পেটফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা এ যুগের অধিকাংশ মানুষের নিত্যসঙ্গী। সকালে উঠে চা খাওয়া, কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার মতো খাওয়ার পরে পেটের অস্বস্তিও এক রকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। হয়তো তাই গ্যাস-অম্বল-হজমের সমস্যার সমাধান করতে আর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয় না। অসুখকে ঠেকিয়ে রাখা হয় জোয়ান-অ্যান্টাসিড-জল ইত্যাদি দিয়ে। টনক নড়ে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার পরে। অথচ চাইলে একটু সতর্ক হয়ে গোড়াতেই সমস্যাকে রুখে দেওয়া সম্ভব।
আমেরিকার অস্টিয়োপ্যাথিক বোর্ড অফ ইন্টারনাল মেডিসিনের অনুমোদনপ্রাপ্ত চিকিৎসক, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট জোসেফ সালহাব জানাচ্ছেন, কয়েকটি বিষয় জানা থাকলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে সহজেই। তাতে যেমন তাৎক্ষণিক স্বস্তি মিলবে, তেমনই সমস্যা বেড়ে জটিল রোগ হওয়ার ঝুঁকিও কমবে। সালহাব তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘‘পেটফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যার সমাধানে অব্যর্থ কিছু টোটকা জেনে রাখুন।’’
একটু সতর্ক হয়ে গোড়াতেই সমস্যাকে রুখে দেওয়া সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত।
গ্যাসের সমস্যা হলে কী করবেন?
১। গ্যাসের সমস্যা হলে বা পেট ফেঁপে থাকলে পাকা পেঁপে বা কিউয়ি ফল খান। এটি জমে থাকা গ্যাসকে শরীর থেকে বার করে দেবে।
২। পেট ফাঁপা অথবা গ্যাস জমে থাকার সমস্যা হলে আরও একটি কার্যকরী সমাধান হল হাঁটা। সকালে হোক, রাতে হোক— যে কোনও সময়ে এমন অস্বস্তি হলে বাড়ির কাছে রাস্তায় অথবা ছাদে মিনিট দশেক হাঁটাহাঁটি করলেই উপশম হবে সমস্যার।
৩। গ্যাস জমে বুকে, পেটে এবং পিঠে ব্যথা হয় অনেকেরই। অনেক ক্ষেত্রে সেই যন্ত্রণা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। গ্যাসের ব্যথার জন্য হাসপাতালেও নিয়ে যেতে হয় বহু রোগীকে। চিকিৎসক সালহাব জানাচ্ছেন, পুদিনাপাতার চা গ্যাসের ব্যথা কমাতে পারে।
জমে থাকা গ্যাসকে শরীর থেকে বার করে দিতে পারে পেঁপে। ছবি: সংগৃহীত।
কী কী করবেন না?
১। ব্রকোলি, ফুলকপি, বাঁধাকপির মতো সব্জিতে থাকে এমন এক ধরনের চিনি জাতীয় উপাদান, যা হজম করা কঠিন। এই ধরনের খাবার অন্ত্রে পৌঁছনোর পরে গেঁজিয়ে উঠে গ্যাস তৈরি করতে পারে। তাই পেট ফাঁপার সমস্যা থাকলে ওই ধরনের সব্জি এড়িয়ে চলাই ভাল।
২। কম খেলেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। অনেকেই রোগা হওয়ার জন্য দিনে এক বেলা বা দু’বেলা খাবার খান। আবার গ্যাসের সমস্যায় পেট ভার হয়ে থাকলেও দীর্ঘ ক্ষণ খাওয়ার কোনও ইচ্ছা থাকে না। সালহাব বলছেন, দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকলেও তা হজম প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দেয়। এতে খাবার খাওয়ার পরে তা যথাযথ ভাবে ভাঙে না। তা থেকেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
৩। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের প্রভাব ফেলতে পারে। তা থেকেও হতে পারে পেট ফাঁপা বা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা।
রাত জাগার অভ্যাসও হতে পারে গ্যাসের সমস্যার কারণ। ছবি: সংগৃহীত।
৪। মানসিক চাপ বা উদ্বেগের মধ্যে থাকলেও তা থেকে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। এমনকি, অনেকের এ থেকে পেটখারাপও হতে পারে। তাই পেটের সমস্যা থাকলে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভাল আছে কি না। এমন কিছু করবেন না, যা থেকে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে।
৫। খাবার মুখে তোলার পরে ১৫-৩০ বার চিবিয়ে তবে খান। অনেকেরই দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তাঁরা অল্প চিবিয়েই খাবার গিলে নেন। এমনটা করলে পেট ফাঁপা আর গ্যাস-অম্বলের সমস্যা বাড়বে।