সকালে চোখ খোলা থেকে রাতে চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত স্ক্রিনই সঙ্গী। তা সে মোবাইল হোক, ট্যাব হোক বা কম্পিউটার-ল্যাপটপ। কেউ কাজের সূত্রে, কেউ বা শখে ডিজিটাল দুনিয়ার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছেন। কেবল কর্মক্ষেত্রে নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও ভরসা এখন ডিজিটাল মাধ্যম। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কাজও এখন স্ক্রিনের সাহায্যে হয়। স্বভাবতই তার জন্য কাজের গতি বেড়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যে ও মনে নানাবিধ কুপ্রভাবও পড়ছে তা থেকে। এতে সবচেয়ে স্পষ্ট ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চোখ।
দিনের শেষে চোখে জ্বালা, শুষ্কভাব, ঝাপসা দেখা বা মাথাব্যথার মতো সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। যাঁদের আগে থেকেই চোখের রোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘ ক্ষণ তাকিয়ে থাকার কুপ্রভাবও অনেকখানি বেশি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় ‘ডিজিটাল আই স্ট্রেন’ বা ‘কম্পিউটার ভিসন সিনড্রোম’। প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় চোখের যত্ন নিতে হলে চশমা ভাল, না কি কনট্যাক্ট লেন্স?
চশমার সুবিধা
বিশেষ লেন্স: এখন এমন চশমা পাওয়া যায়, যা স্ক্রিন দেখার জন্য আলাদা ভাবে তৈরি। এ ধরনের লেন্স চোখের উপর চাপ কমায়। যদিও আদৌ তা চোখকে কতখানি রক্ষা করতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গবেষকেরা।
প্রতিরোধী আস্তরণ: চশমার উপর একটি আস্তরণ থাকে, যা ভেদ করে চোখে আলো কম প্রবেশ করে। ফলে ঝলক বা গ্লেয়ার চোখে ধাক্কা মারতে পারে না সে ভাবে।
ব্যবহার: চশমা পরে আরাম মেলে, যখন খুশি বা যেখানে খুশি চশমা খোলা যায়, আবার পরাও যায়। তা ছাড়া পরিষ্কার করাও সহজ।
চোখের যত্ন নিতে হলে চশমা ভাল, না কি কনট্যাক্ট লেন্স? ছবি: সংগৃহীত।
লেন্সের সুবিধা
ফ্রেমহীন: কনট্যাক্ট লেন্সে ফ্রেমের ঝামেলা নেই, তাই চোখের চারপাশ খোলা থাকে।
ব্যবহার: চশমার মতো একই রকম সহজ না-ও হতে পারে, কিন্তু বাইরে গেলে বা ভ্রমণের সময়ে চশমার ঝক্কি পোহাতে হয় না বলে অনেকেই এটি পছন্দ করেন। ঘোরাঘুরির সময় লেন্স অনেকেই আরামদায়ক মনে করেন।
লেন্স না কি চশমা, কোনটি বেছে নেবেন?
যদি দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকেন, তা হলে লেন্স শুকিয়ে গিয়ে চোখে অস্বস্তি বাড়তে পারে। চশমা বা লেন্স, যেটিই ব্যবহার করুন না কেন, কিছু অভ্যাস বদলাতেই হয়। তাই মাঝে মধ্যে চশমা ও লেন্স ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরা উচিত। অন্য দিকে, চশমা শুষ্ক ঘরের বাতাসের মতো পরিবেশগত কারণগুলির বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে। দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করার জন্য চশমা ব্যবহার করার পরামর্শই দেন চোখের চিকিৎসকেরা। এ কথা ঠিক যে, কৃত্রিম অশ্রু কন্ট্যাক্ট লেন্সের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, তবে হার্ভার্ড হেলথ বিশেষ ভাবে কম আর্দ্রতাযুক্ত জায়গায় কম্পিউটারের কাজের জন্য লেন্সের পরিবর্তে চশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। স্ক্রিন-নির্ভর কাজকর্মের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে থাকলে 'কর্নিয়াল অ্যাব্রেশন'-এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই রোগে কর্নিয়ায় আঁচড় পড়ে যায়।
দৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য চশমা এবং লেন্স দুই-ই ভাল, তবে স্ক্রিন-নির্ভর জীবনযাত্রার জন্য, চশমা সাধারণত বেশি নিরাপদ। চশমা চোখের শুষ্কতা হ্রাস করে, এর আস্তরণ চোখকে রক্ষা করে। দীর্ঘ ক্ষণ ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করতে হলে চশমাতেই ঝক্কি কম।
যাঁরা প্রতি দিন ৮-১০ ঘন্টা স্ক্রিনের সামনে থাকেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ—
· ২০-২০-২০ নিয়ম: প্রতি ২০ মিনিট স্ক্রিনে কাজের পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে তাকান।
· আর্দ্রতা বজায় রাখা: বেশি করে চোখের পলক ফেলুন, প্রয়োজনে টিয়ার আই ড্রপ ব্যবহার করুন।
· সঠিক আলো: অতিরিক্ত উজ্জ্বল বা অন্ধকারে স্ক্রিন দেখবেন না।
· স্ক্রিন সেটিং: লেখা একটু বড় করে নিন, ঘরের আলো অনুযায়ী কম–বেশি করুন।