টানা বৃষ্টির পরেই চিটচিটে গরম আর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ত্বক ও চুলের নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এক দিকে আর্দ্রতা, অন্য দিকে ধুলোবালি আর চটচটে ঘামের ফলে চুল-ত্বক দুর্বল ও নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে। এই মরসুমে চুল পড়ার সমস্যাও বেড়ে যায়। তবে একটু সচেতন হলেই এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে এ সময়ে ত্বক ও চুলের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কী ভাবে চুল আর ত্বক পরিষ্কার ও প্রাণবন্ত রাখবেন, রইল সেই টিপস—
মুখে অতিরিক্ত তেল ও ব্রণ...
বর্ষাকালে আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে ত্বকও তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। এ সময়ে ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তেল বা সিবাম নিঃসরণ করে। তৈলাক্ত ত্বক হলে এ সময়ে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। অনেকের আবার এ সময়ে ত্বক শুষ্ক থাকলেও নাকের দু’পাশে তেল নিঃসরণ হয়। ফলে ব্ল্যাকহেডস, ব্রণর সমস্যা বেড়ে যায়। ত্বকের অতিরিক্ত সিবাম ধুলো ও মৃতকোষের সঙ্গে মিশে রোমকূপ বন্ধ করে দেয়, যে কারণে ব্রণ হয়। তাই এ সময়ে ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে।
সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার মুখ ধুতে হবে। সকাল-সন্ধে তেলবিহীন ও অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে শুতে যাওয়ার আগে বরফ-ঠান্ডা জলে মুখ ধুলে উপকার পাবেন। অতিরিক্ত তেল বেরোলে বরফজল দিয়ে দিনে দু’-তিন বার মুখ ধুয়ে ফেলতে পারেন। এর পর হালকা জেলবেসড ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করুন। এতে অনেকটাই উপকার পাবেন।
তবে শুধু মুখ নয়, হাত-পায়ের ত্বকের যত্নও নিতে হবে এ সময়ে। ভাল বডি অয়েল মাসাজ করতে পারেন স্নানের আগে। আর অবশ্যই সপ্তাহে একবার হোল বডি স্ক্রাব করবেন।
চুলের হরেক সমস্যা
বর্ষা মানেই সময়-অসময়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ছাতার আড়ালে বৃষ্টির ফোঁটা থেকে সব সময়ে নিজেকে বাঁচানো যায় না। বৃষ্টিস্নাত চুল নিয়ে তখন ঝামেলা হয়। তবে শুধু বৃষ্টির দোহাই দিলে চলবে না। গোটা বর্ষাকাল জুড়েই চুলের কিছু না কিছু সমস্যা লেগেই থাকে। চুল পড়া থেকে শুরু করে আরও নানা সমস্যা শুরু হয়ে যায়। এই সময়ে চুল অত্যধিক রুক্ষ হয়ে যায়। কিছু নিয়ম মেনে চললে চুল নিয়ে আর বিপাকে পড়তে হবে না। মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত শ্যাম্পু করুন। চুলে বেশি তেল ব্যবহার করা যাবে না। চুল ভাল করে শুকিয়ে নিন। অন্যের চিরুনি ও তোয়ালে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত ঘাম হলে মুছে নিন।
বর্ষায় স্ক্যাল্পে ছত্রাক বা ইস্ট জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার জন্য স্ক্যাল্প থেকে তেল বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়, তারই ফলস্বরূপ খুশকি। এর থেকেই মাথায় চুলকানি হয়। খুশকি সারাতে সাধারণ শ্যাম্পুর পরিবর্তে সপ্তাহে দুই দিন অ্যান্টিড্যানড্রফ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। বৃষ্টিতে ভিজলে সঙ্গে সঙ্গে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি চুল ধোয়া সম্ভব না হয়, চুল শুকিয়ে নিন। খুশকি হলে আধ কাপ জলে এক কাপ টক দই মিশিয়ে তার মধ্যে তুলো ডুবিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে মাসাজ করুন। এ ছাড়া নারকেল তেলে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে স্ক্যাল্পে মালিশ করে, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালেও খুশকি কমে যাবে।
ছাঁচি পেঁয়াজের রস ও নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে মাসাজ করতে পারেন। এতে খুশকি দূর হয়। সপ্তাহে এক দিন প্রোটিন ট্রিটমেন্ট বা হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। এতে চুল পুষ্টি পাবে, চুল পড়াও কমবে।
পায়ের ত্বকে সংক্রমণ ও দুর্গন্ধ
বর্ষাকালে রাস্তায় হাঁটার সময়ে জমে থাকা বৃষ্টির জলে পা ভিজে যায়। এই জলে থাকে নানা ধরনের ব্যাক্টিরিয়া ও ছত্রাক সহজেই পায়ের ফাটা অংশ দিয়ে শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ছড়ায়। ভেজা জুতা ও মোজা পরে দীর্ঘক্ষণ থাকলেও পায়ে ফাঙ্গাল বা ব্যাক্টিরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। এর থেকে পায়ে দুর্গন্ধ হয়। ঘরে ফিরে সাবান দিয়ে পা ধুয়ে মুছে শুকিয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত একদিন পেডিকিয়োর করাতে হবে। চাইলে বাড়িতেই পেডিকিয়োর করতে পারেন। তার জন্য ঈষদুষ্ণ জলে সামান্য ডেটল, আধ কাপ পাতিলেবুর রস ও নুন মিশিয়ে তার মধ্যে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এর পর ঝামা বা ব্রাশ দিয়ে পা ঘষে নিন। তার পর পছন্দমতো কোনও একটি প্যাক লাগিয়ে নিন পায়ে। এতে পা ভাল থাকবে। পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে ফটকিরি মেশানো জলে পা ধুয়ে নিতে পারেন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ফুট ক্রিম মাখতে হবে। হাতেও হ্যান্ড ক্রিম মেখে নিন। এতে ত্বক পেলব থাকবে।
ত্বক ও চুল ভাল রাখার গোড়ার কথা হল যত্ন। বর্ষায় যেহেতু আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, তাই এ সময়ে ত্বকের পরিচর্যা নিয়মিত করতে হবে।
মডেল: ঐশ্বর্য সেন, নয়নিকা সরকার
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)