতদের সারা শরীরে সেই ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে। রক্তের মাধ্যমে তা মস্তিষ্কেও চলে যেতে পারে। মেনিনজাইটিস পর্যন্ত হতে পারে। তখন ২১ দিন পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়।”

যে সব লক্ষণে নজর রাখবেন

*বাচ্চা ভাল করে টেনে দুধ খাচ্ছে কি না।

*অনেক সময়ে বাচ্চা ঝিমিয়ে থাকতে পারে।

*ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে।

*জ্বর আসতেও পারে আবার নেমেও যেতে পারে।

*ডায়েরিয়ার লক্ষণ থাকতে পারে।

*ব্লাড সুগার লেভেল নেমে যেতে পারে। খালি চোখে বোঝা কঠিন। তবে সে সময়ে বাচ্চা ঝিমিয়ে থাকে। তার হাত-পা শিথিল হয়ে যায়।

ডা. রায়চৌধুরী বললেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুধ টেনে খাওয়ার অনীহার কথাই শোনা যায়। তাই এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে একটু সচেতন হতে হবে। যদি সেটা বাড়তে থাকে, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা

বাচ্চাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে ব্লাড কালচার করতে পাঠানো হয়। ব্লাড কালচারের রিপোর্ট দেখে বোঝা যায় যে, তাকে কোন জীবাণু আক্রমণ করেছে। সেই অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। তবে এই প্রসঙ্গে একটা দিক উল্লেখ করলেন ডা. রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, “ব্লাড কালচার রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন সময় লাগে। কিন্তু তত দিন বিনা চিকিৎসায় তো বাচ্চাকে ফেলে রাখা যাবে না। তাই সে সময়ে সদ্যোজাত যে হাসপাতালে হয়েছে, সেখানে কী ধরনের ইনফেকশন হচ্ছে বাচ্চাদের, সে দিক বিবেচনা করে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শুরু করা হয়।” এর পরে রিপোর্ট এলে প্রয়োজন মতো অ্যান্টিবায়োটিক পাল্টানো হতে পারে।

বাচ্চাদের নিওনেটাল জন্ডিস হতেও দেখা যায়। বেশির ভাগ সদ্যোজাতের মধ্যেই জন্ডিস হওয়ার প্রবণতা থাকে, কিন্তু তা নিজে থেকে সেরেও যায়। “আমাদের শরীরের রেড ব্লাড সেল ১২০ দিন মতো বেঁচে থাকে। কিন্তু সদ্যোজাতদের সেটা ৮০ দিন পর্যন্ত থাকে। তার পর রক্ত ভেঙে তা থেকে বিলিরুবিন উৎপাদন বেশি হয়। আমাদের শরীর থেকে বিলিরুবিন মেটাবলিজ়‌মের মাধ্যমে বার করে দেয় লিভার। কিন্তু সদ্যোজাতদের লিভার এত পরিণত হয় না যে, এই পরিমাণ বিলিরুবিনের লোড নিতে পারবে। ফলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ওদের মধ্যে জন্ডিসের প্রবণতা বাড়ে। এ ছাড়াও সিকল সেল অ্যানিমিয়া, হাইপোথাইরয়েডিজ়ম, সেপসিস হলেও জন্ডিস হতে পারে। আর এইচ ইনকমপ্যাটিবিলিটির জন্য জন্ডিস হতে পারে। অর্থাৎ মায়ের ব্লাড গ্রুপ এ পজ়িটিভ আর সন্তানের ব্লাডগ্রুপ এ নেগেটিভ, সে ক্ষেত্রেও জন্ডিস হতে পারে।” জন্ডিসের চিকিৎসায় ফোটোথেরাপি দিতে হয়। তখন নির্দিষ্ট ওয়েভলেংথের আলোয় নির্দিষ্ট দূরত্বে সদ্যোজাতকে রাখা হয়।

যে সব বিষয়ে সচেতনতা জরুরি

*সদ্যোজাতের এক থেকে দেড় মাস বয়স হওয়ার আগে তাকে দেখতে না যাওয়াই ভাল। আর নিজের গাড়িতে গেলেও অবশ্যই ভাল করে হাত ধুয়ে বাচ্চাকে কোলে নেবেন। ওদের মুখে হাত দিয়ে আদর না করাই শ্রেয়।

*বাড়িতে আর একটি ছোট বাচ্চা থাকলে তার কাছ থেকেও সাবধানে রাখতে হবে শিশুটিকে। অনেক বাড়িতেই হয়তো দু’টি সন্তান। বড় সন্তানের বয়স চার বা পাঁচ। কিন্তু তারও তো বোঝার বয়স হয়নি। সে হয়তো বাইরের হাতেই ছোট ভাই বা বোনকে ধরতে গেল অথবা বড় বাচ্চাটির কোনও সংক্রামক রোগ বা সর্দি কাশি হলে তা থেকেও কিন্তু সদ্যোজাত শিশুটির সংক্রমণ হতে পারে। তাই এ বিষয়ে খুব সাবধান হতে হবে।

*সদ্যোজাত শিশুকে হাসপাতাল বা ডাক্তারখানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে যেখানে বসছেন, সে জায়গাও পরিষ্কার কি না দেখে বসুন।

*সারাদিন সন্তানের দেখভালের কাজ যাঁরা করবেন, তাঁদের পরিচ্ছন্নতা মনিটর করা জরুরি।

ছোটখাটো এই বিষয়গুলোর দিকে সচেতন হলেই এড়ানো যাবে অনেক বিপদ। তবে সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি হয়ে যাবে। তাই এ নিয়ে আবার অহেতুক বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না।

নবনীতা দত্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

new born baby Bacterial Diseases child care
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE