সফল দু’জনেই। চর্চাতেও থাকেন তাঁরা। বৈভব, প্রতিপত্তি কম নেই কারও। তবু ঈর্ষা! বলিউড তারকা আলিয়া ভট্টের সাফল্য, অভিনয় জগতে পুরস্কার প্রাপ্তির খুশিতে মনে মনে ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন সারা আলি খান। এক সাক্ষাৎকারে নিজের মনোভাবের কথা প্রকাশও করেছিলেন তারকা কন্যা। জানিয়েছিলেন, সে সময় তাঁর মনে হয়েছিল, আলিয়া বিয়ে করেছেন, সন্তানের মা হয়েছেন, পেশাগত সাফল্যও রয়েছে। জীবনে তিনি সব পেয়ে গিয়েছেন, আর কী চাই! আলিয়ার এই সাফল্যে যে তিনি অপ্রভ বোধ করেছিলেন, তা সারা সেই সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি জানিয়েছিলেন।
ঠিক এমন ভাবনা কি আপনার জীবনেও আসে? কাছের বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের সাফল্য দেখলে, ঠিক সে ভাবে খুশি হতে পারেন না? সন্তান লেখাপড়ায় ভাল। সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তবু সমাজমাধ্যমে বান্ধবীর সন্তানের ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল দেখে খুশি হতে পারলেন না? এমনকি, বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছল, নিজের সন্তানের ক্লাস পরীক্ষায় ভাল ফল করাটাও মনকে আনন্দ দিতে পারল না?
মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, ‘‘এটাই ঈর্ষা। এক নেতিবাচক অনুভূতি। এমন ভাবনা মনে তৈরি হলে, মানুষ কখনও কখনও নিজের জীবনের প্রাপ্তিটুকুও উপভোগ করতে পারে না।’’
সারা আলি খান নিজেও তারকা সন্তান। অভিনয় জগতে তিনিও যথেষ্ট নাম করেছেন। অনুরাগীর সংখ্যাও কম নয়। তবু এক মুহূর্তের জন্য তাঁর মনেও কিন্তু এমন অনুভূতি তৈরি হয়েছিল।
সাইকোথেরাপিস্ট সোনাল খাঙ্গারোত বলছেন, ‘‘অন্যের সাফল্যের যে ছবি আমরা দেখি, তা কিন্তু সম্পূর্ণ নয়। সেই প্রাপ্তির পিছনে কতটা পরিশ্রম, কতটা কঠিন পরিস্থিতি ছিল, তা কিন্তু অন্যের চোখে অদেখাই রয়ে যায়।’’
ঈর্ষার বোধ কি বাড়িয়ে দেয় সমাজমাধ্যম? কখন এ নিয়ে সাবধানতা জরুরি?
সমাজমাধ্যমের যুগে ব্যক্তিজীবনের অনেক অনুভূতি, সাফল্যই প্রকাশ্যে আসে। মনোরোগ চিকিৎসকের কথায়, জীবনের প্রাপ্তির গল্পই তুলে ধরতে ভালবাসেন বেশির ভাগ মানুষ। পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাওয়া, নতুন গাড়ি কেনা, বাড়ি কেনা, সন্তান বা কেরিয়ারের সাফল্যের কথা ফলাও করে জানান অনেকে। আর তা দেখেই অপ্রাপ্তির অন্ধকারে ডুবে থাকা কারও কারও মনে ঈর্ষা জাগতে পারে। যত ক্ষণ ঈর্ষার বোধ নিজের বা অন্য কারও ক্ষতি করছে না, তত ক্ষণ বিষয়টি এক রকম। কিন্তু সেই মাত্রা অতিক্রম করলেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন ঈর্ষা?
সাফল্যের পিছনে লুকিয়ে থাকা পরিশ্রম নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। কেউ হয়তো অফিস সূত্রে বিদেশ গিয়েছেন। মনে হতেই পারে, তাঁর এমন প্রাপ্তিযোগ হল, অথচ এত বছর খেটে সে ভাবে কোনও সাফল্য মিলল না। সাইকোথেরাপিস্টের কথায়, অন্যের সাফল্যের পিছনে কতটা সহনশীলতা, কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা ছিল, কোন পরিস্থিতিতে তিনি সেই কাজ করেছেন তা ভাবলেই কিন্তু মনোকষ্ট লাঘব হতে পারে।
মনোরোগ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, অন্যের সাফল্যের দিকে তাকাতে গিয়ে কেউ কেউ নিজের সফলতাও উপভোগ করতে পারেন না। এমন পরিস্থিতি হলে, সচেতনতা জরুরি। যদি মনে হয়, পরিশ্রমের পরেও জীবনে সাফল্য মিলছে না, তা হলে ঈর্ষান্বিত না হয়ে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। এই বিষয়টি নিজেকে বোঝাতেও হবে।
ঠিক যেমন বুঝতে পেরেছিলেন সারা নিজেও। তিনি যখন আলিয়ার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের সাফল্য নিয়ে মনে মনে ঈর্ষান্বিত হয়েছেন, পরক্ষণে নিজেকে বুঝিয়েছেন, জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার জন্য তাঁকেও তো কঠিন শ্রম দিতে হয়েছে। সন্তান পালন, পরিবারকে দেখা, নিজের কাজ— এই সব কিছুতেই হয়তো অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখিও হতে হয়েছে আলিয়াকে, যার খোঁজ কেউ রাখেননি। এমন বোধই মনের ভার হালকা করে দিতে পারে বলছেন কাউন্সেলররা।