পুজোয় ভূরিভোজের সঙ্গে আপস না করেই কী ভাবে চাঙ্গা থাকবেন? ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজোর সঙ্গে পেটপুজো অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। ষষ্ঠী থেকে দশমী সকাল-বিকেল-রাত তিন বেলাই চলে দেদার ভূরিভোজ। পুজোর এই ক’টা দিন অনেকেই বাড়িতে রান্না করেন না। ঠাকুর দেখার ফাঁকে ‘স্ট্রিটফুড’ আর রেস্তরাঁর খাবারই ভরসা! মণ্ডপের বাইরে রোল-চাউমিন, মোমো, ফিশফ্রাই, বিরিয়ানির দোকানগুলির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে নাকে আসে সুবাস, তার টান এড়াতে পারেন ক’জন? কিন্তু, রোজ রোজ বাইরের খাবার খেলে দেখা দিতে পারে পেটের গোলমাল। তার উপর ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে। উৎসবের আবহে সুস্থ থাকাটা সবচেয়ে জরুরি।
পুজোর মাস দুয়েক আগে থেকেই সময় ওজন কমানোর জন্য জিমগুলিতে ভিড় বাড়ে। আর পুজো শুরু হলেই ছবিটা একেবারে বদলে যায়। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘পুজোর আগে অনেকেই অনেক রকম কসরত করে ৩-৪ কেজি ওজন ঝরান। তবে পুজোর পরেই দেখা যায়, ওজন আবার আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে। পুরোটাই পুজোর ক’দিন ভুল খাদ্যাভ্যাসের জন্য হয়।’’ পুজোর সময় ভাল-মন্দ খাওয়াদাওয়া করেও কী ভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, তার উপায় বলে দিলেন পুষ্টিবিদ।
১) পুজোর সময় চার বেলাই বাইরে খাওয়াদাওয়া করলে কিন্তু চলবে না। দিনের কোনও এক বেলায় বাইরে খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে বাকি সময়টা বাড়ির খাবার খেতে হবে।
২) বাড়িতে পুজোর সময় ভালমন্দ রান্না হয়। সে ক্ষেত্রে ভাত-রুটি, অর্থাৎ খুব বেশি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার না খেয়ে সব্জি, মাছ, মাংস, দই বেশি করে রাখতে হবে ডায়েটে। পুজোর সময় ভাত-রুটি একেবারে এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল।
৩) রেস্তরাঁর খাবার খেতে হবে সচেতন ভাবে। ভালমন্দ খাওয়ার সঙ্গে আপস করার প্রয়োজন নেই, তবে খাবার বাছাই করতে হবে ক্যালরি বুঝেশুনে। প্রথমে রেস্তরাঁয় গিয়ে স্যুপ খেতে পারেন। তার পর চিকেন, মটন, ফিশের স্টার্টার। বিরিয়ানি খেতে হলে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে খান। তাতে ক্যালরির মাত্রাও ভাগ হয়ে যাবে। বিরিয়ানির সঙ্গে রায়তা খেতে ভুললে চলবে না।
৪) পুজোর সময় রাস্তার ধারের খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হন অনেকই। তবে, যে স্ট্রিটফুডগুলিতে ক্যালরি কম, তেমন খাবার, যেমন মোমো, পেপার দোসা, কবাব-তন্দুরি, ফুচকা (৬টা বড়জোর) বেছে নিতেই পারেন। পুজোর সময় নরম পানীয় একেবারেই এড়িয়ে চলুন।
৫) পুজো মানেই মিষ্টিমুখ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ছানার মিষ্টি খেতে পারেন। মিষ্টির মধ্যে রসগোল্লা খেতে পারেন। অন্যান্য মিষ্টির তুলনায় এই মিষ্টি তুলনায় স্বাস্থ্যকর। ভাজা মিষ্টি এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। ভাজা মিষ্টিতে ময়দা, তেল, রস মিলিয়ে ক্যালোরি অনেক বেশি। জিলিপিতে যে রং মেশানো থাকে, তা কিন্তু আরও ক্ষতিকারক।
পুজোয় দেদার খাওয়াদাওয়া করেও কী ভাবে চাঙ্গা রাখবেন নিজেকে, তার উপায় বাতলে দিলেন পুষ্টিবিদ ও যাপন সহায়ক অনন্যা ভৌমিক। পুজোর সময় হজমের সমস্যা কিংবা পেটের গন্ডগোল এড়িয়ে চলতে হলে সকালে উঠে কিংবা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জিরে ভেজানো জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অনন্যা। ৭-৮ ঘণ্টা আগে এক গ্লাস জলে জিরে ভিজিয়ে রেখে খেলে তবেই সুফল পাবেন। এ ছাড়া পেটের গোলমাল এড়িয়ে চলতে রাস্তার জল ভুলেও খাবেন না। ভাল সংস্থার বোতলবন্দি জল খাওয়া যেতে পারে, খুব ভাল হয় যদি ঘোরাঘুরির সময় নিজের বোতলটি সঙ্গে রাখা যায়। রাস্তায় বিক্রি হওয়া লেবুর শরবত, নরম পানীয়, কুলফির মতো খাবার এই সময় না খাওয়াই ভাল। রোল, চাউমিন খেলেও আগে থেকে কেটে রাখা স্যালাড এড়িয়ে চলুন।
নিয়ম মেনে খেলে তবেই শরীর থাকবে চাঙ্গা
১) পুজোর ক’দিন ফিট থাকতে সবার আগে শরীরে জলের চাহিদা পূরণ করতে হবে। পুজোর হইহুল্লোড়ের মাঝে দিনে আড়াই লিটার জল খেতে ভুললে কিন্তু চলবে না।
২) বেশির ভাগ সময় ভাল খাবার খেয়ে আমাদের পেট ভরে গেলেও মন ভরতে চায় না। এই করে অনেকটা বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তবে পুজোর পাঁচ দিন দু’বেলা ভালমন্দ খেতে হলে খাবারের পরিমাপের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
৩) পুজোর সময় আলাদা করে শরীরচর্চা করার সময় হয় না, তবে চাঙ্গা থাকতে হলে দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করতে হবে। আলাদা করে সময় বার করতে না পারলেও মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখার সময় হাঁটাহাঁটি করলেও চলবে। শরীর যত সচল রাখবেন, ততই ভাল।
৪) যাঁরা ক্রনিক পেটের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া নিষেধ। পুজোর সময়ে ভুলেও সেই নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে চলবে না। খাওয়াদাওয়া করুন, তবে শরীরের খেয়াল রেখে। বাইরে খেতে পারেন, তবে যে খাবারগুলি একেবারে বারণ, সেগুলি ইচ্ছে করলেও খাওয়া চলবে না। আর রোজকার ওষুধের সঙ্গে কোনও রকম আপস করা চলবে না।
৫) পুজোর সময় বাইরের খাবার খেলে অসুবিধা নেই, তবে কোন জায়গা থেকে খাবার খাচ্ছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তার ধারে যে দোকানগুলিতে সকাল থেকে রাত অবধি একই তেলে ভাজাভুজি হয়, সেই খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy