Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
method tarpan mahalaya chittaranjan bhattacharya

আসছে মহালয়া, কী ভাবে একাই তর্পণ করবেন, জেনে নিন

মহালয়া আসছে। অথচ, আপনি কলকাতা থেকে অনেক দূরে অথবা বিদেশে। কিন্তু মন চাইছে এই মহালয়ার পুণ্যলগ্নে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করতে। জেনে নিন ওখানে বসেই কী ভাবে তর্পণ করবেন।

চিত্তরঞ্জন ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:৪৭
Share: Save:

মহালয়া আসছে। অথচ, আপনি কলকাতা থেকে অনেক দূরে অথবা বিদেশে। কিন্তু মন চাইছে এই মহালয়ার পুণ্যলগ্নে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করতে। জেনে নিন ওখানে বসেই কী ভাবে তর্পণ করবেন।

কী কী লাগবে: গঙ্গাজল না হলে পরিষ্কার জল, কালো তিল এবং কূশ। ‘প্রাদেশ’ মাপের ছ’টি কূশ প্রথমে জলে ভিজিয়ে রেখে সেটা নরম হলে একত্রে তিনটি কূশ নিয়ে অণামিকা আঙুলে আংটির মতো ধারণ করে তর্পণ করবেন। বাঁ আঙুলেও একই ভাবে কূশাঙ্গরীয় ধারণ করবেন। কূশ ও তিল যদি না পাওয়া যায় তবে শুধু জলেই তর্পণ করতে পারেন।

ভিজে কাপড়ে জলে দাঁড়িয়ে কিংবা শুকনো কাপড় পরেও এক পা জলে এক পা স্থলে রেখে পূর্ব দিকে মুখ করে তর্পণ করতে হয়। প্রথমে দু’বার আচমন করুন।

এর পরে বাঁ কাঁধে যজ্ঞপবীত (পৈতে) রেখে দেবতর্পণ করবেন। (অব্রাহ্মণগণ ওঁ-এর জায়গায় নমঃ বলবেন অবং ঋগ্বেদী ব্রাহ্মণগণ তৃপ্যতাম-এর জায়গায় তৃপ্যতু বলবেন।) জল নিয়ে বলবেন— ওঁ ব্রহ্ম তৃপ্যতাম্ ওঁ বিষ্ণু স্তৃপ্যতাম্ ওঁ রুদ্র স্তৃপ্যতাম্ ওঁ প্রজাপতি স্তৃপ্যতাম্। এর পরে হাতের আঙুলের অগ্রভাগে দু’হাতে এক এক অঞ্জলি জল দেবেন।

এর পরে বলবেন— ওঁ দেবা যক্ষাস্তুথা নাগা গন্ধর্ব্বাপ্ সরসোহসুরাঃ। ক্রূরাঃ সর্পাঃ সুপর্ণাশ্চ তরবো জিহ্মগাঃ খগাঃ। বিদ্যাধরা জলাধারা স্তথৈবাকাশগামিনঃ। নিরাহারশ্চ যে জীবাঃ পাপে ধর্ম্মে রতশ্চ যে। তেষামাপ্যায়নায়ৈতদ্ দীয়তে সলিলং ময়া। এই মন্ত্র আরও এক অঞ্জলি জল দেবেন।

(মনুষ্য তর্পণ)— এর পরে উত্তরমুখে গলার মালার মতো পৈতেটি রেখে দুই অঞ্জলি জল দিয়ে বলবেন। ওঁ সনকশ্চ সনন্দশ্চ তৃতীয়শ্চ সনাতনঃ। কপিলাশ্চসুরিশ্চৈব বোঢ়ূঃ পঞ্চশিখস্তুথা। সর্ব্বে তে তৃপ্তিমায়াস্তু মদ্দত্তেনাম্বুনা সদা।

(ঋষি তর্পণ)— পূবমুখে উপবীত হয়ে এক অঞ্জলি জল দিয়ে বলবেন, ওঁ মারীচি স্তৃপ্যতাম্ ওঁ অত্রি স্তৃপ্যতাম্ ওঁ অঙ্গিরা স্তৃপ্যতাম্ ওঁ পুলস্ত্যু স্তৃপ্যতাম্ ওঁ ক্রুতু স্তৃপ্যতাম্ ওঁ প্রচেতা স্তৃপ্যতাম্ ওঁ বশিষ্ঠ স্তৃপ্যতাম্ ওঁ ভৃগু স্তৃপ্যতাম্ ওঁ নারদ স্তৃপ্যতাম।

(দিব্যপিতৃ তর্পণ)— এর পরে দক্ষিণ মুখে ডান হাঁটু তুলে ডান কাঁধে পৈতে ও উত্তরীয় রেখে এক অঞ্জলি তিল জল দেবেন। — ওঁ অগ্নিষ্মাতাঃ পিতরস্পৃপ্যন্তা মেতৎ উদকং তেভ্যঃ স্বধা। ওঁ সৌম্যাঃ পিতরস্পৃত্যন্তামেতৎ সতিলোকং গঙ্গোদকং তেভ্যং স্বধা। ওঁ হবিষ্যন্তঃ পিতর স্পৃত্যন্তামেতৎ সতিলোকং গঙ্গোদকং তেভ্যং স্বধা। ওঁ উষ্মাপাঃ পিতরস্পৃত্যন্তামেতৎ সতিলোকং গঙ্গোদকং তেভ্যং স্বধা। ওঁ সুকালিনঃ পিতরস্পৃত্যন্তামেতৎ সতিলোকং গঙ্গোদকং তেভ্যং স্বধা। ও বহিষদঃ পিতরস্পৃত্যন্তামেতৎ সতিলোকং গঙ্গোদকং তেভ্যং স্বধা। ওঁ আজ্যপাঃ পিতরস্পৃত্যন্তামেতৎ সতিলোকং গঙ্গোদকং তেভ্যং স্বধা।

(যম তর্পণ)— দক্ষিণমুখ হয়ে বাঁ হাঁটু মাটিতে দক্ষিণে পেতে তিন অঞ্জলি জল দেবেন। ওঁ যমায় ধর্মরাজায় মৃত্যবে চান্তকায় চ। বৈবস্বতায় কালায় সর্ব্বভূতরক্ষায় চ। ঔড়ূম্বরায় দধ্নায় নীলায় পরমেষ্টিনে। বৃকোদরায় চিত্রায় চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ।

এর পরে পিতৃ আবাহন করবেন। (সামবেদীয় ব্রাহ্মণ ও শূদ্রগণ কতাঞ্জলি হয়ে বলবেন— ওঁ আগচ্ছন্তু মে পিতর ইমং গৃহ্নম্তুতপোহঞ্জলিম্।) ঋগ্বেদী ও যজুর্ব্বেদী ব্রাহ্মণরা বলবেন— উশন্তস্ত্বা নিধীমহ্যূশস্তু সমিধীময়ি উশন্নুশত আবন পিতৃন্ হবিষ্যে অত্তবে। ওঁ আয়ান্তু নঃ পিতরঃ সৌম্যাসো অগ্নিষ্মাতাঃ পথিভির্দেবযানৈঃ। অস্মিন যজ্ঞে স্বধয়া মদন্তোহ-ধিব্রুবস্তুতে অবস্তুমান্।

(পিতৃ তর্পণ)— (প্রত্যেকে নিজের বেদ অনুসারে তিন বার করে মন্ত্র পড়ে তিন বার করে জল দেবেন।)

যেমন সামবেদীয়রা বলবেন— পুরুষদের ক্ষেত্রে— বিষ্ণুরোম্ অমুক গোত্রঃ পিতঃ অমুক দেবশর্ম্মা) তৃপ্যতামেতৎ সতিল গঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা।

স্ত্রী লোকের ক্ষেত্রে— বিষ্ণুরোম্ অমুক গোত্রা মাতাঃ অমুকী দেবী তৃপ্যতামেতৎ সতিল গঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা।

এই ভাবেই পিতামহঃ, প্রপিতামহঃ, বৃদ্ধপ্রপিতামহঃ অতিবৃদ্ধপ্রপিতামহঃ, মাতা, মাতামহঃ, প্রমাতামহঃ, বৃদ্ধাপ্রমাতামহঃ, অতিবৃদ্ধাপ্রমাতামহঃ কে জল দেবেন।

যজুর্ব্বেদীয়রা বলবেন—পুরুষদের ক্ষেত্রে— বিষ্ণুরোম্ অমুক গোত্র পিতঃ অমুক দেবশর্ম্মন তৃপ্যস্বৈতত্তে সতিল গঙ্গোদকং স্বধা।

তেমনই স্ত্রী লোকের ক্ষেত্রে— বিষ্ণুরোম্ অমুক গোত্রে মাতঃ অমুকী দেবী তৃপ্যস্বৈতত্তে সতিল গঙ্গোদকং স্বধা।

ঋগ্বেদীয়রা বলবেন— পুরুষদের ক্ষেত্রে—বিষ্ণুরোম্ অমুক গোত্রং অমুক পিতরম্ দেবশর্ম্মাণম্ তর্পয়ামি এতৎ সতিল গঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

স্ত্রী লোকের ক্ষেত্রে— বিষ্ণুরোম্ অমুক গোত্রাং মাতরম্ অমুকী দেবীং তর্পয়ামি এতৎ সতিল গঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

শূদ্রতর্পণ— বিষ্ণুর্নমঃ অমুকগোত্র পিতঃ অমুক দাস তৃপ্যস্বৈতত্তে সতিল গঙ্গোদকং নমঃ। (অন্যন্য সব কিছুই যজুর্ব্বেদীয় তর্পণের মতো।)

ভীষ্ম তর্পণ— (ব্রাহ্মণগণ পিতৃতর্পণের পরে এবং শূদ্রগন পিতৃতর্পণের আগে ভীষ্ম তর্পণ করবেন। ) দক্ষিণমুখী হয়ে এক অঞ্জলি জল দেবেন। — ওঁ বৈযাঘ্রপদ্মপোত্রায়

সাংকৃতি- প্রবরায়চ। অপুত্রায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্মবর্ম্মণে। প্রণাম মন্ত্র— ওঁ ভীষ্মঃ শান্তনবো বীরঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ। আভিরদ্ভিরবাপ্নোতু পুত্র-পৌত্রো চিতাং ক্রিয়াম্।

রাম তর্পণ— আব্রহ্ম ভুবনাল্লোকা দেবর্ষি-পিতৃমানবাঃ। তৃপ্যন্তু পিতরঃ সর্ব্বে মাতৃমাতা মহাদয়ঃ। অতীতকুলকোটিনাং সপ্তদ্বীপ নিবাসিনাম্। ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ম। এই মন্ত্রে তিন বার জল দেবেন।

ওঁ যেহবান্ধবা বান্ধবা বা যেহন্য জন্মনিবান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিমখিলাং যাস্তু যে চাস্মত্তোয়কাঙ্খিণঃ। এই মন্ত্রে এক অঞ্জলি জল দিয়ে— ওঁ আব্রহ্মস্তন্তপর্য্যন্তং জগত্তৃপ্যতু। এই মন্ত্রে তিন বার জল দেবেন। এর পর — ওঁ অগ্নিদগ্ধাশ্চ যে জীবা যেহপ্যদগ্ধাঃ কুলে মম। ভূমৌ দত্তেন তৃপ্যন্তু তৃপ্তা যাস্তু পরাং গতিম। এই বলে ভূমিতে জল দেবেন। এর পরে বস্ত্র নিপীড়ন জল নিয়ে বলবেল, ওঁ যেচাস্মাকং কুলে জাতা অপুত্রা গোত্রিণো মৃতাঃ। তে তৃপ্যস্তু ময়া দত্তং বস্ত্রনিপীড়নোদকম্। এই জল মাটিতে ফেলে দেবেন।

এর পরে পিতৃ প্রণাম করবেন— ওঁ পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্ম্মঃ পিতা হি পরমন্তপঃ। পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়তে সর্ব্ব দেবতাঃ। এর পরে বলবেন ওঁ পিতৃন্নমস্যে দিবি যে চ মূর্ত্তাঃ স্বাধাভূজঃ কাম্যফলাভি সন্ধৌ। প্রদানশক্তাঃ সকলেপসিতানাং বিমুক্তিদাযেনভিসংহিতেষু।

এর পরে পূর্বদিকে আচমন করে সূর্যপ্রণাম করবেন।

(উচ্চারণের সুবিধার্থে কিছু কিছু সংস্কৃত যুক্তাক্ষর ভেঙে লেখা হল। )

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

method tarpan mahalaya chittaranjan bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE