শিশুর ওজন বেশি হলে, কেউ বলেন ‘গোলগাল’। কেউ আবার বলেন, ‘স্বাস্থ্য একটু বেশি ভাল।’ আর এই সব শব্দের আড়ালেই অদেখা রয়ে যায় বিপদ। চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরা সতর্ক করছেন শিশুদের স্থূলত্ব সংক্রান্ত ওজন নিয়ে। বয়স অনুযায়ী বাড়তি ওজন যেমন বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের হাঁটাচলায় সমস্যা তৈরি করতে পারে, তেমনই ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশনের মতো অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের পরিসংখ্যানে ভারতে ৫ বছরের কম বয়সি সাড়ে তিন লক্ষ শিশু স্থূলত্বের শিকার।
চেন্নাইয়ের পুষ্টিবিদ মঞ্জুলা শ্রীধর জানাচ্ছেন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে জমলে, শিশুরা খেলাধুলো কম করলে এমন সমস্যা হয়। ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাদের শারীরিক কসরত বা খেলাধুলোতেও অনীহা তৈরি হয়। শরীরে চনমনে ভাব কমতে শুরু করে।
আরও পড়ুন:
ইউনিসেফের ২০২৫ সালের তথ্য নির্দেশ করছে, আগামী ৫ বছরে শিশুদের স্থূলত্বের পরিসংখ্যান আরও বাড়তে চলেছে। এই সমস্যার শিকার বিশ্বের একাধিক দেশই। ওজন বৃদ্ধির কারণ যে চিপস, মিষ্টি, অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত ফাস্ট ফুড, সে কথা সকলেই জানেন।
তবে পুষ্টিবিদ মঞ্জুলা জানাচ্ছেন, দৈনন্দিন কোন ধরনের খাবার শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তিনি বলছেন ডায়েটে প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবার যুক্ত করার কথা। যা মিলবে শাকসব্জি, চিয়াবীজের মতো উপাদান থেকে। ফাইবার, প্রোটিন এবং একই সঙ্গে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা পূরণে তিনি টাটকা মরসুমি শাকসব্জি খাওয়ানোর পাশাপাশি মাছ, ডিম খাওয়াতেও জোর দিচ্ছেন। সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছ স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল শুধু নয়, এতে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড মেলে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের জোগান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন রকম দানাশস্য, অ্যাভোকাডোর মত ফল রাখতে বলছেন তিনি।
ছোটদের শাকপাতা খাওয়ানো খুব জরুরি বলে মনে করেন মঞ্জুলা। পালং থেকে ব্রকোলি, ফুলকপি জাতীয় খাবারে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ মেলে। এগুলি পেট ভরাতেও সাহায্য করে। তাই দৈনন্দিন খাবারে টাটকা শাক এবং সব্জি অবশ্যই রাখতে বলেছেন তিনি।
মাংস পছন্দ করলে ফ্যাট ছাড়া মুরগির মাংস খাওয়াতে বলছেন তিনি। নিরামিষাশী হলে পনির, টোফু, বিনস, রাজমা জাতীয় খাবার থেকে শরীর প্রোটিন পেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো জরুরি হলেও, অনেক শিশুই তা খেতে চায় না। পুষ্টিবিদ থেকে মনোবিদের পরামর্শ, একই ধরনের খাবার রোজ না দিয়ে, শাকসবব্জি দিয়ে পুষ্টিগুণ বজায় রেখে যদি স্বাস্থ্যকর ভাবে অন্য রকম কিছু বানিয়ে দেওয়া যায়, শিশুরা তা খেয়ে নেবে। যেমন দুধ-কলা দিয়ে স্মুদি, পালংশাক দিয়ে সবুজ রুটি, বিট দিয়ে প্যানকেক, গাজর দিয়ে কেক— এ ভাবেও তাদের শাকসব্জি, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।