ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, সি, ডি, ই নিয়ে যত চর্চা হয়, ততটা কিন্তু ভিটামিন বি১২ নিয়ে হয় না। অথচ এই ভিটামিনের অভাব হলে, বিগড়ে যেতে পারে শারীরিক কার্যকলাপ। ঝিমুনি, হাত-পা অসাড় হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরার মতো অনেক লক্ষণই দেখা দিতে পারে এই ভিটামিনের অভাবে। ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতিতে দেখা দিতে পারে রক্তাল্পতা। হতে পারে ‘মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া’। পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে, ডিএনএ সংশ্লেষে এই ভিটামিনটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কোনও কারণে সেই মাত্রা কমে গেলে শারীরিক কার্যকলাপে তার প্রভাব পড়তে পারে।’’
চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, ডায়েট থেকে ভিটামিন বি১২ নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। প্রাণিজ খাবারে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি১২ থাকে। ডিম, মাশরুম, রেড মিট, চিকেন, মাংসের মেটে, সামুদ্রিক মাছের মতো খাবার ভিটামিন বি১২-এর সমৃদ্ধ উৎস। সমস্যা এখানেই। যাঁরা নিরামিষ খান বা ভিগান, অর্থাৎ প্রাণিজ কোনও খাবার ছুঁয়েই দেখেন না, তাঁরা কোথা থেকে এই ভিটামিন পাবেন?
টক দই এবং ইয়োগার্ট: নিরামিষাশী হলে টক দই বা ইয়োগার্ট পাতে রাখা জরুরি। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য প্রোবায়োটিকের অন্যতম উৎসই হল এই দুই খাবার। ভিগানেরা অবশ্য দুধ থেকে তৈরি টক দই বা ইয়োগার্ট খান না। তবে নিরামিষাশীদের জন্য এটি ভিটামিন বি১২-এর ভাল উৎস।
আরও পড়ুন:
দুধ: দুধ খেলেও ভিটামিন বি ১২-এর চাহিদা পূরণ হতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাধারণত দৈনিক ২.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২ দরকার হয়। সেই চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ হতে পারে এক কাপ দুধ খেলে।
ফর্টিফায়েড উদ্ভিজ্জ দুধ: ভিগানেরা প্রাণিজ খাবার খান না। তাই তাঁদের জন্য রয়েছে উদ্ভিদজাত উৎস থেকে প্রাপ্ত দুধ। সেই তালিকায় কাঠবাদামের দুধ, সয়া দুধ, ওট্সের দুধ থাকে। ফর্টিফায়েড দুধে বাইরে থেকে নির্দিষ্ট ভিটামিন এবং খনিজ মেশানো হয়। ফর্টিফায়েড দুধ কেনার সময় দেখে নেওয়া দরকার তাতে নির্দিষ্ট ভিটামিনটি রয়েছে কি না।
চিজ়: নিরামিষাশীরা সংশ্লিষ্ট ভিটামিনটির জন্য খাবার তালিকায় চিজ়ও রাখতে পারেন। প্রোটিনে ভরপুর চিজ়ে নানা রকম ভিটামিন এবং খনিজ মেলে। তবে চিজ়ে উচ্চমাত্রায় ক্যালোরি থাকে। ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করে লো-ফ্যাট চিজ় বেছে নেওয়া যেতে পারে।
ফর্টিফায়েড সিরিয়াল: এখন অনেকেই দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় সিরিয়াল রাখেন। ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতিপূরণে ফর্টিফায়েড সিরিয়াল জুড়তে পারেন ভিগানেরা। নিরামিষাশীরাও এই খাবার খেতে পারেন।
পুষ্টিবিদ অনন্যার পরামর্শ, ভিটামিন বি১২ এবং ফোলেট রয়েছে এমন খাবার একসঙ্গে খাওয়ার। এতে শরীর যথাযথ ভাবে ভিটামিন বি১২-এর পুষ্টিগুণ পাবে, বলছেন তিনি। পালংশাক, বাঁধাকপি, লেটুসের মতো সব্জিতে ফোলেট মেলে। বিভিন্ন ধরনের ডাল, কাবলি ছোলা, রাজমাতেও ফোলেট থাকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডায়েট থেকে ভিটামিন১২ নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়, না হলে সাপ্লিমেন্টেই ভরসা করতে হবে।