নিয়মিত জিমে ঘাম ঝরাচ্ছেন অভিনেতা রণজয় বিষ্ণু। তাঁর এই সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব দিতে চান ফিটনেস প্রশিক্ষক অতনু পালকে। জীবনে প্রথম বার অতনুর মতো প্রশিক্ষক পেয়ে আপ্লুত রণজয়। কারণ, বিধিনিষেধ, কড়াকড়ির বালাই নেই।
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
ওজন বেড়ে হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৯৮ কিলোগ্রাম। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা হলেও ওজন মাত্রা ছাড়াচ্ছিল। শরীরের উপরের অংশ ভারী হয়ে যাওয়ার ফলে দুই হাঁটুতে যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসক বলেন, অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তিন মাসের মধ্যে ওজন কমাতে হত। মাত্র আড়াই মাসে ৮৫ কেজিতে নেমে এসেছে রণজয় বিষ্ণুর ওজন। আর দুই কেজি কমাতে পারলেই লক্ষ্যভেদ করে ফেলবেন তিনি।
০২১৫
নিয়মিত জিমে ঘাম ঝরাচ্ছেন নায়ক। তবে রণজয় তাঁর এই সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব দিতে চান ফিটনেস প্রশিক্ষক অতনু পালকে। জীবনে প্রথম বার অতনুর মতো প্রশিক্ষক পেয়ে আপ্লুত রণজয়। কারণ, বিধিনিষেধ, কড়াকড়ির বালাই নেই। যা মন চায়, খাওয়া যায়। কেতাদুরস্ত সব্জি ও ফলের বদলে স্থানীয় সব্জি ও ফল খাওয়া যায়। প্রোটিন শেক, ওয়ে প্রোটিনের পিছনেও খরচ করতে হয় না।
০৩১৫
এই প্রস্তুতি কি পুজোর জন্য? না, নিজেকে ফিট রাখার জন্য এবং কাজের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে রণজয়কে। তাঁর প্রশিক্ষকের মতে, জিমে এসে অনেকেই বলেন, পুজো আসছে বলে ফিট হতে চান, কিন্তু সারা বছরই যে এই তাগিদ থাকা দরকার, সেটা কেউ বোঝে না। সমস্যা হল, সকলে চটজলদি সমাধান চায়। ধৈর্যের বড়ই অভাব। আর রণজয় ঠিক এই ধৈর্য পরীক্ষাতেই জিতে গিয়েছেন।
০৪১৫
কিন্তু বিধিনিষেধ ছাড়া ওজন কমানো, অ্যাব্স তৈরি করা, পেশি মজবুত করা কি সম্ভব? রণজয় জানালেন, গত তিন মাসেই সবচেয়ে বেশি বিয়েবাড়ি, অনুষ্ঠানবাড়ির নিমন্ত্রণ ছিল তাঁর। তা ছাড়া শুটেও এলাহি খাওয়াদাওয়া হয়েছে এর মাঝেই। তা হলে কী ভাবে ১৩ কেজি ওজন ঝরিয়ে ফেললেন অভিনেতা? তাঁর রুটিনই বা কী ছিল?
০৫১৫
সকালে উঠে ২-৩ গ্লাস ঈষদুষ্ণ জল পান। তার পর ঘি দিয়ে কালো কফি। জিমে গিয়ে ঘণ্টাখানেক কসরত করে খাবার প্যাক করে শুটে চলে যান। প্রথমেই এক বাটি তরমুজ খান। তার পর দুপুরে সেটে বসেই ভাত, তরকারি, মাছ বা মাংসের ঝোল। বাড়িতে সাধারণ যা রান্নাবান্না হয়, সে সবই খেতে পারেন রণজয়। রাতেও শুটিংয়ের মাঝেই ১০টা নাগাদ নৈশভোজ সেরে ফেলেন।
০৬১৫
রণজয়ের কথায়, ‘‘আগে বরং আমি নুন ছাড়া মাছ সেদ্ধ, মাংস সেদ্ধ খেতাম। এখন বাড়িতে সাধারণ ভাবে রান্না করা খাবারই খাই। বাইরের খাবার খেতে ইচ্ছে করলেও খাই। তবে হ্যাঁ, পরিমাণ মেপে খেতে হয়। কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়।’’
০৭১৫
অতনু বলছেন, ‘‘আসলে হিসেবটা খুব সহজ। যিনি ভয়ের চোটে পছন্দের খাবার খান না, তাঁর মাথায় সর্ব ক্ষণের চিন্তা। তাঁর কর্টিসল হরমোনের মাত্রাও তাই বেড়ে যায়। যিনি সব কিছু থেকে নিজেকে বঞ্চিত রেখেছেন, তিনি যদি এক দিন সে খাবার পান, তা হলে আর পরিমিতিবোধের ধার ধারেন না। কিন্তু শরীর ও মনকে এত কষ্ট দিয়ে কী লাভ? মানুষ তো শরীরচর্চা করতে এসেছেন ভাল থাকতে। এ ভাবে কি ভাল থাকা যায়?’’
০৮১৫
রণজয়ের কথায়, ‘‘আগে যখন অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে নিজেকে একেবারে সরিয়ে রেখেছিলাম, তখন ইচ্ছেটাও বেশি ছিল। কিন্তু এখন ওই কড়াকড়ি কমে গিয়েছে বলেই বোধ হয় আর ওই তীব্র ইচ্ছেটাও জাগে না। বরং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতেই ইচ্ছে করে বেশির ভাগ সময়ে। এমনকি, খাবারের পরিমাণও কমে গিয়েছে। অল্পতে পেট ভরে যাচ্ছে। বাইরের খাবার খেয়ে ফেললে অতনুদা বলে, পর দিন বেশি করে হেঁটে নিতে।’’
০৯১৫
অতিরিক্ত শরীরচর্চাও যে স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ, সে কথা বার বার মনে করিয়ে দিলেন অতনু। কিন্তু কখন ও কী ভাবে বোঝা যাবে যে, অতিরিক্ত পরিশ্রম হয়ে যাচ্ছে? প্রশিক্ষক বলছেন, ‘‘খুব সহজ। জিমে শরীরচর্চা করে আনন্দে, ঝরঝরে মন ও শরীর নিয়ে বেরোচ্ছেন, না কি ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত হয়ে? নিজেকে অতিরিক্ত চাপ দিলে সেটা মোটেও শরীরের জন্য ভাল হতে পারে না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রামে পেশিগুলি গড়তে পারে। সেই সময়টুকু না দিলে হবে না।’’
১০১৫
জিমে রোজ ভারোত্তোলনের নানাবিধ ব্যায়াম করতে হয় রণজয়কে। বক্ষস্থল ও কাঁধের পেশি মজবুত করতে ১৫ কেজি, ২২ কেজির ডাম্বেল তোলেন তিনি। তার পর কাঁধকে পোক্ত করতে কেব্ল ফ্রন্ট রেস মেশিন ব্যবহার করেন। পাওয়ার র্যাকেও ৫০ কেজির ভারোত্তোলন করেন রণজয়। পায়ের পেশি মজবুত করার জন্য লেগ কার্ল মেশিন, হ্যাক স্কোয়াট মেশিনের ব্যবহার করেন রোজ।
১১১৫
স্ট্রেচিংয়ের জন্য রাবারের ব্যান্ডের সাহায্য নিয়ে বা অ্যাব্সের জন্য ইনক্লাইন বেঞ্চ, পুলআপ বারের প্রয়োজন পড়ে রণজয়ের। তা ছাড়া পাঞ্চিং ব্যাগের সাহায্যে শক্তিবৃদ্ধির ব্যায়ামগুলিও করতে হয়। তা ছাড়া ফ্রি হ্যান্ডের জন্য জিমের যে কোনও অংশই উপযুক্ত। কিন্তু জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করতে হলে প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, জানাচ্ছেন রণজয়। তাঁর মতে, নিজের শরীরের সম্পর্কে তথ্য খুব কম থাকে মানুষের। সেখান থেকেই ভুল হয়ে যায়। তবে নিজেকেও ফিটনেসের বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে, নয়তো প্রশিক্ষক ভুল শেখাচ্ছেন কি না, সেটাও বুঝতে হয়।
১২১৫
অতনুর বক্তব্য, আগের প্রজন্মের মানুষেরাও ফিট ছিলেন, তাঁদের কাছে জিম ছিল না, এ সব মেশিনও ছিল না। তাঁদের মতো করে জীবনযাপন করতে হবে। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই নিজের শরীরে জ্বালানি ভরতে হবে। স্টেরয়েডের মতো ক্ষতিকারক দিকে না ঝুঁকে বাড়ির খাবারে ভরসা রাখা উচিত। অতনুর দুশ্চিন্তা, যে ভাবে নতুন প্রজন্ম স্টেরয়ডের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, তাতে বড় ক্ষতির আশঙ্কা। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য একেবারে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে নতুন এই বাণিজ্যিক কৌশলে।
১৩১৫
তবে জিমেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে ঠিক কোন কারণে প্রয়োজন, সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন প্রশিক্ষক। অতনু বললেন, ‘‘ফিট থাকতে হলে যে জিমে আসতেই হবে, তা নয়। বাড়িতেও শরীরচর্চা করে, খেলাধুলো করে ফিট থাকা যায়। কিন্তু জিমে যে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ভারোত্তোলন করানো হয়, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
১৪১৫
বাড়িতে অসমান ভার দু’হাতে তুলে নিলে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু নির্দিষ্টি কেজির হিসেব করে করে একটু একটু করে ডাম্ববেলের ওজন বাড়ানো দরকার। তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যায়ামও প্রশিক্ষকের সামনে থেকেই করা উচিত। ফিট থাকার পাশাপাশি জিমে শক্তিবৃদ্ধির কাজ ভাল হয়। পেশির ভাঙন এবং গড়ার কাজও জিমে গিয়ে করলে উপকার বেশি মিলবে, এমনকি নিরাপদও বেশি। পেশি মজবুত করা, গাঁটের স্বাস্থ্য ভাল রাখা, শরীরের শক্তিবৃদ্ধি করার জন্য জিমের প্রয়োজন।
১৫১৫
রণজয় মস্করা করে বললেন, ‘‘অনেকেই আমার চেহারা দেখে ভাবে, আমি স্টেরয়েড নিই। রক্তপরীক্ষা করে প্রমাণ করে দিতে পারি মানুষকে। সকলকে বুঝতে হবে, এই চেহারা বানানোর জন্য ১৯-২০টা বছর ব্যয় করেছি আমি। তার একটা ফলাফল থাকবে তো! কিন্তু এটাও বলব, অনেক প্রশিক্ষকের কাছে গিয়ে প্রতারিত হয়েছি, চোট খেয়েছি। আর চোট খেয়ে আমি আজ বুঝেছি, এই জীবনটা বেশি মূল্যবান। স্বাস্থ্যই সম্পদ। নিজের চেহারা সুন্দর করতে চাই, কিন্তু স্বাস্থ্যকর উপায়ে। কৃত্রিম উপায়ে বা ইঞ্জেকশন নিয়ে অথবা কৃচ্ছ্রসাধন করে নয়, আনন্দে থেকে।’’