E-Paper

ধূমপান ছাড়ার পরের লড়াইটা বেশি কঠিন

শারীরিক ও মানসিক দু’রকম সমস্যার মধ্য দিয়েই যেতে হয় ধূমপান ছাড়ার পর। জেনে নিন সুস্থ থাকার পথ

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:৫৪

সম্প্রতি শাহরুখ খান ঘোষণা করেছেন তিনি তাঁর ৩০ বছরের পুরনো ধূমপানের অভ্যেস ছেড়ে দিয়েছেন। সেই অভ্যেস থেকে বেরিয়ে আসার পর তাঁর কিছু শারীরিক সমস্যা হচ্ছে, সে কথাও জানিয়েছেন অভিনেতা। ৫৯ বছর বয়সি একজন ব্যক্তির পক্ষে দীর্ঘকালীন অভ্যেস ছেড়ে বেরিয়ে আসা কঠিন। কিন্তু শাহরুখ সেটা পেরেছেন কারণ তিনি ধূমপান ছাড়ার প্রয়োজন উপলব্ধি করেছেন। তবে শুধু উপলব্ধিই যথেষ্ট নয়। চাই মানসিক দৃঢ়তাও। মাসকয়েকের জন্য ধূমপান ছেড়ে দিয়ে ফের তা চালু করার ঘটনাও বিস্তর। ধূমপান ছাড়ার পরপরই শরীরে কিছু অস্বস্তি তৈরি হয়। তার থেকে বেরোনোর জন্য প্রয়োজন চিকিৎসকের পরামর্শ।

কী কী সমস্যা দেখা দেয় ধূমপান ছাড়লে?

কে, কত দিন ধরে ধূমপান করছেন এবং কতটা পরিমাণে করছেন— এই বিষয়গুলির উপরে নির্ভর করবে এর ডিপেন্ডেন্সি, বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। ধরা যাক, কেউ পাঁচ বছর ধরে দিনে দুটো করে সিগারেট খাচ্ছেন। আর কেউ কুড়ি বছর ধরে দিনে কুড়িটা খাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে ধূমপান ছাড়তে দ্বিতীয় জনের বেশি কষ্ট হবে। ডা. তালুকদারের কথায়, “সিগারেট, বিড়ির মধ্যে থাকা নিকোটিন আমাদের মস্তিষ্কের কোষে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটায়। দীর্ঘ দিন ধূমপানের অভ্যেস থাকার ফলে ব্রেনের মধ্যে এর একটা প্রভাব পড়ে। ধূমপান বন্ধ করা মানে ব্যক্তিটি অভ্যস্ত নিয়মের বাইরে যাচ্ছেন। সেটাকে মস্তিষ্ক চিহ্নিত করতে পারে না। ফলে মেডিক্যাল এবং সাইকোলজিক্যাল দু’রকমের সমস্যা দেখা দেয়।”

ধূমপান বন্ধ করার পরে অনেকের শরীরে অস্বস্তি, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, ঘুম না হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মনঃসংযোগ করতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো উইথড্রয়াল সিম্পটম। অতিরিক্ত ধূমপায়ীদের নিকোটিন ডিপেনডেন্সি বেশি হয়। নিকোটিন ছাড়ার ফলে অনেকে এতটাই অস্থির হয়ে যান যে চিৎকার চেঁচামেচি, জিনিসপত্র ভাঙচুরও করতে থাকেন। সে ক্ষেত্রে রিহ্যাব সেন্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কারণ বাড়িতে ওই ব্যক্তিকে সামলানো সম্ভব হয় না। “হঠাৎ করে নিকোটিন বন্ধ হয়ে গেলে রক্তের কিছু প্যারামিটার বদলে যায়। এটা স্বাভাবিক। ধূমপান বন্ধের ৭-১৫ দিনের মধ্যে শারীরিক প্রতিক্রিয়াগুলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এই সময়টায় ধৈর্য ধরে রাখতে পারা খুব জরুরি,” মন্তব্য ডা. তালুকদারের।

