Advertisement
E-Paper

খারাপ স্মৃতি যন্ত্রণা দিচ্ছে! মনোবিদের কাছে যাওয়ার কথা ভাবছেন? ঘুমেও কিন্তু হতে পারে সমাধান

খারাপ স্মৃতি ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে যন্ত্রণা দেয়। তাতে দৈনন্দিন কাজের ছন্দপতন হয়। ব্যাহত হয় জীবনের স্বাভাবিক চলন। নষ্ট হয় মানসিক শান্তি। অথচ বিজ্ঞান বলছে, মানুষের মস্তিষ্কেরই ক্ষমতা আছে অপছন্দের স্মৃতিকে দূরে সরিয়ে রাখার।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২২
অপ্রিয় স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মস্তিষ্ক। সেই কাজের একটি নামও আছে। তাকে বলা হয় মেমরি সাপ্রেশন।

অপ্রিয় স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মস্তিষ্ক। সেই কাজের একটি নামও আছে। তাকে বলা হয় মেমরি সাপ্রেশন। ছবি : সংগৃহীত।

জীবনে ওঠাপড়া লেগেই থাকে। সুসময় যেমন সুখস্মৃতি তৈরি করে দিয়ে যায়, তেমনই কিছু কিছু খারাপ সময় মনে রেখে যায় ‘ক্ষত’। কালের নিয়মে কিছু ক্ষতস্থান পূরণ হলেও কিছু ক্ষত সহজে শুকোয় না। তিক্ত অভিজ্ঞতা, আঘাত, অপমান, সম্মানহানি, বিশ্বাসঘাতকতার মতো ঘটনা গভীর দাগ রেখে যায়। সুখস্মৃতি যেমন হঠাৎ মনে পড়লে মন ভাল হয়ে যেতে পারে, ঠিক তেমনই খারাপ স্মৃতিও ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে যন্ত্রণা দেয়। তাতে দৈনন্দিন কাজের ছন্দপতন হয়। ব্যাহত হয় জীবনের স্বাভাবিক চলন। নষ্ট হয় মানসিক শান্তি। মুশকিল হল, মনখারাপ থাকলে সুখস্মৃতির বদলে খারাপ স্মৃতিই মনে পড়ে বেশি। অথচ বিজ্ঞান বলছে, মানুষের মস্তিষ্কেরই ক্ষমতা আছে অপছন্দের স্মৃতিকে দূরে সরিয়ে রাখার। বহু ঝড়ঝাপটা সামলেও যে মানুষ মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে না, তার নেপথ্যে রয়েছে মস্তিষ্কের ওই ক্ষমতাই। কিন্তু সেই ক্ষমতাও মাঝে মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে। তখন খারাপ স্মৃতির ভিড় করে আসা আটকানো সম্ভব হয় না। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এর একটা নেপথ্য কারণ হতে পারে ঘুম।

গবেষণা কী বলছে?

কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটেনের ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ গবেষণা বলছে, খারাপ স্মৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার যে ক্ষমতা মস্তিষ্কের রয়েছে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে ঘুমের মানের উপর।

বিজ্ঞান বলছে, মানুষের মস্তিষ্কেরই ক্ষমতা আছে অপছন্দের স্মৃতিকে দূরে সরিয়ে রাখার।

বিজ্ঞান বলছে, মানুষের মস্তিষ্কেরই ক্ষমতা আছে অপছন্দের স্মৃতিকে দূরে সরিয়ে রাখার। —ফাইল চিত্র।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল 'পিএনএএস' বা ‘পিন্যাস’-এ। গবেষকেরা লিখেছেন, ঘুম কী ভাবে মানসিক স্বাস্থ্য এবং মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, সে সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তার একটি নতুন দিক খুলে দিয়েছে ওই গবেষণা। কারণ গবষণায় দেখা যাচ্ছে, ঘুম যথাযথ না হলে বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মনে না করতে চাওয়া স্মৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না মস্তিষ্কের। শুধু তা-ই নয়, ঘুম ভাল না হলে আরও অনেক রকম মানসিক সমস্যা হতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে ওই গবেষণায়। যা থেকে অবসাদ, উদ্বেগ, এমনকি, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডারের মতো সমস্যাও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা।

কী ভাবে গবেষণা করা হয়েছিল?

