সবুজরঙা থকথকে জেলির মতো বস্তুটি নাকি বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাবে। এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের। যে জায়গায় রাখা যাবে, সেই এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেবে। একটি জেলি বছরে অন্তত ১৮ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড ‘খেয়ে’ সাফ করে দিতে পারবে বলে দাবি। যেখানে একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ বছরে ১০ থেকে ২৫ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। জেলিটি কিন্তু মোটেই জড়পদার্থ নয়। তার মধ্যেও প্রাণ আছে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে কী তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা?
‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে এই বিষয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, অণুজীব দিয়ে তাঁরা এমন এক ধরনের জেলি তৈরি করেছেন, যার রং সবুজ ও সেটি সালোকসংশ্লেষ করতে পারে। অর্থাৎ, কার্বন ডাই অক্সাইড, আলো, জল শোষণ করে তার থেকে অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। এ বার মনে হতেই পারে, অণুজীব দিয়ে জেলি কী ভাবে তৈরি হবে?
বিজ্ঞানীরা আসলে এক নীলাভ-সবুজ শৈবালকে কাজে লাগিয়েছেন। একে সায়ানোব্যাক্টেরিয়া বলা হয়। পৃথিবীর আদিতম এই অণুজীব গাছের মতোই কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। অণুজীবটিকে ধরেবেঁধে রাখার জন্য হাইড্রোজেল নামে এক ধরনের জেলির সাহায্য নিয়েছেন গবেষকেরা। হাইড্রোজেলকে আধার বানিয়ে তার মধ্যে সায়ানোব্যাক্টেরিয়াগুলিকে আটকে দিয়েছেন। এর পর ত্রিমাত্রিক প্রিন্টের সাহায্যে তাকে নির্দিষ্ট আকার দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বাইরে থেকে দেখে মনে হবে জেলির মতো একটি জিনিস, কিন্তু আসলে ওর মধ্যে প্রাণ রয়েছে। যে জায়গায় সেটিকে রাখা হবে, সেই জায়গার বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য দূষিত গ্যাস শোষণ করে নেবে ওই জেলি।
আরও পড়ুন:
একটি পূর্ণবয়স্ক পাইন গাছ যেখানে বছরে ২০ থেকে ৪০ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে, সেখানে সায়ানোব্যাক্টেরিয়া একাই বছরে ১৮ কিলোগ্রাম বা তারও বেশি কার্বন শোষণ করে নেবে। তা ছাড়া বাতাসে ভাসমান গ্রিন হাউস গ্যাসগুলিও শুষে নেবে। পরিবেশ পরিশোধনের জন্য এই অণুজীবকে কাজে লাগানো তাই অনেক বেশি সহজ।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ঘরে এমন একটি জেলি যদি রাখা যায়, তা হলে ঘরের বাতাস নিমেষে পরিশোধিত হয়ে যাবে। রাস্তাঘাটে বা দূষণ কবলিত জায়গায় এমন জেলি রাখলে, সেই এলাকার বাতাস থেকে দূষিত গ্যাসের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করবে এই জেলি। কী এই কার্বন ফুটপ্রিন্ট? দৈনন্দিন নানা কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পরিবেশে মিশছে ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে, খাদ্য, শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন, সড়ক নির্মাণ, গৃহনির্মাণ, পরিবহণে রোজই কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের মতো কার্বনবাহী গ্যাসসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। তা ছাড়া রোজের কাজ, যেমন রান্না করা, বিদ্যুতের ব্যবহার ইত্যাদি থেকেও কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয় ও মিশে যায় পরিবেশে। ব্যক্তিপিছু প্রতি বছর