আঙুল লাল হয়ে ফুলে উঠেছিল। মুখে ও শরীরের নানা জায়গায় র্যাশ বার হচ্ছিল। সেই সঙ্গেই অসহ্য যন্ত্রণা। আমেরিকার পপ তারকা সেলেনা গোমেজ় কিছু দিন আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি লুপাস রোগে ভুগছেন। অটো-ইমিউন রোগটি মোটেই হেলাফেলা করার নয়। এক বার ধরা পড়লে প্রায় সারা জীবনই ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। লুপাস নিয়ে ভোগান্তির মাঝেই সেলেনা ফের জানিয়েছেন, এই রোগ থেকেই আঙুলে বাত ধরেছে তাঁর। প্রতিটি গাঁটে যন্ত্রণা, আঙুল নাড়ানোই দায় হয়ে উঠেছে।
লুপাস রোগকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস’ (এসএলই)। 'সিস্টেমিক' অর্থাৎ শরীরের একটি অঙ্গে নয়, একাধিক অঙ্গে এই রোগের প্রভাব দেখা যেতে পারে। 'লুপাস' শব্দটির মানে প্রদাহ। যখন বিভিন্ন অঙ্গের কোষে কোষে রাসায়নিক বদল ঘটতে থাকে, তখন সুস্থ কোষগুলি নষ্ট হতে থাকে এবং শরীরের ভিতর প্রদাহ শুরু হয়। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাই সুস্থ কোষগুলির সর্বনাশ ঘটাতে থাকে। যে কারণে নানা রকম সমস্যা এসে হানা দেয়।
আরও পড়ুন:
লুপাস হলে সবচেয়ে আগে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ লাল হয়ে ফুলে উঠতে থাকে। কপাল, নাকের চারপাশ এবং গালে লালচে রঙের র্যাশ বেরোয়। চুল উঠে যেতে পারে, চুলের গোড়া শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। নখের গোড়া পচে যেতে পারে। শরীরের জায়গায় জায়গায় ফোস্কা পড়ে যায়। লুপাস সাধারণত ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবে লুপাস থেকে যে আর্থ্রাইটিস হতে পারে, তেমন ধারণা কম। সেলেনা জানিয়েছেন, লুপাসের কারণেই তাঁর আঙুলের গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। হাত নাড়াতে যথেষ্টই বেগ পেতে হচ্ছে।
লুপাস কী ভাবে বদলে যায় বাতের ব্যথায়?
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের গবেষণা বলছে, লুপাস হলেই শরীরের ভিতর মারাত্মক প্রদাহ হতে শুরু করে। এতে শরীরের গ্রন্থিগুলিও ফুলে ওঠে। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকে। ফলে নানা রকম রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আর্থ্রাইটিস হওয়াও অসম্ভব নয়। হাতের আঙুল, কব্জি, কনুইয়ের কাছ থেকে হাতের তালু অবধি যন্ত্রণা হতে পারে। আবার অনেকে হাঁটুর ব্যথাতেও কাতর হয়ে পড়েন। পেশির অসাড়তা বাড়ে। হাত বা পা নাড়াতে, হাঁটাচলা করতে, হাত দিয়ে কোনও কিছু ধরতে বা ওজন তুলতে কষ্ট হতে পারে। এমনি জলের বোতল ধরা, রান্না করা বা লেখালিখি করতেও সমস্যা হতে পারে।
লুপাস কিন্তু হার্ট, ফুসফুস, কিডনি এবং সর্বোপরি মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। হার্ট আক্রান্ত হলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। ফুসফুসে হলে নিউমোনিয়া হতে পারে। বাকি উপসর্গগুলির সঙ্গে খিঁচুনির উপসর্গ থাকলে বুঝতে হবে, মস্তিষ্কও আক্রান্ত। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই রোগের তীব্রতা কখনও কখনও এমন বেড়ে যায় যে, রোগী বিছানা ছাড়তে পারেন না। লুপাস সাধারণত সারে না। তবে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এই রোগ যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।