গবেষণার জন্য ১৮-৩০ বছর বয়সি প্রায় ৮৫ জন সুস্থ সবল মানুষকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এঁদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ এবং বাকিরা ছিলেন মহিলা। ঘুম মস্তিষ্ককে কতটা প্রভাবিত করছে, তা বুঝতে ৪৩ জনকে রাতে ভাল ভাবে ঘুমোতে দেওয়া হয়। বাকিদের রাতে জাগিয়ে রাখা হয়। তবে তার আগে তাঁদের প্রত্যেককে কিছু ছবি দেখানো হয়। এর মধ্যে কিছু ছবি এমন মুখের, যার সঙ্গে তাঁদের জীবনের বা অন্য ক্ষেত্রের কোনও না কোনও নেতিবাচক বিষয় জড়িয়ে আছে। দেখানো হয় গাড়ি দুর্ঘটনার মতো কিছু নেতিবাচক ঘটনার ছবিও। এর পরে গোটা একটা দিন স্লিপ ল্যাবরেটরিতে ঘুমিয়ে অথবা না ঘুমিয়ে কাটান ওই ৮৫ জন। ২৪ ঘণ্টা পরে তাঁদের প্রশ্ন করা হয়, আগের দিন দেখানো ছবি নিয়ে।

 ৪৩ জনকে রাতে ভাল ভাবে ঘুমোতে দেওয়া হয়। বাকিদের রাতে জাগিয়ে রাখা হয়।

৪৩ জনকে রাতে ভাল ভাবে ঘুমোতে দেওয়া হয়। বাকিদের রাতে জাগিয়ে রাখা হয়। —ফাইল চিত্র।

ফলাফল কী হল?

প্রশ্ন করার সময়ে গবেষকেরা নজর রেখেছিলেন মস্তিষ্কের ডোরসোল্যাটারাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে অর্থাৎ মাথার যে অংশ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অপ্রিয় চিন্তা মাথায় আসতে দেয় না, সে দিকে। দেখা যায়, যাঁরা রাতে ভাল ভাবে ঘুমিয়েছিলেন, তাঁদের মাথার ওই অংশটি সক্রিয় রয়েছে। উল্টো দিকে, যাঁরা ঘুমোননি, তাঁদের প্রত্যেকেরই মাথার ওই অংশ নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ তাঁদের মস্তিষ্ক অপ্রিয় চিন্তা নিয়ন্ত্রণের কাজ সে ভাবে করছে না।

অপ্রিয় স্মৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মস্তিষ্ক যে কাজ করে, তাকে বলা হয় মেমরি সাপ্রেশন। গবেষকেরা তাঁদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছে, গবেষণায় স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, রাতে যাঁরা ঘুমোননি তাঁদের মেমরি সাপ্রেশন বা স্মৃতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অকেজো হয়ে গিয়েছে।

অপ্রিয় স্মৃতি যন্ত্রণা দিলে আগে দেখতে হবে, ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে কি না।

অপ্রিয় স্মৃতি যন্ত্রণা দিলে আগে দেখতে হবে, ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে কি না। —ফাইল চিত্র।

অতঃপর কী?

গবেষণাপত্রটির সহ লেখক এবং ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক মার্কাস হ্যারিংটন বলেছেন, ‘‘আমরা জানতে চেয়েছিলাম, কারও কারও ক্ষেত্রে পুরনো তিক্ত স্মৃতি ভুলতে সময় লাগে কেন? তারই একটি সম্ভাবনা এই গবেষণায় জানতে পেরেছি।’’ অর্থাৎ অপ্রিয় স্মৃতি যন্ত্রণা দিলে আগে দেখতে হবে, ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে কি না। তা না হলে আগে সে দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তার পরে পরবর্তী ভাবনা।

হ্যারিংটন অবশ্য জানিয়েছেন, গবেষণালব্ধ এই তথ্যে আপাতত তাঁদের প্রশ্নের অর্ধেক উত্তর মিলেছে। বাকি রহস্য ভেদ করতে তাই এখন তাঁরা জানতে চান, ঘুম না হলে মস্তিষ্কের যে অংশ অপ্রিয় আবেগ বা স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে আর কী কী হয়? পরবর্তী কালে তা নিয়েই গবেষণা করতে চান তাঁরা।

Mental Health Benefits of Sleeping
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy