জটিল জিনগত অসুখ সিস্টিক ফাইব্রোসিস ধরা পড়লে আক্রান্তের বাঁচার আশা কমতে থাকে। এই রোগ বিরল এবং প্রতিকারের তেমন কোনও উপায় নেই বললেই চলে। মা-বাবার থেকে এই রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে শিশু অথবা পরবর্তী সময়ে তাদের শরীরে বাসা বাঁধে পারে এই রোগ। এতে ফুসফুস একেবারেই অকেজো হয়ে যায়। রোগটি কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা চিহ্নিত করা যায় না সহজে। এমনকি এই রোগের ঝুঁকি আছে কি না, তা জানতে হলে জিনগত বিন্যাস দেখে অনেক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় যা সময়সাপেক্ষ ও খরচসাপেক্ষ তো বটেই। এই প্রথম বার এমন জটিল অসুখ গোড়াতেই নির্ণয় করার মতো পন্থা খুঁজে বার করেছেন জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখের বিজ্ঞানীরা।
সিস্টিক ফাইব্রোসিস কেবল যে ফুসফুসকে অকেজো করে তা নয়, এই রোগ হলে ঘন থকথকে মিউকাস তৈরি হয়, যাতে নানা রকম সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। এই সব ব্যাক্টেরিয়া সাধারণত কোনও ওষুধে ধ্বংস হয় না। এরা সংখ্যায় বেড়েই চলে এবং মিউকাসের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়াতে থাকে। ফুসফুস, শ্বাসনালি আগে আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। শ্বাসপ্রশ্বাসের হার কমতে থাকে, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং বিপাকের প্রক্রিয়াও নষ্ট হতে শুরু করে।
কেন হয় সিস্টিক ফাইব্রোসিস?
বিজ্ঞানী নিকোলাই ক্লিমিউক জানিয়েছেন, সিস্টিক ফাইব্রোসিস কী ভাবে হয়, তার একটি পথ জানা গিয়েছে। মূলত ‘সিএফটিআর’ নামক একটি জিনের মিউটেশনের (রাসায়নিক বদল) কারণেই রোগটি দেখা দেয়। বাবা-মায়ের থেকে এই জিন সন্তানের শরীরেও আসে। কিন্তু কোনও ভাবে যদি তার রাসায়নিক বদল শুরু হয়, তা হলে সিস্টিক ফাইব্রোসিস নিয়েই জন্মাতে পারে সন্তান। সে ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়বে অনেক দেরিতে। শিশুর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হবে, লাল-সবুজ বা খয়েরি রঙের মিউকাস বেরোতে থাকবে নাক-মুখ দিয়ে,কাশি সারতেই চাইবে না, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকবে। কোনও ওষুধেই রোগ সারতে চাইবে না।
আরও পড়ুন:
রোগটি ধরার কী উপায় পেলেন বিজ্ঞানীরা?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোগটি গোড়াতেই চিহ্নিত করার একটি উপায় হল শরীরের ইমিউন কোষ বা রোগ প্রতিরোধী কোষগুলিকে পরীক্ষা করে দেখা। সিস্টিক ফাইব্রোসিসের জিন শরীরে থাকলে, রোগ প্রতিরোধী কোষগুলির মধ্যে বদল আসতে থাকবে। কোষে কোষে প্রদাহ শুরু হবে। কোনও কারণ ছাড়াই কোষগুলির কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করবে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সিস্টিক ফাইব্রোসিসের জিনে যখন বদল আসতে থাকে, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলির চরিত্রও বদলাতে শুরু করে। শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। সেই সময়েই যদি রোগীর শরীর থেকে নেওয়া রক্ত, লালা ও ঘামের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়, তা হলে রোগটির পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হবে।
সিস্টিক ফাইব্রোসিস বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করতে হয়। এই বিষয়ে শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বললেন, "সদ্যোজাতদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। ভারতে প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে একজনের এই রোগ হয়। প্রতি বছর অন্তত হাজার তিনেক শিশু সিস্টিক ফাইব্রোসিস নিয়ে জন্মায়। এই রোগ বিপজ্জনক। ফুসফুসের সঙ্গেই শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে থাকে। তাই রোগটি যদি গোড়াতেই চিহ্নিত করার ও সেই সঙ্গে চিকিৎসার নতুন কোনও পথ পাওয়া যায়, তা হলে তা নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। "
গবেষকদের দাবি, সিস্টিক ফাইব্রোসিসেরঝুঁকি আছে কি না, তা যদি ধরা যায়, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফ্লু-এর প্রতিষেধক দিয়ে রাখলে বিপদ কিছুটা হলেও কমতে পারে।