জীবনে এগোতে হবে। আর সফল হতে গেলে পরিশ্রমের বিকল্প কিছুই হতে পারে না। কেরিয়ার, সাফল্য— এই সবের পিছনে ছুটছেন? ছুটতে ছুটতে ক্লান্তি এলেও, থামার সময় নেই। এগিয়ে যেতেই হবে।
বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনের এই দৌড়, অত্যধিক শ্রমে কি সত্যিই সাফল্য আসে? একসময় এমনই কর্মসংস্কৃতিতে বিশ্বাসী জাপানেই এ বার ভাবনায় বদল এসেছে। জাপান এখন বিশ্বাসী ‘মুরি শিনাই দে’-তে। অর্থহীন মনে হচ্ছে এই শব্দবন্ধ? তবে এর মধ্যেই লুকিয়ে জীবনবদলের চাবিকাঠি।
‘মুরি শিনাই দে’ বলে এমন এক কর্মসংস্কৃতির কথা, যেখানে শুধু কাজ নয়, গুরুত্ব পায় শরীর এবং মানসিক স্বাস্থ্যও। কাজ করতে গিয়ে জীবনের সমস্ত শক্তি নিঃশেষ করা নয় বরং এর অর্থ হল ‘সহজ ভাবে নাও’ বা ‘আর বেশি নয়’। সহজ ভাবে বলতে গেলে, যখন কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন, নিজের শরীরের দিকে নজর দিচ্ছেন না, তখন ‘মুরি শিনাই দে’ বললে বোঝায়, ‘অনেক হয়েছে, আর নয়’। ধরা যাক, কেউ টানা কাজ করে চলেছেন। ক্লান্ত, তবু থামছেন না। তখন তাকে বলা যেতে পারে, ‘মুরি শিনাই দে’। ‘মুরি’র অর্থ অতিরিক্ত, প্রচণ্ড।
কেন এ নিয়ে আলোচনা?
আরও পড়ুন:
জাপান একসময় কঠোর কর্মসংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ছিল। অতীতে সে দেশে অতিরিক্ত পরিশ্রম অসুস্থতার কারণও হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিচার করে ভাবনায় বদল এসেছে গত কয়েক বছরে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য মানসিক স্বাস্থ্য, শরীরের যত্ন নেওয়া কতটা জরুরি, সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। তা থেকেই ‘মুরি শিনাই দে’-র জনপ্রিয়তা। ভাল থাকতেই মানুষ এখন এই শব্দবন্ধে আস্থা রাখতে শুরু করেছেন।
‘মুরি শিনাই দে’ কী ভাবে আপনিও জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন?
বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজের চাপে হাঁসফাস করছেন অনেকেই। অফিসের ‘টার্গেট’, ‘ডে়ড লাইন’-এর গুঁতোয় বহু মানুষই বিনিদ্র রাত কাটান। ভয়াবহ এই চাপের প্রভাব পড়ছে শরীরেও। তা থেকেই মুক্তির জন্য ভাবনা এবং কর্মসংস্কৃতিতে বদল প্রয়োজন।
অতিরিক্ত কাজ নয়, স্বাস্থ্যও জরুরি: নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে লক্ষ্যপূরণের চাপ থেকে মুক্তির কথা বলছে ‘মুরি শিনাই দে’। এই শব্দবন্ধ বলে, শরীরের দিকে নজর দেওয়া দরকার। ক্লান্ত শরীর-মন যখন বিশ্রাম চাইছে, তখন তাকে সেটা দিতে হবে। স্বল্প সময়ে বাড়তি কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, সুস্থ শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে কাজের মান ধরে রাখা।
কাজে ভারসাম্য: ‘মুরি শিনাই দে’ অফুরান কাজ নয়, বরং বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে উৎসাহ দেয়। টানা কাজের বদলে মাঝেমধ্যে বিরতি, ব্যক্তিগত আনন্দ উপভোগের কথা বলে। কাজ জরুরি, তবে জীবন, সুখ বাদ দিয়ে নয়, সে কথাই বুঝিয়ে দেয় এই শব্দবন্ধ।
ব্যক্তিজীবন: ব্যক্তিগত শখ, আহ্লাদ বাদ দিয়ে কঠোর শ্রম, লক্ষ্যপূরণের মতো কর্মসংস্কৃতিকে উৎসাহ দেয় না ‘মুরি শিনাই দে’। বরং মনোবিদেরা বলেন, সব সময় পেশাগত জীবন এবং পারিবারিক জীবনের মধ্যে একটা বিভাজনরেখা থাকা দরকার। মানসিক স্বাস্থ্য, শরীর ভাল না থাকলে তার প্রভাব কাজে পড়তে বাধ্য।
ধীরে চলো: সাফল্যের ইঁদুরদৌড়ে অনেকেই এক নম্বর হতে চান। ক্রমাগত দৌড়োনো নয়, বরং সময় মতো থামায় এবং ধীরে চলার নীতিকে প্রশ্রয় দেয় ‘মুরি শিনাই দে’। মোদ্দা কথা, কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবন, দুই দিক উপভোগ করাকেই উৎসাহ দেয় জাপানের এই শব্দবন্ধ।