দিদিমা, মা, মাসি— সকলেরই ফ্রাইব্রয়েড ছিল। জিনের সূত্র ধরে অজান্তেই সেই রোগ হানা দিতে পারে জরায়ুতে। প্রথম দিকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, পরে অতিরিক্ত রক্তপাত এবং পরবর্তী কালে সন্তানধারণে সমস্যা— ফাইব্রয়েড থাকলে এই ধরনের সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। জরায়ুর ভিতরের দেওয়ালে বা বাইরের দিকে টিউমার তৈরি হয়। জরায়ু কোষের অনিয়মিত বিভাজন হতে থাকলে তা টিউমারের চেহারা নেয়। টিউমার আকারে ছোট হতে পারে আবার তা বেড়ে গিয়ে আয়তনে বড়ও হতে পারে। এই টিউমারকেই বলে ফাইব্রয়েড। মহিলাদের সাধারণত ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে ফাইব্রয়েড হতে দেখা যায়।
জরায়ুর কোন জায়গায় টিউমার তৈরি হচ্ছে, সেই অনুযায়ী ফাইব্রয়েডকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়— ১) সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড, যা জরায়ুর ভিতরে দিকে বা ইউটেরাইন ক্যাভিটিতে হয়, ২) ইন্ট্রামিউরাল, যা জরায়ুর ভিতরের দেওয়ালে তৈরি হয় এবং ৩) সাবসেরোজ়াল, যা জরায়ুর বাইরের দিকে হয়।
মূলত ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রায় হেরফের হলে ফাইব্রয়েড আকার-আয়তনে বাড়তে থাকে। আর হরমোনের হেরফের হয় সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য। শরীরচর্চা, ঘুম তো আছেই। ফাইব্রয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েটের উপর নজর রাখাও বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলি খেলে ফাইব্রয়েড সংক্রান্ত জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। জানেন, সেগুলি কী?
১) প্রক্রিয়াজাত মাংস
সসেজ, সালামির মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারে কৃত্রিম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের খাবার দীর্ঘ দিন ভাল রাখার জন্য এগুলির মধ্যে কৃত্রিম প্রিজ়ারভেটিভও দেওয়া হয়। এগুলি রোজ খেলে হরমোনের মারাত্মক হেরফের হয়। যা ফাইব্রয়েডের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এ সবের বদলে বাড়িতে রান্না করা মাছ, ডিম কিংবা মাংসের পদ খাওয়া যেতে পারে। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, যেমন ডাল, ছোলা, রাজমা, সয়াবিনের মতো খাবারও নিরাপদ।
২) ফ্যাট-যুক্ত দুগ্ধজাত খাবার
ফুল ক্রিম দুধ, ঘি, মাখন কিংবা পনির বেশি খেলেও ফাইব্রয়েড আকার-আয়তনে বেড়ে উঠতে পারে। এই ধরনের খাবারও হরমোনের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। বদলে ফ্যাট-ফ্রি ডবল টোন্ড দুধ, কাঠবাদাম কিংবা সয়াবিনের দুধ খেতে পারেন।
৩) রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট
সাদা রঙের যে কোনও খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। এ ধরনের খাবার রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি, ইনফ্লেমেশন অর্থাৎ প্রদাহজনিত সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে পরোক্ষ ভাবে ফাইব্রয়েড জনিত সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। সুস্থ থাকতে হলে এই ধরনের খাবারের বদলে হোলগ্রেন বা দানাশস্য দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া যেতে পারে।