অজান্তেই শরীরে তৈরি হতে পারে রোগ সংক্রমণের অনুকূল অবস্থা। নিঃসাড়ে সেই পরিস্থিতি রোগকে ডেকে আনে। বোঝা যায় তখন, যখন রোগ শরীরে বাসা বেঁধে ফেলেছে। তখন ঘনিয়ে আসে বিপদ। কিন্তু এইখানে একটি আশার কথাও আছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, শরীরে রোগের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়া থেকে রোগ সংক্রমণ— পুরোটাই নিঃসাড়ে হয় তা নয়! শরীর ঠিকই জানান দেয়। শরীরে রোগের অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে কি না সেটি বোঝার জন্য অন্য কোথাও নয় নিজের পেটের আকৃতি বা সার্বিক শারীরিক আদলের দিকে নজর দিলেও হবে। চেহারায় কোথায় কী ভাবে মেদ জমছে তার থেকেই বিপদের আঁচ পাওয়া সম্ভব।
কী ভাবে বুঝবেন?
শরীরকে যদি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়— কাঁধ থেকে বুকের অংশ, কোমর আর পেট এবং নিতম্ব ও ঊরু, তবে কোন অংশে কতটা মেদ জমছে তার ভিত্তিতে শরীরকে কয়েকটি আকার দেওয়া যায়।

১। আপেলের মতো
এর অর্থ শরীরের মধ্যদেশে মেদ সঞ্চার। আপেলের আকৃতির সঙ্গে মনে মনে মেলালেই বিষয়টি বুঝবেন। এ ক্ষেত্রে কোমরের নীচে নিতম্ব অথবা ঊরুতে সেই তুলনায় মেদ জমে না। শরীরের মাঝের অংশে অতিরিক্ত মেদ জমলে বুঝতে হবে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। এর একটা অন্যতম কারণ হতে পারে মানসিক চাপ। কর্টিসলের মাত্রা বেশি হলে এমন সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম, বসে কাজ বা জীবনযাপনে শারীরিক সক্রিয়তার মাত্রা যদি কম থাকে তা হলেও হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব পড়তে পারে। এই ধরনের সমস্যা নানা রোগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে শরীরে।
২। ন্যাসপাতির মতো
এই ধরনের আকৃতির শরীরে কোমর থেকে নিতম্ব এবং ঊরুর অংশে মেদ জমে বেশি। তুলনায় পেটে বা শরীরের মাঝের অংশে এবং উপরের অংশে মেদ জমে কম। শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে এই ধরনের চেহারা হয়। শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে তা নানা রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, যার মধ্যে অন্যতম ক্যানসার, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি।
৩। বালুঘড়ির আদল
শরীরে মেদ জমে সামঞ্জস্য রেখে। এই ধরনের চেহারায় শরীরে মাঝের অংশটি সচরাচর আয়তনে বেশি বাড়ে না। কোমরের নীচের অংশ এবং হাত, কাঁধ ও বুকের অংশের ওজন বাড়ে সমতা রেখে। নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করলে এবং শরীরচর্চা করলে এই ধরনের চেহারা পাওয়া যায়।

৪। লম্বাটে আয়তাকার
আয়তাকার চেহারায় হয়তো বুক, কোমর বা নিতম্বের অংশে ঢালু গড়ন হয় না। তবে এই ধরনের চেহারায় পেশির গঠন হয় মজবুত। মেদ জমলে তা-ও শরীরে জমে সমান্তরাল ভাবে। কারণ এঁদের পেশির ঘনত্ব বাড়ে। এই ধরনের চেহারাকেও সামঞ্জস্যপূর্ণ চেহারা বলা চলে।
৫। জালার মতো পেট
গোলাকৃতি শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা ভুঁড়ি থাকলে বুঝতে হবে শরীরে জল জমার সমস্যা রয়েছে। অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে গেলে, হজমের সমস্যা থাকলে, এমনকি জিনগত কারণে বিপাকহারে সমস্যা হলেও এমনটা হতে পারে।
কোনটি সতর্ক হওয়ার মতো?
আপেলের মতো চেহারা হলে, যে ক্ষেত্রে শরীরের বুক পেট এবং তলপেটের অংশে মেদ জমে, সে ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি। এই ধরনের মেদ বৃদ্ধি অনেক ক্ষেত্রেই হার্টের সমস্যা, ডায়াবিটিস রোগের উপসর্গ। বিশেষ করে হার্টের রোগীদের এই ধরনের মেদ বৃদ্ধি হলে সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ যে কোনও সময়ে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। তবে সময় থাকতে সতর্ক হলে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ করলে ঝুঁকি এড়ানোও যেতে পারে।