বাঙালি যতই আলুসেদ্ধ-ভাতের প্রশংসা করুক না কেন, ভাতের সঙ্গে আলুর যুগলবন্দি মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। আবার ধরুন, রবিবারের দুপুরে জমিয়ে বড় বড় আলু সহযোগে পাঁঠার ঝোল খেলেন, তা-ও কিন্তু পেটে সইতে বিস্তর দেরি হবে। মাছ বা মাংসের সঙ্গেও আলুটা ঠিক যায় না। আবার শসার উপর লেবুর রস চিপে যদি খান, তা হলে তো পাকস্থলীতে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যাবে। এ দিকে স্যালাডের উপর লেবুর রস চিপেই খাওয়া হয়। কোন খাবারের সঙ্গে কোন খাবারের মিলমিশ পেটের জন্য ভাল আর কোন কোন খাবার জুটি বাঁধলে তা ধুন্ধুমার বাধাতে পারে, তা জানেন কি?
‘ফুড কম্বিনেশন’ বলে একটি কথা প্রায়ই ব্যবহার করেন পুষ্টিবিদেরা। অর্থাৎ কোন খাবারের সঙ্গে কোনটি খেলে তা শরীরের জন্য ভাল। এই নিয়ে ‘জার্নাল অফ ড্রাগ রিসার্চ ইন আয়ুর্বেদিক সায়েন্সেস’-এ একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। সেখানে গবেষকেরা বিস্তারিত জানিয়েছেন, কোন খাবারের সঙ্গে কোনটি খেলে হজমের গোলমাল হবে না, পেটও ভাল থাকবে। ‘ফুড কম্বিনেশন’ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় অনেকেই ভুল করেন।
কোন কোন খাবারের মিলমিশ পেটের জন্য ভাল?
১) দানাশস্য, যেমন কিনোয়া, ডালিয়া, ওট্স বা রাগি খেলে তার সঙ্গে সবুজ শাকসব্জি খাওয়া ভাল। দানাশস্যের ফাইবারের সঙ্গে সব্জির ভিটামিন ও খনিজ মিলে গেলে শরীরে পুষ্টির চাহিদা অনেকটাই মিটে যায়। হজমও দ্রুত হয়।
২) মুরগি বা পাঁঠার মাংস অথবা মাছের সঙ্গে এমন সব্জি খেতে হবে, যাতে স্টার্চের মাত্রা কম। তাই আলু নয়, বরং সবুজ সব্জি খাওয়া যেতে পারে। আলু দিয়ে মাছের ঝোল না খেয়ে বরং ঝিঙে, পটল, পেঁপের মতো সব্জি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আবার মাংসের স্ট্যু সব্জি দিয়ে খেলে তা বেশি উপকারী।
৩)দুধের সঙ্গে ঘি, মাখন, হলুদ, বিভিন্ন রকম বাদাম, বীজ, খেজুর, কিশমিশ খাওয়া যেতে পারে। তবে দুধের সঙ্গে ভুলেও ফল খাবেন না। বিশেষ করে টক জাতীয় ফল তো নয়ই। আর দুধের সঙ্গে কলা নৈব নৈব চ।
৪) প্রোবায়োটিকের সঙ্গে আবার প্রিবায়োটিক খেলে উপকার বেশি। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কিমচি বা দইয়ের সঙ্গে প্রিবায়োটিক, যেমন পেঁয়াজ বা রসুন কিন্তু উত্তম ‘ফুড কম্বিনেশন’। প্রোবায়োটিকের সঙ্গে প্রিবায়োটিক মিলে গেলে অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলি আরও পরিপুষ্ট হয়, ফলে হজমপক্রিয়া আরও উন্নত হতে পারে।
৫) জলের ভাগ বেশি এমন সব্জি বা ফল, যেমন শসা, তরমুজের সঙ্গে অন্য কিছু খেলে হজম হবে না। শসার সঙ্গে লেবুর রস খেলে তা হজম হতে অনেক বেশি সময় লাগবে।
৬) চিংড়ি যদি খেতে হয়, তা হলে সে দিন অন্যান্য প্রোটিন কম খেলেই ভাল। মাছ বা মাংসের পরে চিংড়ি খেলেই পেটের গোলমাল হবে। কাজেই ভূরিভোজের সময়ে একটু খেয়াল রাখাও জরুরি।
৭) চিজ়ের সঙ্গে বিন্স খান না তো? স্যান্ডউইচ বা কোনও কন্টিনেন্টাল খাবারে চিজ়ের সঙ্গে বিন্স খেয়ে ফেলেন হয়তো। চিজ়ে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ও প্রোটিন থাকে, আর বিন্সে থাকে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার। কাজেই এদের জুটি স্বাস্থ্যকর মনে হলেও তা কিন্তু নয়। বরং চিজ়ের সঙ্গে আপেল বা আঙুরের মতো ফল খাওয়া যেতে পারে।