রাতে ভাল ঘুম না হলে, দিনের কাজও বিগড়োয়। কারণ, ঘুম মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম। অনবরত কাজ করতে করতে শরীরও একটা সময় হাল ছেড়ে দেয়, জিরিয়ে নিতে চায়। ঠিক তেমনই বিশ্রামের দরকার পড়ে মস্তিষ্কেরও। রাতে মস্তিষ্ক প্রাপ্য বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ না পেলে স্বাভাবিক ভাবেই তার কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়। এক স্নায়ুরোগ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, নিয়মিত ঘুমের ধরনে প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যেও। তা থেকে স্মৃতিশক্তি, মনঃসংযোগের ক্ষমতা, এমনকি আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অ্যালঝাইমার্সের মতো স্নায়ুর রোগও হতে পারে।
বলিউড এবং দক্ষিণী সিনেমার অভিনেতা আর মাধবন এক সাক্ষাৎকারে মুম্বইয়ের এক স্নায়ুচিকিৎসক সিদ্ধার্থ ওয়ারিয়ারকে ঘুম নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছিলেন। তারই জবাবে সিদ্ধার্থ বলেছেন, নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে সবার আগে দৈনন্দিন ঘুমের ধরন ঠিক করা জরুরি।
কী ভাবে ঘুমোনো উচিত?
১। ঘুমোনোর সময় নিয়ে অনেকে অনেক রকম পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে সিদ্ধার্থ বলছেন, প্রতি দিন ৬ ঘণ্টার গভীর ঘুমই মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে এই ঘুম হতে হবে কোনও রকম বাধাহীন, ঝঞ্ঝাটমুক্ত।
২। কোনও দিন রাত ১২টায় ঘুমোতে গেলেন তো কোনও দিন ১টায়। হয়তো তার পরে ৬ ঘণ্টা ঘুমোচ্ছেন। কিন্তু এই অনিয়মিত ঘুমোতে যাওয়ার রুটিন ঘুমের মান খারাপ করে দিতে পারে। কারণ শরীরের যে নিজস্ব ঘড়ি, তা একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলে। তার প্রতি দিন ঘুমোতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠারও সময় বাঁধা আছে। সেই রুটিন ব্যাহত হলে ঘুম ভাল হবে না। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘ধরুন, রাত ১২টা থেকে ৬টা আপনার ঘুমোনোর সময়। আপনি কোনও দিন ১টার সময় ঘুমোলেন কোনও দিন ২টোর সময়। হয়তো যে দিন একটায় ঘুমোলেন, সে দিন ঘুম থেকে ওঠার অ্যালার্ম দিলেন ৭টায়। কিন্তু আপনার দেহঘড়ি আপনাকে ৬টার সময়েই সচেতন করবে। তার পরের এক ঘণ্টা ঘুম হবে অগভীর। যা পুরোপুরি বিশ্রাম দেবে না। ফলে ঘড়ি ধরে ৬ ঘণ্টা ঘুম হলেও আদপে আপনার মস্তিষ্ক ৫ ঘণ্টা বিশ্রাম পেল। ’’
আরও পড়ুন:
৩। সিনেমা দেখতে দেখতে ঘুমোনো বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে সমাজমাধ্যমে স্ক্রল করার অভ্যাসও ঘুমকে ব্যাহত করে। কারণ ব্যাখ্যা করে চিকিৎসক বলছেন, ঘুমনোর সময় শরীর যে বিশ্রামের পর্যায়ে যায়, তার জন্য দায়ী একটি হরমোন। যার নাম মেলাটোনিন। মোবাইলের পর্দার ব্লু লাইট সেই মোলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দেয়। যা গভীর ঘুমের পথ রোধ করে।
৪। আলো জ্বালিয়ে ঘুমোতেও বারণ করছেন চিকিৎসক। তাঁর মতে, সামান্য আলোও মেলাটোনিন নিঃসরণের মাত্রা কমাতে পারে। ফলে মস্তিষ্ক যথাযথ ভাবে বিশ্রাম নিতে পারে না। এ ছাড়া আশপাশে আওয়াজ হচ্ছে, এমন জায়গাতে ঘুমোলেও মস্তিষ্ক উপযুক্ত বিশ্রাম পায় না। তাই চেষ্টা করুন বাইরের আওয়াজ যাতে ঘরে না ঢোকে।
৫। একটি গবেষণার উল্লেখ করে চিকিৎসক জানাচ্ছেন, কোনও একটি পাশ ফিরে শোয়া মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। তবে বাঁ দিক ফিরে শুলে হজমের উপকার বেশি। ডান দিকে ফিরে শুলে মস্তিষ্কের বর্জ্য নির্মূলে আরও কিছুটা বেশি সুবিধা হয়। যা অ্যালঝাইমার্স বা পারকিনসনসের মতো স্নায়ুর রোগ দূরে রাখতে সাহায্য করে।