পুজোর সবচেয়ে গুরুভোজটি হয় নবমীর দুপুরে। পুজোর শেষ দিন বলে কথা। আনন্দ লুটে নেওয়ার শেষ সুযোগও বটে। কারণ রাত পেরোলেই বিষাদের সুর। তাই নবমীতে বন্ধু-বান্ধব পরিবারের সঙ্গে ঢালাও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন থাকে। দুপুরের খাবার তো বটেই। রাতেরও প্ল্যান শেষ হতে চায় না। এমতাবস্থায় যদি দুপুরের গুরুভোজেই শরীর বিগড়োয় তা হলে কী করবেন?
শরীর খারাপ বলে কি রাতের জন্য যেসমস্ত পানাহারের পরিকল্পনা রেখেছিলেন, তা বাতিল করবেন? একেবারেই না। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পেট ভারমুক্ত করার উপায় আছে। যা শরীরের অস্বস্তি কাটিয়ে চাঙ্গা করে তুলতে পারে আপনাকে। এইমস প্রশিক্ষিত আমেরিকা নিবাসী গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট সৌরভ শেট্টি বলছেন, কয়েকটি টোটকা খুব সহজেই পেটের ভার হয়ে থাকা বা ব্লোটিং কমাতে সাহায্য করতে পারে।
১. হালকা হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চা
খুব দ্রুত গ্যাস দূর করার একটি কার্যকর উপায় হলো হাঁটাহাঁটি বা হালকা শরীরচর্চা। এগুলি হজমের প্রক্রিয়াকে জাগিয়ে তোলার কাজ করে। পাশাপাশি, অন্ত্রে আটকে থাকা গ্যাস ও বর্জ্য বের করে দিতেও সাহায্য করে। পবনমুক্তাসন বা চাইল্ড পোজ়-এর মতো কিছু যোগাসন করে দেখতে পারেন। অথবা মিনিট ১৫ সাধারণ গতিতে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন কাছাকাছি রাস্তায় বা বাড়ির ছাদে।
২. উষ্ণ পানীয়
আদা চা, গোলমরিচ দিয়ে তৈরি চা, গ্রিন টি, ক্যামোমাই টি, মৌরি দিয়ে তৈরি চা খেতে পারেন। প্রথমত গরম জল হজম প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। তার পাশাপাশি আদা হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমাতেও কার্যকর। গোলমরিচ অন্ত্রের পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে, যা গ্যাস সহজে বের হতে দেয়। অন্য চা গুলিও হজমপ্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
৩. পেটে মাসাজ
সোজা হয়ে শুয়ে পেটে আলতো করে মাসাজ করুন। ডান পাঁজরের নিচ থেকে শুরু করে ওপরের দিকে, তারপর পেট জুড়ে বাঁ দিকে, এবং তারপর বাঁ দিকের নিচের দিক পর্যন্ত মাসাজ করুন। পেটের যে যে অংশ দিয়ে বৃহদন্ত্র গিয়েছে ঠিক সেই অংশের উপরে মাসাজ করলে তা আটকে থাকা গ্যাস বের করে দিতে সাহায্য করতে পারে।
৪. গরম সেঁক
পেটে একটি গরম জলের বোতল বা হট প্যাড ব্যবহার করে সেঁক দিন। উষ্ণ সেঁক পেটের পেশীগুলিকে শিথিল করে এবং অন্ত্রের ভিতরের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। এতেও জমে থাকা গ্যাস বেরিয়ে আসবে সহজে।
৫. ওষুধ
যদি পেট ফাঁপার কারণ অতিরিক্ত গ্যাস হয়, তাহলে গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার বাজার চলতি ক্যাপসুলও খেতে পারেন। তবে ওষুধ খাওয়ার আগে এক বার নিজের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া ভাল।
আরও পড়ুন:
সতর্কতা
১। দ্রুত পেট ফাঁপার সমস্যা বা পেট ভার হয়ে থাকা কমাতে অনেকেই কার্বোনেটেড পানীয় খেয়ে নেন। সেটা করতে বারণ করছেন চিকিৎসক সৌরভ। তিনি বলছেন ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ব্লটিং কমাতে হলে কার্বনেটেড পানীয় এবং চুইংগাম এড়িয়ে চলাই ভাল, কারণ এগুলি পেটে আরও গ্যাস তৈরি করে।
২।অনেকের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যও পেট ফাঁপার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে জল বেশি করে খেলে সুবিধা হতে পারে।
৩। তাতেও পেটের অস্বস্তি যদি না কমে বা যদি তীব্র ব্যথা, ডায়েরিয়া, বা মলের সঙ্গে রক্তপাতের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।