প্লাস্টিক বা কাচের বোতল এখন সেকেলে। অনলাইন শপিং সাইটগুলি খুললেই দেখতে পাবেন, তাতে তামা বা স্টেনলেস স্টিলের তৈরি হরেক রকমের বোতলের ছড়াছড়ি। তামার বোতল, তামার গ্লাস, এমনকি নানা নকশা করা তামার কাপও বিক্রি হচ্ছে দেদার। সেগুলির দামও কিছু কম নয়। কাচের বা প্লাস্টিকের বোতলের চেয়ে ঢের বেশি দাম দিয়ে তামা বা স্টিলের তৈরি জলের বোতলই কিনছেন লোকজন। বিশেষ করে তামার তৈরি নানা রকমের পাত্রের চাহিদাই বেশি। কারণ, আগেকার দিনের মতো তামার বোতল বা গ্লাসে জল খাওয়ার ‘ট্রেন্ড’ তৈরি হয়েছে। তামার পাত্র থেকে জল খেলে শরীর ভাল থাকবে, ওজন কমবে, এমনই ধারণা অনেকের। এই যে অভ্যাস তৈরি হয়েছে, তা কতটা স্বাস্থ্যকর? তামার বোতল থেকে জল খাওয়ার ভালমন্দ বোঝালেন যাপন প্রশিক্ষক ও তারকা পুষ্টিবিদ লিউক কুটিনহো।
লিউক একাধারে পুষ্টিবিদ, ফিটনেস প্রশিক্ষক ও যাপন-গুরু। অনুষ্কা শর্মা, মনোজ বাজপেয়ী, আমির খান থেকে চলচ্চিত্র জগতের অনেক তারকাই তাঁকে অনুসরণ করে চলেন। বিশেষ করে ‘দঙ্গল’ সিনেমায় আমির খান তাঁর চেহারায় যে পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন, তা লিউকের পরামর্শ মেনেই করেছিলেন। লিউক জানিয়েছেন, একটা সময়ে মা-ঠাকুরমাদের তামার গ্লাসে জল খেতে দেখা যেত। প্রাচীন ভারতে তামার তৈরি পাত্রেরই প্রচলন ছিল বেশি। শরীর ঠিক রাখতে ও হজমশক্তি বাড়াতে সারা রাত তামার গ্লাসে জল রেখে তা সকালে উঠে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ত। তামা বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ায় তাতে কোনও সন্দেহই নেই। তবে কী ভাবে ব্যবহার করছেন ও কত বার, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করছে।

তামার বোতলে জল রেখে দেওয়া কি ভাল? ছবি: ফ্রিপিক।
আগেকার সময়ে তামার পাত্র ব্যবহার হত ঠিকই, তবে দিনে হয়তো একবার বা দু’বার তামার গ্লাস থেকে জল খাওয়া হত। বাকি সময়টাতে মাটির কলসি বা ঘড়াতেই জল রাখা হত। ফিল্টার আসার আগে মাটির কুঁজোতেই জল রাখা হত। তা থেকে গ্লাসে ঢেলে জল খাওয়া হত। কিন্তু এখন উল্টোটাই হচ্ছে। তামার উপকারিতা অনেক ভেবে তামার বোতলেই দিনভর জল ভরে রেখে দেওয়া হচ্ছে। ফলে শরীরে অত্যধিক পরিমাণে তামা ঢুকছে, যা নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে।
এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মত, তামা থাইরয়েডের সমস্যা কমাতে পারে। কিন্তু যদি সারা দিন তামার গ্লাস বা বোতল থেকে জল খেয়ে যান, তা হলে শরীরে তামার মাত্রা বাড়বে। তখন থাইরেয়ড গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার হার্ট ভাল রাখতে, হাড় মজবুত করতে, রক্তে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়াতেও কার্যকরী তামা। কিন্তু একই ভাবে তামা যদি বেশি পরিমাণে রক্তে মেশে, তখন তা রক্তসঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটাবে। হজম ভাল করার বদলে বদহজমের সমস্যা বেশি দেখা দেবে। সেই সঙ্গে পেটফাঁপা, বমি ভাব, ঝিমুনি ভাব বাড়বে। খাদ্যনালিতে সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়বে। তামার বোতলে লেবুর জল, গরম জল বা ডিটক্স পানীয় রেখে খেলে পেটের সমস্যা ভোগাবেই।
পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, তামার বোতলে জল খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। বেশি মাত্রায় তামা শরীরে প্রবেশ করলে কিন্তু হিতে বিপরীত পারে। নিজেদের অজান্তেই এমন কিছু ভুল হচ্ছে, যা থেকে বিপদ বাড়ছে। উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রোগ বা কিডনির রোগ থাকলে তামার বোতল বুঝেশুনে ব্যবহার করতে হবে। দিনে এক বার তামার গ্লাসে জল খাওয়া ভাল, তবে সারা দিন যদি তামার বোতলে জল রেখে সেই জল খেতে থাকেন, তা হলে শরীরের নানা ক্ষতি হতে বাধ্য।