হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম বড় কারণ শরীরে বাড়তি কোলেস্টেরলের মাত্রা। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়েছে, শুনলেই বেশির ভাগ মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। জীবনযাপনে নানা রকম অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চায় অনীহা, রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা ক্রমাগত বাড়িয়ে দেয়। সবচেয়ে চিন্তার ব্যাপার হল যখন ছোটদের এই সমস্যা দেখা দেয়। বাইরের খাবারের প্রতি ঝোঁক, শরীরচর্চার অভাব শিশুদের স্থূলতার অন্যতম কারণ। সন্তানের মন রাখতে বাবা-মায়েরাও বাইরের খাবার কিনে দিচ্ছেন। যে কারণে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও বাড়ছে।
ছোটদের উচ্চ কোলেস্টেরল পরবর্তী কালে হার্টের রোগ ডেকে আনতে পারে। তাই সাবধান হওয়া জরুরি। অভিভাবকদের জন্য পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর পরামর্শ, উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে প্রক্রিয়াজাত খাবার, কেক, কুকি, পেস্ট্রি, পনির, ঘি, মাখন, চিজ়, জ্যাম বাদ দিতে পারলেই ভাল। ক্রিমযুক্ত দুধ এবং তা থেকে তৈরি ঘি-মাখন যতটা সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। গোটা শস্য, প্রচুর পরিমাণ শাকসব্জি, ফল রাখতে হবে ডায়েটে। তরমুজ, পেয়ারা, কিউই, আপেল, কমলা, কলা, পেঁপের মতে ফল খাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
সন্তান কী কী খাবে তার তালিকা আগে তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে সকালে ও বিকেলে এমন খাবার দিতে হবে যাতে শরীর ভাল থাকে। ছোটরা স্ন্যাক্সে ভাজাভুজি বেশি পছন্দ করে। হালকা খাবার রোজ দিলে খেতেই চাইবে না। তাই খাবার এমন ভাবে পরিবেশন করতে হবে, যা দেখতেও ভাল লাগে এবং পুষ্টিকরও হয়।
কোন দু’টি খাবার নিয়মিত খেলে কোলেস্টেরল কমবে?
সব্জি-ডিমের অমলেট
কী কী লাগবে: ২টি ডিমের সাদা অংশ, আধ কাপ টম্যাটো, আধ কাপ মাশরুমের টুকরো, ১/৪ কাপের মতো পেঁয়াজকুচি, আধ কাপ পালংশাক কুচি, আধ চামচ হলুদগুঁড়ো, আধ চামচ গোলমরিচ, ১ চা-চামচ অলিভ অয়েল, নুন স্বাদমতো।
প্রণালী: দুটি ডিম ফাটিয়ে নুন-মরিচ দিয়ে ফেটিয়ে নিন। প্যানে অলিভ অয়েল দিয়ে তাতে সমস্ত সব্জি দিয়ে হালকা করে সতেঁ করুন। সব্জি সেদ্ধ হলে ফেটিয়ে রাখা ডিম দিয়ে দিন। উপর থেকে ধনেপাতাকুচি, গোলমরিচ ছড়িয়ে দিন। এ পিঠ-ও পিঠ ভেজে তুলে নিন।
কিনোয়ার স্যালাড
কী কী লাগবে: এক কাপ কিনোয়া, এক কাপ জল, আধ চা চামচ দারচিনির গুঁড়ো, এক চা চামচ তিসির বীজ, আধ কাপের মতো কলা কুচিয়ে নেওয়া, আধ কাপের মতো বেরি জাতীয় ফল অথবা পেঁপে, এক চামচ কাঠবাদাম কুচোনো, এক চামচ মধু।
প্রণালী- কিনোয়া প্রথমে সেদ্ধ করে নিয়ে তাতে সব রকম ফল মিশিয়ে দিন। উপর থেকে দারচিনির গুঁড়ো ছড়িয়ে তার সঙ্গে মেশান মধু ও তিসির বীজ। রোজ এক বাটি করে এই স্যালাড খেতে পারলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল দূর হবে।
মরসুমি ফলের স্মুদি
কী কী লাগবে: এক কাপের মতো ওট্স, ১টি কলা, আধ কাপের মতো যে কোনও মরসুমি ফলের কুচি, ১ চামচ চিয়া বীজ, ১ চামচ তিসির বীজ, ১ চামচ আমন্ড বা পিনাট বাটার, আধ চামচ দারচিনির গুঁড়ো।
প্রণালী: সমস্ত খাবার ভাল করে মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিন। এই মিশ্রণ ছেঁকে উপরে কুমড়ো ও তিসির বীজ ছড়িয়ে খেতে পারেন। ভিটামিন, প্রোটিন ও অ্যান্ক্ড্ন্ ভরপুর এই স্মুদি খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমবে।
কোলেস্টরলের সমতার অভাব হওয়ার আরও একটি বড় কারণ হল শরীরচর্চা না করা। ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করলেও নিয়মিত শরীরচর্চা করাও জরুরি। ছোটদের ধেলাধুলা করাতে হবে। সম্ভব হলে বাড়িতেই যোগাসন অভ্যাস করতে পারে।