কিছু খেলেই বুকজ্বালা, গ্যাস, বদহজম। এমন সমস্যা নতুন নয়। খাওয়াদাওয়ার ভুলে, এমন সমস্যা হতেই পারে। ভরপেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও বদহজমের সমস্যা, পেটে অস্বস্তি হতেই পারে।
কিন্তু পেটের সমস্যার কারণ মানসিকও হতে পারে, বলছে গবেষণা। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, কোনও বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ভাবনার জেরেও কিন্তু অম্বল, খেতে ইচ্ছা না করা, বমি ভাবের মতো উপসর্গ খুব সাধারণ একটি বিষয়।
পেটের স্বাস্থ্যর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্ত্র, পাকস্থলীর মতো প্রত্যঙ্গ। বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারের পুষ্টিগুণ শোষণ হয় এই অংশেই। খাবার হজমে সাহায্য করে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে নিঃসৃত পাচকরস। পুষ্টিগুণ শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে হরমোনের। ‘হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০১৩ সালের একটি গবেষণালব্ধ ফল বলছে, দু্শ্চিন্তা, চাপ, উদ্বেগ, উত্তেজনার মতো মানসিক পরিস্থিতি খাবার পরিপাক এবং হজম সংক্রান্ত বিষয়ের উপর প্রভাব ফলে। গ্যাসট্রোইন্টেস্টাইনাল সিস্টেম বা জিআই সিস্টেম-এতে প্রভাবিত হয়। ফলে খিদে না হওয়া, বমি ভাব, পেটে অস্বস্তির মতো নানা উপসর্গ দেখা দেয়। মস্তিষ্ক এবং পেটের স্বাস্থ্যের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করে হরমোন, নিউরন এবং বায়োকেমিক্যাল সিগন্যাল। মস্তিষ্ক চাপে থাকলে, উদ্বেগ হলে তারই সঙ্কেত পৌঁছয় পেটের কাছেও, প্রভাব পড়ে খাবার পরিপাক এবং পুষ্টি শোষণে। এমনকি, উদ্বেগ থেকে বুক জ্বালা, পেটখারাপের মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
'পাবমেড'-এ ২০১৯ সালে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ পায়, যার বিষয়বস্ত ছিল ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজ়িজ়কে উদ্বেগ কতটা প্রভাবিত করে। তাতেই দেখা গিয়েছে, দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ পরিপাকতন্ত্রের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। তার ফলে আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম), বদহজম, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য আবার পেটখারাপের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা পেটের উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা কমিয়ে দেয়, হরমোনের ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলে। যার ফল পেটের গোলমাল, হজমের সমস্যা।
কী ভাবে মুক্তি মিলবে?
শরীরচর্চা: যদি দেখা যায় ক্রমাগত দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ থেকে বেরোনো সম্ভব হচ্ছে না, বা এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেটি এড়ানো যাচ্ছে না, তখন সাবধান হওয়া দরকার। জোর করে হলেও একটু শরীরচর্চার চেষ্টা করা যেতে পারে। বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তির ভাল উপায় হল যোগাসন। দীর্ঘ এবং নিয়মিত অভ্যাসে মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। খাদ্য পরিপাকেও বিশেষ কিছু আসন সাহায্য করে।
ডায়েট: জীবনে দু্শ্চিন্তা, উদ্বেগের কারণ ঘটলে সেই সময় বিশেষ করে ভাজাভুজি, মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলা ভাল। বদলে ফাইবার, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার শুধু পেটের স্বাস্থ্যই ভাল রাখে না, হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা থাকে। পাশাপাশি, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার তালিকায় রাখা প্রয়োজন। টকদই, ইয়োগার্ট— এই ধরনের খাবার শরীরের জন্য উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
জল: কিডনি বা হার্টের সমস্যা না থাকলে প্রতি দিন অন্তত ৩ লিটার জল খাওয়ার দরকার হয়। জল শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে সাহায্য করে। অম্বল, গ্যাসের সমস্যাও কমায়। বদহজমের সমস্যা হলে জল খাওয়ার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
ঘুম: দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম সুস্থ থাকার জন্য জরুরি। দিন কয়েক ঘুম না হলেই হরমোনের মাত্রার ওঠাপড়ায় স্বাস্থ্য বিগড়ে যায়। তার প্রভাবে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বাড়তে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে ঘুম খুব জরুরি। না হলেই হজমের সমস্যা হবে অবধারিত ভাবেই।
প্রাণায়াম: নিয়মিত প্রাণায়ামের অভ্যাসও মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। উদ্বেগ, চাপ কমলে স্বাভাবিক ভাবেই হজমের সমস্যা এড়ানো যাবে।