হৃদ্যন্ত্র তার নিজের মর্জিতে চলে। সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ, অফিসকাছারি সেরে সংসারের ভারী কাজ সামলানো—সবই ছন্দমাফিক করা যায় হার্ট সুস্থ ও চাঙ্গা থাকলে। কিন্তু এই ছন্দে যদি বদল আসে? গোলমাল বাঁধে তখনই। শরীরের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হার্টেরও বয়স বাড়ে। তার স্পন্দনে বদল আসে। শীতে এই বদল বেশি হয়। আচমকাই হৃৎস্পন্দের গতি অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। আর যাঁদের আগে থেকেই হার্টের রোগ রয়েছে, তাঁদের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষ করে দেখা যায়, বয়স্কদের এই সময়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটে। তাই একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হবে পরিবারের লোকজনকে।
শীতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে কেন?
হার্টের যে রোগই হোক না কেন, তা কিন্তু রাতারাতি বাসা বাঁধে না। হার্ট যে ছন্দ হারাচ্ছে, তার সঙ্কেত আগে থেকেই পাওয়া যায়। শীতের সময়ে রক্তনালির সঙ্কোচন দ্রুত ঘটে বলে, বিপদ আসে তাড়াতাড়ি। এমনটাই জানালেন হার্টের চিকিৎসক সুশান্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, সুস্থ মানুষের হৃদ্যন্ত্র এক মিনিটে ৬০-৮০ বার পাম্প করে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এই পাম্প করার ক্ষমতাকে চালনা করার জন্য হার্টের নিজস্ব পেসমেকার থাকে যাকে বলে সাইনাস নোড (এসএ নোড)। এই সাইনাস নোডের কাজ হল হার্টবিট বা হৃৎস্পন্দন তৈরি করা। ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছে হার্টের এই নিজস্ব পেসমেকার। বৈদ্যুতিক স্পন্দন তৈরি করছে, যে কারণে হৃৎস্পন্দন তৈরি হচ্ছে এবং হার্ট পাম্প করে বিশুদ্ধ রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যদি এই প্রক্রিয়াটিতে কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তখনই হৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যেতে থাকে। শীতে সময়ে রক্তনালির সঙ্কোচন বেশি হয়, তাই রক্তপ্রবাহে বাধা তৈরি হয়। এতে রক্তচাপ বাড়ে যে কারণে হৃৎস্পন্দনে বদল আসে। ফলে বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট, মাথাঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখার মতো উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। তাই এই সব লক্ষণ আগে থেকে দেখা দিলে সাবধান হতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের শীতের সময়ে অনেক বেশি সাবধানে থাকা জরুরি। কোনও রকম উদ্বেগ বা অত্যধিক কায়িক পরিশ্রম বিপজ্জনক হতে পারে।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে সাবধানে থাকবেন?
হার্টের স্বাভাবিক স্পন্দন হল মিনিটে ৬০-৮০ বার। কিন্তু যদি হঠাৎ করেই তা প্রতি মিনিটে ৫০ বা তার নীচে নেমে যায়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হার্টের ক্ষেত্রে প্রধান ছ’টি রিস্ক ফ্যাক্টর হল— স্থূলত্ব, ডায়াবিটিস, হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ধূমপানের অভ্যাস এবং হার্টের রোগের পারিবারিক ইতিহাস। এর কোনওটি থাকলে সাবধান হতে হবে। খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, বেশি রাত জাগা, অত্যধিক দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করতে হবে।
শীতে বয়স্করা হাঁটাহাঁটি করাও বন্ধ করে দেন। এতে আরও বেশি ক্ষতি। সকালে ও বিকেলে অন্তত ১৫ মিনিট করে হাঁটলেও হার্ট ভাল থাকবে। সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হবে।
মনের সঙ্গে হার্টের যোগ বেশ ঘনিষ্ঠ। মন যদি ভাল না থাকে, তার উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, হার্টও তখন ভাল থাকে না একেবারেই। মানসিক চাপ থেকে রক্তচাপও বাড়ে। কেউ কেউ মানসিক চাপ কাটাতে অতিরিক্ত ধূমপান করেন। শেষমেশ এই সব কিছুর ফল ভোগ করে হৃদ্যন্ত্রটি। তাই মন ভাল রাখতে নিয়মিত মেডিটেশন করলে সুফল পাবেন।
গ্যাস অম্বলের ব্যথার সঙ্গে হার্টের ব্যথার পার্থক্য করা খুব মুশকিল। তাই অনেকেই বুকে চাপ, ব্যথাকে অম্বলের ব্যথা ভেবে বাড়িতেই নিজের মতো চিকিৎসা শুরু করে দেন। নিজে থেকে অ্যান্টাসিড খেয়ে বিপদ আরও বাড়িয়ে তোলেন। তাই যদি দেখেন, ঘন ঘন অম্বল, বুক জ্বালা ও শ্বাসের সমস্যা হচ্ছে তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিপদ ঘটার আগেই কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রাখা ভাল। ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি বা ইপি স্টাডি এগুলি করিয়ে রাখলে নিরাপদ থাকবেন।