রাতে শুলেই গলার কাছে জ্বালা, চোঁয়া ঢেকুরে ঘুমের দফারফা হয়। অম্বলের ধাত যাঁদের আছে, এই কষ্ট তাঁরা বিলক্ষণ বোঝেন। রাতের খাওয়া একটু ভারী হলেই মুশকিল। শোয়ার পরেই শুরু হবে গলা-বুক জ্বালা। তখন হজমের ওষুধ খাওয়া ছাড়া গতি নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই সমস্যাকে বলে ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজ়িজ়’ বা ‘জিইআরডি’। 'অ্যাসিড রিফ্লাক্স' নামেই বোঝেন অনেকে। এর থেকে রেহাই পেতে সকালে খালি পেটে ওষুধ খান অনেকেই। রাতে সমস্যা হলে তখনও হাতের কাছে ওষুধ রাখতে হয়। গলা-বুক জ্বালার কষ্ট যদি ওষুধ ছাড়া কমাতে হয়, তা হলে দু’টি টোটকা রয়েছে।
চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক জানাচ্ছেন, পাকস্থলীর খাদ্যবস্তু মুখগহ্বর এবং পাকস্থলীর সংযোগকারী খাদ্যনালির মধ্য দিয়ে উল্টো দিকে প্রবাহিত হলেই এই সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে পুরো খাদ্যনালি জুড়ে জ্বালার অনুভূতি হয়। এই অংশের পেশির বলয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিঙ্কটার’ বা ‘এলইএস’ বলা হয়। এই অংশটি অন্য সময়ে বন্ধ থাকে। শুধু মাত্র খাবার গেলার সময়েই তা শিথিল হয় ও খুলে যায়। ফলে খাবার ঢুকতে পারে খাদ্যনালিতে। যদি এই পেশিগুলি দুর্বল হয়ে যায় বা এদের গঠনগত ত্রুটি থাকে, তা হলে খাবার এবং পাকস্থলী থেকে পাচকরস খাদ্যনালি দিয়ে উপরে উঠে আসতে থাকে। এতে হজমের সমস্যা যেমন বাড়ে, তেমনই রাতের ঘুমও নষ্ট হয়। এমন সমস্যা যদি শুরু হয়, তা হলে দু’টি কাজ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:
১) রাতের খাবার খাওয়ার পরেই একটি চিউইং গাম মুখে রাখবেন। তবে এমন চিউইং গাম কিনতে হবে, যাতে মিষ্টি বেশি নেই। আধ ঘণ্টার মতো সেটি চিবোতে হবে। এতে লালারস পাকস্থলী থেকে উঠে আসা অম্লরসের তীব্রতা কমিয়ে দেবে। তখন পাচক রস উপরে না উঠে, নীচে নেমে যাবে। ভাল ফল পেতে এমন চিউইং গাম কিনুন, যাতে মিন্ট ফ্লেভার নেই কিন্তু বাইকার্বোনেট আছে, যা খাদ্যনালিকে ‘ডিটক্স’ করবে। এতে কষ্ট অনেকটা কমবে।
২) রাতে সব সময়ে বাঁ দিকে ফিরে শুতে হবে। যে দিকে মাথা দিয়ে শোবেন, সেই অংশটি বালিশ দিয়ে একটু উঁচু করে রাখতে হবে। প্রয়োজনে দু’টি বালিশ একসঙ্গে রাখা যেতে পারে। মাথা ৬-৮ ইঞ্চি উঁচুতে থাকলে ভাল। এতে খাদ্যনালি দিয়ে অম্লরস গলার কাছে উঠে আসতে পারবে না।
তা ছাড়া হজমের গোলমাল থাকলেও রাতে খুব বেশি পরিমাণে কিংবা তেলমশলা দেওয়া ভারী খাবার খাওয়া যাবে না। রাতের খাবার খাওয়ার সময়ও এগিয়ে আনতে পারলে ভাল হয়।