সমস্ত রকম ক্যানসার আর এখন ততটাও ভীতিপ্রদ নয়। বরং সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়, উপযুক্ত চিকিৎসায় রোগী সুস্থ ভাবেই বাঁচতে পারেন। তবে চিকিৎসক মহলে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এই রোগের বাড়বাড়ন্ত। উন্নত এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই অসুখে আক্রান্তদের আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে, তবে রোখা যায়নি অসুখটি। বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে অন্তত ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের অনুমান, গত পাঁচ বছরে সেই পরিসংখ্যান প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন:
এক সাক্ষাৎকারে বেঙ্গালুরুর ক্যানসারের চিকিৎসক বিজে শ্রীনিবাস বলছেন, ‘‘জীবনযাপনে সাধারণ বদলই এই অসুখের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। সমস্ত রকম ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও, কোনও কোনও ক্যানসারের ঝুঁকি ৪০-৫০ শতাংশ কমানো সম্ভব সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।’’ পুষ্টিবিদেরাও জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসও অসুখের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
স্থূলত্ব: অনেকেরই মনে হয়, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেশ মানানসই ভুড়ি না হলে কি চলে! যদিও তা মজার কথা। তবে চিকিৎসক বলছেন, ওবেসিটি বা স্থূলত্বের মধ্যে লুকিয়ে অসুখের বীজ। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি লিভার, স্তন, অগ্ন্যাশয়, ইউটেরাইন ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা হলেও বৃদ্ধি করে। তাই সব সময়েই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা লক্ষ্য হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পরিমিত আহার আর খানিক শরীরচর্চাই ওজন বশে রাখতে সাহায্য করবে। ক্যানসার রুখতে তাই ছোটখাটো পদক্ষেপেই মন দেওয়া দরকার।
বেঙ্গালুরু নিবাসী আর এক ক্যানসার চিকিৎসকের এসথার সাথিয়ারাজ জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত মেদ এন্ড্রোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। খাবারে সঠিক মাত্রায় প্রোটিন ও ফাইবার রাখা খুব জরুরি। খেয়াল করা দরকার, যেন রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় থাকে।
কী খাবেন?
ক্যানসারের চিকিৎসক এবং পু্ষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, ডায়েটে রাখতে হবে তাজা ফল, মরসুমি সব্জি, বিভিন্ন রকম ডাল, বাদাম, বীজের মতো খাবার। কারণ, এই সমস্ত খাবারে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। কোষের ক্ষতি করে যে সব ফাইটোকেমিক্যাল, তার হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টযুক্ত খাবার। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার প্রবণতা, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
বোসো কম, ঘোরো বেশি: দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ, শরীরচর্চা না করা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার প্রবণতাই বিপদ ডেকে আনছে। চিকিৎসকের পরামর্শ, কম বসে, ঘোরাঘুরি করুন বেশি। হাঁটাহাটি, আসন বা নিয়মিত যে কোনও শরীরচর্চাই কোলন, স্তন এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি অল্প হলেও কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শরীরচর্চার পরামর্শ চিকিৎসকের। পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, হাঁটহাটি বা ব্যায়াম বিপাকহার ঠিক রেখে ওজন ঝরাতে সাহায্য করে। যা খুব জরুরি।
মদ্যপান কমাতে হবে: পার্টি হতেই পারে। তবে ঘন ঘন মদ্যপান, দিনভর ধূমপান, ভাজাভুজি খাবার খাওয়া কমাতে হবে। এগুলি নিঃশব্দে মারণব্যাধির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষত তামাক ফুসফুস, মস্তিষ্ক-সহ শরীরের একাধিক প্রত্যঙ্গে ক্যানসারের সম্ভাবনা তৈরি করে। ক্যানসার সংক্রান্ত পুষ্টিবিদ্যা নিয়ে কাজ করা চিকিৎসক এসথার বলছেন, একই সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম, চিন্তা এবং উদ্বেগ বশে রাখাটাও অভ্যাস করতে হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা: যত দ্রুত রোগ নির্ণয়, ততই সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভবনা বেশি। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন ভাইরাস ঘটিত ক্যানসারের অসুখের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া, নিয়ম করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে শরীরে কোথায় কোন গরমিল রয়েছে, চট করে বোঝা যায়। স্তন, জরায়ুর ক্যানসার হলেও যাতে তা দ্রুত ধরা পড়ে, সেই কারণে বেশ কিছু পরীক্ষা করানো দরকার। শরীরের কোথাও মাংসপিণ্ড তৈরি হলে, দ্রুত সতর্ক হওয়া দরকার। তা ছাড়া, শরীর যদি দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকে, তা হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুব জরুরি।