বর্ষার সময় এলেই পেটের রোগ বাড়ে। রাস্তার কাটা ফল, রঙিন শরবত, লস্যি, আখের রস, যা-ই খান না কেন, তা থেকে ডায়েরিয়া হওয়া অস্বাভাবিক নয়। যদি প্রায়ই বাইরের খাবার খেতে অভ্যস্ত হন, তা হলে পেটে সংক্রমণ হতে বাধ্য। বর্ষার সময়েই নানা জীবাণুর সংক্রমণ বাড়ে। খাবার, জল থেকে সংক্রমণ ঘটতে পারে যে কোনও সময়েই। কেবল বাইরের খাবার নয়, দীর্ঘ দিন ফ্রিজে রেখে দেওয়া বাড়ির খাবারেও ছত্রাক জন্মায়। সেই খাবার থেকেও বিষক্রিয়া হতে পারে। যদি দেখেন রাস্তার কাটা ফল অথবা শরবত জাতীয় কিছু খেয়ে ঘন ঘন বমি, পেট খারাপ হচ্ছে, তা হলে আতঙ্কে না ভুগে কী করতে হবে, জেনে রাখুন।
রাস্তার খাবার থেকে বিষক্রিয়া হলে কী ভাবে সামলাবেন?
খাবার বা জল থেকে বিষক্রিয়া মানেই সবচেয়ে আগে শরীরে জলের ঘাটতি হবে। ডিহাইড্রেশনের পাশাপাশি ডায়েরিয়া হলে শরীর থেকে অনেকটা জল, খনিজ উপাদান বেরিয়ে যাবে। তখন ক্লান্তি, মাথাঘোরা, শরীরে অস্বস্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দেবে। তাই সবচেয়ে আগে জরুরি ওআরএস খাওয়া। প্রথমেই দেখতে হবে, প্রস্রাব ঠিক মতো হচ্ছে কি না। না হলে ওআরএস দিতে হবে। ওআরএস দেওয়ার পরে বমি হতে পারে। কিন্তু, উদ্বিগ্ন হলে চলবে না। মুখ ধুয়ে ফের ওআরএস দিতে হবে। শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট, পটাশিয়াম ক্লোরাইড ঢুকলে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
আরও পড়ুন:
ওআরএস খাওয়ার পরেও বমি হতে থাকলে, সে ক্ষেত্রে টাটকা ডাবের জল খাওয়ানো যেতে পারে। ছোটদের ক্ষেত্রে এমন হলে আগে ডাবের জল খাইয়ে দেবেন। এতে শরীরে জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক হবে।
বমি বা পেটের গোলমাল মানেই যে সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে তা নয়। অল্প ভাত, পাতলা ডালের জল খেলে শরীরে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের পরিমাণে সমতা ফিরবে। এই সময়ে কলা খেলে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়বে, তাতে বারে বারে বমি হওয়ার প্রবণতা কমবে।
ক্যামোমাইল চা এই সময়ে উপকারে আসতে পারে। এই চা খালি পেটে খেলেই লাভ হয় বেশি। ক্যামোমাইলের প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে, যা সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপার সমস্যা কমাতেও উপযোগী এই চা। এই চায়ের অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণও রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগারও কাজে আসতে পারে। এক গ্লাস জলে ১ থেকে ২ চা-চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে খেলে হজম ভাল হবে। যদি দেখেন, কিছু খাওয়ার পরেই বমি হয়ে যাচ্ছে, অম্বলের সমস্যা হচ্ছে, তা হলে এই টোটকা উপযোগী হতে পারে। তবে ভিনিগার সকলের সহ্য না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
পেটে ব্যথা, পেটখারাপ, হজমের সমস্যা কমাতে আদা চায়ের জুরি মেলা ভার। এতে সামান্য দারচিনি দিয়ে খেলে উপকার আরও বেশি হবে। ক্লান্তি ভাব কাটবে। অন্ত্রে থাকা খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার প্রভাব মুক্ত করতেও সাহায্য করে আদা। এক কাপ জলে কয়েক টুকরো আদা ও এক ইঞ্চির মতো দারচিনি দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। তার পর ছেঁকে নিয়ে হালকা গরম থাকতে থাকতেই খেয়ে ফেলুন। হজম এবং প্রদাহ সংক্রান্ত সমস্যা নিরাময়ে খুবই উপকারী এই পানীয়।