Advertisement
E-Paper

চোখের রং পান্না-সবুজ না সমুদ্রের মতো নীল? আদৌ কি মণির কোনও রং হয়?

ঘন নীলরঙা চোখও বেশি দেখা যায় না। হ্যাজ়েল রং অর্থাৎ, কিছুটা বাদামি আর কিছুটা সবুজের মিশেল, এমন চোখও কম জনেরই হয়। এই যে বিশ্ব জুড়ে চোখের নানা রং দেখা যায়, তা কি আসলে মণিরই রং?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৪৩
What are the genetics of eye colour

চোখের মণির সত্যিই কি কোনও রং হয়? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আপনার মণির রং কি কালো? এশিয়দের মধ্যে তেমনটাই বেশি হয়। কালেভদ্রে কয়েক জনের মণির রং পান্নার মতো সবুজ অথবা সমুদ্রের জলের মতো নীল হয়। ইউরোপিয়দের চোখের রং ধূসর বাদামি বা হালকা নীল বর্ণের হয়। সবজেটে মণির রং বিরল। বিশ্বে ২০ শতাংশের আছে। আবার ঘন নীলরঙা চোখও বেশি দেখা যায় না। হ্যাজ়েল রং অর্থাৎ, কিছুটা বাদামি আর কিছুটা সবুজের মিশেল, এমন চোখও কম জনেরই হয়। এই যে বিশ্ব জুড়ে চোখের নানা রং দেখা যায়, তা কি আসলে মণিরই রং? না কি পুরোটাই দৃষ্টিভ্রম?

‘নেচার’ জার্নালে চোখের রং নিয়ে একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞান দাবি করেছে, চোখের রং একটাই। কর্নিয়ার পিছনের কালো গোলাকার পর্দা হল আইরিস, তার চারপাশে পেশির স্তর থাকে, যা মূলত নানা রঙের দেখায়। এই রং বদলের কারণ মূলত তিনটি— প্রথমত, আলোক বিচ্ছুরণ, দ্বিতীয়ত, মেলানিন রঞ্জকের তারতম্য এবং তৃতীয়ত, জিনগত।

মেলানোসাইট কোষ থেকে তৈরি মেলানিন রঞ্জক যেমন ত্বকে থাকে, তেমনই চোখেও থাকে। এই রঞ্জকের তারতম্যের কারণে কারও গায়ের রং ধবধবে ফর্সা, কেউ শ্যামবর্ণ। চোখেও তেমনই হয়। মেলানিন বেশি থাকলে রং হবে গাঢ়, কম থাকলে হবে ফ্যাকাশে। ত্বকের মতো চোখের রংও নির্ধারণ করে এই মেলানিন। চোখের মণিতে উপস্থিত মেলানিনের মাত্রাই বলে দেয়, রং ঠিক কেমন হবে, খুব গাঢ় না কি হালকা। এ তো গেল রঙের মাত্রার হেরফের। রং ঠিক কেমন হবে কালো, বাদামি, নীল, সবুজ না ধূসর, তা নির্ভর করে আলোর বিচ্ছুরণের উপর। যে মানুষের চোখের রং হালকা, তাঁদের মেলানিন কম। ফলে আলো কম শোষিত হয়, বিচ্ছুরণ বেশি হয়। কোন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর বিচ্ছুরণ হচ্ছে, তার উপর রং নির্ভর করে। নীল আলোর বিচ্ছুরণ বেশি হলে মণির রং নীল দেখাবে, সবুজ আলো হলে রং সবজেটে হবে। আর আলো যদি পুরোপুরি শোষিত হয়ে যায়, তা হলে রং কালো বা গাঢ় বাদামি হবে।মম

মণির রং-বৈচিত্র।

মণির রং-বৈচিত্র। ছবি: ফ্রিপিক।

মণির রং-বৈচিত্র

কালো বা গাঢ় বাদামি চোখ

কালো বা বাদামি চোখে মেলানিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। আইরিসের সামনের স্তরে প্রচুর পরিমাণে মেলানিন জমা হয়, যা প্রায় সব আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে নেয়। যেহেতু বেশির ভাগ আলো শোষিত হয়, তাই চোখের রং কালো বা গাঢ় বাদামি দেখায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষের চোখ বাদামি রঙের।

নীল চোখ

নীল চোখে মেলানিনের পরিমাণ খুব কম থাকে, প্রায় নেই বললেই চলে। আইরিসের মধ্যবর্তী স্ট্রোমা স্তরে মেলানিন না থাকায় সেটি স্বচ্ছ হয়। মেলানিন যেহেতু কম বা প্রায় থাকেই না, তাই আলোর শোষণ হয় না, খুব কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর বিচ্ছুরিত হয়। নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যেহেতু কম, তাই এই আলোই বেশি বিচ্ছুরিত হয় এবং সকলের চোখে প্রতিফলিত হয়ে নীল দেখায়। তাই নীল রঙের মণি মানে তাতে নীল রং থাকে না, বরং সবটাই আলোর প্রতিফলন ও বিচ্ছুরণের প্রভাব।

সবুজ চোখ

সবুজ চোখে মেলানিনের পরিমাণ নীল চোখের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকে, কিন্তু বাদামি চোখের চেয়ে কম। আইরিসের স্ট্রোমায় কম মেলানিন থাকে এবং হলদ-বাদামি রঙের কিছু রঞ্জক থাকে। এ ক্ষেত্রেও নীল আলোরই বিচ্ছুরণ হয় তবে তা ওই রঞ্জকগুলির সঙ্গে মিশে গিয়ে সবুজ দেখায়।

ধূসর চোখ

ধূসর চোখে মেলানিনের পরিমাণ নীল চোখের চেয়েও কম থাকে এবং স্ট্রোমাতে কোলাজেনের মতো প্রোটিনের ঘনত্ব বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রেও নীল আলোরই বিচ্ছুরণ হয়, কিন্তু কোলাজেনের ঘনত্বের কারণে এটি একটু ভিন্ন ভাবে প্রতিফলিত হয়, যার ফলে ধূসর আভা দেখা যায়।

হ্যাজ়েল চোখ

হ্যাজ়েল বা সবজেটে-বাদামি মণির ক্ষেত্রে মেলানিনের তারতম্য হয়। এই চোখের গঠন খুব জটিল। তাই আলোর শোষণ ও বিচ্ছুরণেরও হেরফের হয়। দুই রঙের মিশেল দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে জিনগত কারণও দায়ী। এমনও দেখা গিয়েছে, মা ও বাবা দু’জনের চোখ নীল, অথচ সন্তানের চোখ হয় ধূসর বা সবজেটে-বাদামি।

Eye Colour Genetics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy