মেঘবরণ চুল না থাক, তা বলে এক মাথা ঘন চুল তো আশা করাই যায়! কিন্তু মাথার মাঝে এ দিক সে দিক ফাঁকা অংশ কিন্তু মোটেও মানানসই নয়। আবার চুল কমতে কমতে এক এক জায়গা কেশশূন্য হয়ে যাওয়াও কাঙ্ক্ষিত নয়। মাথাজোড়া টাক নিয়ে দুঃখ অনেক ছেলেরই। তাই এত চুল প্রতিস্থাপন পদ্ধতির রমরমা। টাকে চুল গজাতে নানা রকম ওষুধ, জেল, ক্রিমের ব্যবহারও চলে। তাতেও যে লাভ খুব একটা হয়, তা নয়। মাথাজোড়া টাক থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী, তা নিয়ে চর্চা বিশ্ব জুড়েই। মনে মনে অনেকেই ভাবেন যে, এমন যদি কোনও ওষুধ থাকত, যা খেলে টাক পড়বেই না বা টাকে নতুন চুল গজাবে, তা হলে বেশ হত। তেমন ওষুধই নাকি আসতে চলেছে বাজারে।
টাক নিয়ে চিন্তার দিন শেষ হতে চলেছে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা নতুন একটি ওষুধ তৈরি করেছেন, যার নাম পিপি৪০৫। এই ওষুধটি চুল পড়ার সমস্যা রোধ করতে পারবে বলেই দাবি। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ওষুধটি বিশেষ এক হরমোন ‘ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন’-এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে টাক পড়ার সমস্যা রোধ করতে পারবে। এই হরমোনই যত নষ্টের গোড়া। এটি বেশি পরিমাণে ক্ষরিত হলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়। ফলে মাথার চারদিক থেকে চুল উঠতে শুরু করে। অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটার কারণও এই হরমোনই।
টাকের ব্যাপারে বুঝতে গেলে চুলের গোড়ার কথা একটু জানতে হবে। জন্মের সময় মানুষের মাথার ত্বকে প্রায় এক লক্ষ চুলের গোড়া বা হেয়ার ফলিকল থাকে। একটি চুলের জীবনচক্রের তিনটি দশা। প্রথম তিন বছর হল অ্যানাজেন দশা। নতুন চুল বেড়ে ওঠার সময়। এর পরে ২-৪ সপ্তাহের একটা স্বল্পস্থায়ী পর্যায় হল ক্যাটাজেন। এর পরে ৩-৪ মাসের টেলোজেন দশা শেষ করে চুল পড়ে যায়। আবার নতুন চক্রের চুল এসে শূন্যস্থান পূরণ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যানাজেন দশার সময় কমে এবং দু’টি চক্রের মধ্যবর্তী সময় বাড়ে। তাই এক জন প্রৌঢ় কখনও কিশোর বয়সের মতো চুলের ঘনত্ব আশা করতে পারেন না। কিন্তু যদি বয়সের আগেই এবং তেমন কোনও শারীরিক ব্যাধি ছাড়াই চুল পড়তে শুরু করে, তখন বিষয়টি চিন্তার হয়ে দাঁড়ায়। অস্বাভাবিক চুল পড়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় অ্যালোপেসিয়া বলে, যা এখন কমবয়সিদেরও মাথাব্যথার কারণ।
আরও পড়ুন:
সাধারণত দেখা গিয়েছে অ্যান্ড্রোজেন, ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন হরমোনের তারতম্যে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে। প্রথমে চুল উঠে কপালের দু’ধার প্রশস্ত হয়ে যায়। তার পরে মাথার উপরের দিকের চুল উঠে টাক পড়তে থাকে। একে বলে অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া। একে রোধ করার জন্য মিনোক্সিডিল ও ফেনেস্টেরাইল নামে দু’ধরনের ওষুধ আছে। কিন্তু এই ওষুধগুলি বেশি খেলে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। মুখে ও সারা শরীরের লোমের আধিক্য, যৌন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই গবেষকেরা জানাচ্ছেন, পিপি৪০৫ ওষুধটি হরমোনের তারতম্য রোধ করবে কিন্তু কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হবে না। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওষুধটির প্রভাবে ৮-৯ সপ্তাহের মধ্যে নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে ওষুধটি নিয়ে গবেষণা চলছে। বহু মানুষের উপর পরীক্ষায় ভাল ফল দেখা গেলে তবেই সেটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে।