আমলকি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে আমলকির প্রভাব ক্ষতিকরও হতে পারে!
ভিটামিন সি-তে ভরপুর আমলকি। এই ফল শরীরকে রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করার পাশাপাশি, বিপাকের হার বৃদ্ধি করতে, রক্তে শর্করার মাত্রা কম রাখতে, ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে, চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও উপকারী। কিন্তু তার পাশাপাশি আমলকি খাওয়ার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ কয়েকটি পরিস্থিতিতে তা অসুস্থতার কারণও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন, তারকা পুষ্টিবিদ লিউক কুটিনহো। তিনি বলছেন, ‘‘আমলকি তাঁরাই খান, যাঁদের জন্য এই ফল স্যুটেবল অর্থাৎ উপযুক্ত। কারণ এমনও অনেকে আছেন, যাঁদের জন্য এই ফল ততটা উপকারী না-ও হতে পারে।’’
কারা আমলকি খাবেন না?
১। যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম
আমলকি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে— তার প্রমাণ মিলেছে গবেষণাতেও। তাই যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি তাদের জন্য এই ফল ভাল। কিন্তু যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম। অর্থাৎ যাঁরা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার রোগী তাঁদের জন্য এই ফল অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা আরও নামতে পারে, মাথা ঘোরা, ক্লান্তিবোধ, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
২। যাঁদের অল্পেই অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়
অনেকেরই সহজে অ্যাসিডিটি হওয়ার প্রবণতা থাকে। বিশেষ করে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সেনসিটিভিটি থাকলে এমন হওয়া স্বাভাবিক। আবার যদি আগে কারও আলসার হয়ে থাকে কিংবা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থেকে থাকে তবে তাঁরও এই সমস্যা হতে পারে। এঁদের ক্ষেত্রে আমলকি খেলেও অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়বে। বুকজ্বালা, পেটফাঁপা, পেটে ব্যথাও হতে পারে আমলকি খেলে। তাই এঁরাও আমলকি অল্প পরিমাণে খান এবং নিজেদের হজম ক্ষমতা বুঝে খান।
৩। যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান
ব্লাড থিনার বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান অনেকেই। বিশেষ করে যাঁদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে বা যাঁদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, হার্টে স্টেন্ট বসেছে, তাঁদের অনেককেই নিয়মিত ব্লাড থিনার খেতে হয়। পুষ্টিবিদ রুজুতা দ্বিবেকর বলছেন আমলকিতেও এমন উপাদান রয়েছে, যা রক্তকে আরও বেশি তরল করতে পারে। যা সাধারণ মানুষের হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কিন্তু যাঁরা ইতিমধ্যেই হার্টের সমস্যার জন্য অ্যাসপিরিন, ক্লপিড্রোগ্রেল, ওয়ারফারিন জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁরা রোজ একটা করে আমলকি খেলে রক্ত আরও তরল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। সে ক্ষেত্রে কেটে গেলে রক্ত বন্ধ হতে চাইবেনা সহজে। অনেকের নাক থেকে রক্তপাতও হতে পারে। তাই এই ধরনের রোগীরা আমলকি খেলেও খাবেন অল্প পরিমাণে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
৪। কিডনির রোগ থাকলে
আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা শরীরে গিয়ে অক্সালেটে পরিণত হয়। এই অক্সালেট আবার কিডনিতে স্টোন (ক্যালশিয়াম অক্সালেট স্টোন) তৈরি করতে পারে। তাই যাঁদের এক বার কিডনি স্টোন হয়েছে বা যাঁদের রেনাল ফাংশন ডিজ়অর্ডার রয়েছে, তাঁদের অসুখের ঝুঁকি বাড়তে পারে আমলকি খেলে।
৫। অন্তসত্ত্বা মহিলা এবং যে মা সন্তানকে স্তন্যপান করাচ্ছেন
আমলকি অন্তসত্ত্বা মহিলাদের জন্য ভাল বলেই মনে করেন অধিকাংশে। তবে এটি অল্প পরিমাণে খাওয়াই ভাল বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। কারণ অতিরিক্ত খেলে গ্যাসট্রিক এবং হজমের সমস্যা বাড়তে পারে। বাড়তে পারে ডায়েরিয়ার ঝুঁকিও। তবে এ ব্যাপারে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।