বাঙালির খাদ্যপ্রেম বরাবরই বেশি। আলাদা কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানের দরকার পড়ে না, চোখের সামনে মুখরোচক খাবার দেখলেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে। পেট ভর্তি করে খাওয়ার পরেও পছন্দের খাবার দেখলে লোভ সামলানো যায় না। আর খাবার খাওয়ার সময় পরিমাণের কথা একেবারেই মাথায় আসে না। পরে যদিও মনে হয়, এতটা না খেলেই বোধহয় ভাল হত। খাবার খাওয়ার এই অভ্যাস থেকে অনেকেই বেরোতে চান, কিন্তু মনকে বোঝাতে পারেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই সমস্যাটিকে ‘বি়ঞ্জ ইটিং ডিজ়অর্ডার’ বলা হয়। সারা ক্ষণ খাই খাই করার বাসনায় যদি লাগাম পরাতে না পারেন, তা হলে সেটিকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে বদলে ফেলুন।
কেন সারা ক্ষণ খাই খাই করেন?
বিঞ্জ ইটিং আসলে এক ধরনের ইটিং ডিজ়অর্ডার। স্থূলত্ব যাঁদের রয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই এই সমস্যায় ভোগেন। তবে স্থূলকায় না হলেও, বিঞ্জ ইটিংয়ের সমস্যা থাকতে পারে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, বিঞ্জ ইটিং-এর সঙ্গে মস্তিষ্কের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। অতিরিক্ত উদ্বেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তার কারণে বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। আর বিশেষ করে জাঙ্ক ফুড খেতেই বেশি ইচ্ছা করে। অতিরিক্ত লবণ দেওয়া খাবারের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, পেট ভর্তি করে খাবার খাওয়ার পরেও চিপস, নাগেটস, বার্গার, পিৎজ়া দেখলে খেতে ইচ্ছে করে। আবার বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার দেখলেও খাওয়ার ইচ্ছা হয়।
আরও পড়ুন:
বিঞ্জ ইটিং কী ভাবে স্বাস্থ্যকর হতে পারে?
বিঞ্জ ইটিং কমানোর জন্য ডায়েটে প্রোটিনসমৃদ্ধ স্ন্যাক্স, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফাইবার এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ খাবার থাকা খুব জরুরি। সল্টেড পপকর্নে কোনও ক্ষতি নেই। তবে মাখন, চিজ় দেওয়া পপকর্ন খাওয়া শরীরের জন্য ভাল নয়। যদি মুখরোচক কিছু খেতে ইচ্ছে করে, তা হলে চিপস বা নাগেটস, না খেয়ে পপকর্ন খেতে পারেন।
পেট ও মন দুইয়ের খোরাকের জন্যই রোস্টেড মাখনা ভাল বিকল্প। এটি হাতের কাছে রেখে দিতে পারেন।
চানা রোস্ট করে খেলে শরীরের উপকার হয়, আবার পেটও ভর্তি থাকে। বিঞ্জ ইটিং বন্ধ করতে চাইলে, এই খাবারটি খেতে পারেন।
কলার চিপস খেলে স্বাদ ও সুস্থতা দুই-ই বজায় থাকে। নোনতা কিছু খেতে ইচ্ছে হলে, আলুর চিপস বা চানাচুরের বিকল্প হতে পারে কলার চিপস।
নাট বাটার এনার্জি বল টিফিন বাক্সে রেখে দিন। এটি খেলে ফাইবার ঢুকবে শরীরে, অনেক ক্ষণ পেটও ভর্তি থাকবে। এক কাপের মতো রোল্ড ওট্স, আধ কাপ মাখন, আধ কাপের মতো মধু, এধ কাপ নানা রকম বীজ ও বাদাম নিয়ে নিন। সমস্ত উপকরণ মিশিয়ে নিয়ে ওট্স মেখে গোল গোল করে নিন। এ বার বেকিং সিটে রেখে ফ্রিজে আধ ঘণ্টার মতো রেখে দিন। খুব সুন্দর স্ন্যাক্স তৈরি হয়ে যাবে।
বিঞ্জ ইটিংয়ে মিষ্টি বা ওই ধরনের খাবারের দিকেও ঝোঁক বেশি থাকে। তার বিকল্প হিসেবে ঘরে কিছু তৈরি করে রাখা যায়। যেমন, জলে ভেজানো ড্রাই ফ্রুটস, পিনাট বার, তিলের বার খাওয়া যেতে পারে।
রাবড়ি, পায়েস খেতে ইচ্ছে হলে বানিয়ে নিন ওট্সের ক্ষীর। ওট্স শুকনো খোলায় মিনিট পাঁচেক ভেজে নিন। এর সঙ্গে দুধ মিশিয়ে দু’টি ছোট এলাচ থেঁতো করে দিন। দুধ ও ওট্স ঘন করে জ্বাল দিয়ে তাতে খেজুর, কাঠবাদাম কুচি, কিশমিশ মিশিয়ে দিন। মিশ্রণটি ঘন হলে উপরে ছোট ছোট করে কাটা কলা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন। এটি খেলে মনও ভরবে, স্বাস্থ্যও বজায় থাকবে।