সারা বছর যে রাশ টেনে ধরে রেখেছিলেন বছর শেষে তা আলগা করার সময়! নতুন বছরে আরও এক বার নিজেকে কড়া নিয়মে বেঁধে ফেলার আগে বর্ষশেষের সপ্তাহটি কিছুটা বাঁধন ছাড়ার। মুশকিল হল, আনন্দ করতে গিয়ে আচমকা ঘনিয়ে আসতে পারে বিপদ। আর পার্টির মরসুমে তা হওয়ার আশঙ্কা একটু বেশিই। দেদার খানাপিনা এবং অনিয়ম হার্টের রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরাই। ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি শুরুর কয়েক সপ্তাহে এ ধরনের হার্টের সমস্যা নিয়ে বহু রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয়। এই সমস্যার একটি নামও আছে— হলিডে হার্ট সিনড্রোম।
হলিডে হার্ট সিনড্রোম কী?
আচমকাই দেখলেন একটু বেশি দ্রুত লয়ে হৃৎস্পন্দন হতে শুরু করেছে। কিংবা বুকে আচমকা চাপ অনুভব করছেন বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হচ্ছে। সঙ্গে হয়তো মাথাঘোরা বা ক্লান্তিবোধের মতো সমস্যাও হচ্ছে। বেঙ্গালুরুর হার্টের চিকিৎসক এবং সার্জন নিরঞ্জন হিরেমাথ জানাচ্ছেন, এই ধরনের সমস্যা হতে পারে পার্টির মরসুমে অতিরিক্ত বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাওয়াদাওয়া, মদ্যপান, অনিয়মিত ঘুমের জন্য। এই ধরনের সমস্যাকেই বলা হয় হলিডে হার্ট সিনড্রোম। কারও হার্টের সমস্যা থাকলে এই সিনড্রোম পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। হলিডে হার্ট সিনড্রোম তাই হেলাফেলা করার নয়। তাঁদের ক্ষেত্রেও নয়, যাঁদের হার্টের কোনও সমস্যা রয়েছে বলে জানেন না। হতে পারে অজান্তেই হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। হলিডে সিনড্রোম তা জানান দিচ্ছে।
কী ভাবে সামলাবেন?
১. উৎসবে আনন্দ যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা। নিজের শারীরিক অবস্থা বোঝা আরও বেশি দরকারি। তাই যাঁদের হাই প্রেসার, সুগার, থাইরয়েড, কোলেস্টেরল এবং স্থূলত্বের মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁরা উৎসবে নিজের সীমা বুঝে খাওয়াদাওয়া করুন। তেমনই পরামর্শ দিচ্ছেন হার্টের চিকিৎসক।
২. মদ্যপান সরাসরি প্রভাব ফেলে হার্টের স্বাস্থ্যে। চিকিৎসক নিরঞ্জন হিরেমাথ বলছেন, ‘‘হার্টের ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস যথাযথ ভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যাঘাত ঘটায় অ্যালকোহল, যা থেকে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের সমস্যা হতে পারে।’’
৩. যাঁরা তেমন মদ্যপান করেন না, তাঁরা আচমকা মদ্যপান করলে এবং বেশি ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেলে, সঙ্গে নাচানাচি করলে, তাঁদের ক্ষেত্রেও হার্টের সমস্যা হতে পারে। তাই এঁরাও সামলে থাকুন।
৪. বুক ধরফরানি, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে অসুবিধা বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হলে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা ভেবে অবহেলা করবেন না। দরকার মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫. আচমকা ক্লান্তিবোধ করা বা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার মতো সমস্যাও হার্টের সমস্যার উপসর্গ হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া জরুরি।
৬. অতিরিক্ত ভাজাভুজি, তেল-মশলা দেওয়া খাবার, কেক-পেস্ট্রি বা বেশি চিনি এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার অল্প পরিমাণে খাবেন। মদ্যপান করলে প্রচুর জল খাওয়ারও চেষ্টা করুন।
৭. পর্যাপ্ত ঘুমোন। দৈনিক অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটির অভ্যাস তৈরি করুন।