মানসিক দ্বন্দ্ব

স্মোকিংয়ের ফলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্ষতি, ক্যানসার... নানাবিধ রোগের সম্ভাবনার কথা সকলেই জানেন। কিন্তু জেনেবুঝেও নেশার দাসত্ব থেকে বেরোতে পারেন না অধিকাংশই। সিগারেট ছেড়ে দিলে যে শারীরিক কষ্টটা হয়, তা অনেকে সহ্য করতে পারেন না। তাই দিন সাতেক বাদে ফের ধূমপান শুরু করে দেন। এই সময়ে একটা শারীরিক-মানসিক লড়াই চলতে থাকে। ধূমপান ছাড়ার জন্য ধৈর্য ও সহ্যশক্তি প্রয়োজন। কাউন্সেলিং এ ক্ষেত্রে কাজে দেয়। প্রয়োজন বাড়ির লোকের সাহায্য। ডা. তালুকদার বলছিলেন, ‘‘শারীরিক অস্বস্তি হলেই ধূমপায়ীদের মনে হয়, তিনি সিগারেট ছাড়তে পারবেন না। ‘আমি পারছি না’— এই মনোভাব থেকে তাঁকে বার করতে হবে। কাউন্সেলিং করে মানসিক ভাবে সাহস দিতে হবে।’’

বিকল্প উপায়

দীর্ঘকালীন অভ্যেস ছাড়া সহজ নয়। তাই ধীরে ধীরে সিগারেটের সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। শরীরে নিকোটিনের প্রবেশ আচমকা বন্ধ হয়ে গেলে যেহেতু শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়, তাই চিকিৎসকেরা কিছু বিকল্প উপায়ের পরামর্শ দেন। নিকোটিন গাম, নিকোটিন প্যাচ বা কিছু ওষুধের পরামর্শ দেন তাঁরা। নিকোটিন গাম বা প্যাচ কি ক্ষতিকর নয়? ‘‘হ্যাঁ, তবে সামান্য। আসলে এগুলো সবই সাময়িক সমাধান। নিকোটিনের প্রভাব ধাপে ধাপে কমানোর একটা পদ্ধতি মাত্র,” জবাব চিকিৎসকের। অনেকে সিগারেট ছাড়ার উপায় হিসেবে ই-সিগারেট বা ভেপ নেন। এটিও বেজায় ক্ষতিকর। সিগারেটের মতো না হলেও এগুলো নেওয়ার ফলে ফুসফুসের ক্ষতি হয় বলে মত চিকিৎসকদের।

কিছু জরুরি বিষয়

সিগারেট ছেড়ে দিলে কি ফুসফুস আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে? ডা. তালুকদার বললেন, “ধূমপায়ীদের ফুসফুস কখনওই স্বাভাবিক অবস্থায় আসে না। তবে ছেড়ে দেওয়ার পর অবস্থার উন্নতি অবশ্যই হয়। শ্বাসকষ্ট, হৃদ্‌রোগ এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। লং স্মোকারদের তুলনায় যাঁরা কম দিন ধরে নিকোটিন সেবন করছেন, তাঁদের উন্নতি বেশি হবে।”

সমীক্ষা বলছে, মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে কমবয়সিদের মধ্যে। যাঁরা আগামী দিনে সন্তানধারণ করতে চান, তাঁদের এই অভ্যেস পরিত্যাগের পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক। ধূমপান গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। অনেকে পরিবার পরিকল্পনার কিছু দিন আগে ধূমপান ছেড়ে দেন। তাতে ক্ষতি হয়তো কিছুটা কমে, কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যায়।

ধূমপান ছাড়ার পরে কার শরীর কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে বা কত দ্রুত ওই ব্যক্তি রিকভার করবেন, তা আগাম বলা সম্ভব নয়। সবটাই নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষের উপরে। এর পাশাপাশি সুষম ডায়েট এবং শারীরচর্চা যদি কেউ করেন, তা হলে তিনি আরও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

ধূমপান ছাড়ার লড়াইটা কঠিন। কিন্তু একবার ছেড়ে দিতে পারলে আগামী দিনগুলো সুন্দর হয়ে উঠবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mental Health No Smoking Withdrawals

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy